সঙ্কট নেই তবুও চড়া নিত্যপণ্যের দাম
# বেড়েছে চাল, ডিম পেঁয়াজের দাম
# বিপাকে পড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষ
# বাজারে পণ্যের ঘাটতি নেই- বাণিজ্যমন্ত্রী
বাজারে চাল, ডাল, ডিম পেঁয়াজের কোনো সঙ্কট নেই। তারপরও বাড়ছে দাম। কারণ করোনাভাইরাস আতঙ্কে অনেকে নিত্যপণ্য কিনে মজুত করছেন। বাজারে নিত্যপণ্যের চাহিদা বেশি হওয়ায় এ সুযোগে দাম বাড়িয়েছে একদল অসাধু ব্যবসায়ী। এতে বিপাকে পড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। তাই আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনের অধিক পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এই মন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে চালের দাম বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা। পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে সাত টাকা। আর প্রতি ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এছাড়া ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। অন্যান্য পণ্যের দামও উর্ধ্বমুখী। করোনা আতঙ্কে মানুষ বেশি কেনাকাটা করে মজুদ করছে। তাই চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েছে। তবে বাজারে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত ও সরবারহ রয়েছে। চাহিদা একটু কমলেই দাম কমে যাবে বলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
মুগদার মুদি ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় দুই-তিন গুণ বেশি কিনছে। চাহিদা বেশি থাকায় দাম বাড়ছে। পাইকারি বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় চাল কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেশি দরে কিনতে হয়েছে। পেঁয়াজের দাম গত তিনদিন ধরে চড়া। গত সপ্তাহে ৪০ টাকা পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। আর আজকে আড়ত থেকে কিনতে হয়েছে ৪২ টাকা, এরপর লেবার ও পরিবহণ খরচ তো রয়েছেই।
এছাড়া গত সপ্তাহে প্রতি হালি ফার্মের মুরগির লাল ডিম ৯০ টাকা ডজন বিক্রি হয়েছে। গত তিনদিন ধরে দাম বেড়ে বৃহস্পতিবার দাঁড়িয়েছে ১০৫ টাকায়।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মেসার্স আলী ট্রেডার্সের পরিচালক মো. সামসুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, গত দুই-তিন দিন পেঁয়াজের বাজার চড়া। চাহিদা বেশি তাই দাম বাড়ছে। তবে সঙ্কট নেই। এবার পেঁয়াজের যে উৎপাদন হয়েছে তাতে সঙ্কট হয়তো হবেও না।
তিনি বলেন, আজকে দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৭ থেকে ৩৯ টাকা। যেটা ১০ দিন আগে ২৮ থেকে ৩২ টাকা ছিল। তিনি জানান, চাহিদা বাড়ায় আড়ৎগুলোতে দাম বেড়েছে। আগে প্রতিমণ পেঁয়াজ ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও ওই পেঁয়াজ আজ ১৮০০ টাকায় উঠেছে। করোনাভাইসাসের আতঙ্কে মানুষ বেশি কিনছে তাই চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে। মানুষ একটু কম কিনলেই দাম পড়ে যাবে। তখন পণ্য বেচার লোক পাব না বলে জানান তিনি।
এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোতে গত এক সপ্তাহে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। আজকে খুচরা বাজারে মিনিকেট চাউল বিক্রি হচ্ছে মান বেধে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর নাজিরস চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৬ টাকা। মাঝারি মানের বিআর-২৮ জাতের চাল ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা, স্বর্ণা ৩৬ থেকে ৪০ টাকা, পাইজম বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫৬ টাকা।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ন্যাশনাল রাইচ মিলের মালিক মোহাম্মদ হোসেন রাজু জাগো নিউজকে জানান, এখন বাজারে যে চাল আছে এটার মৌসুম প্রায় শেষ। এসময় চাহিদা বেশি থাকায় চিকন চালের দাম একটু বেড়েছে। সামনে নতুন চাল উঠলে দাম কমে যাবে।
এদিকে দাম চাল, ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে সীমিত আয়ের মানুষ। রাজধানীর মতিঝিলের এক অফিসের সিকিউরিটি গার্ড জানান, গত সপ্তাহে চাল কিনেছি ৪২ টাকা কেজি। আর গতকাল কিনলাম ৪৫ টাকা। ৪৫ টাকার পেঁয়াজ কিনেছি ৫০ টাকা দিয়ে। এভাবে সব জিনিসপত্রের দামই বেড়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে অনেকে বেশি বেশি কিনে রাখছে। যাদের কাছে টাকা আছে তারা বেশি কিনছে। কিন্তু আমরা কি করব? আমাদের আয় তো সীমিত। মাস শেষ না হলে বেতন পাই না। ধনীরা বেশি কিনে মজুদ করায় দাম বাড়ছে। এর মাশুল গুনতে হচ্ছে আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষের।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার জনসমাগম এড়িয়ে চলার কথা বলছে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশের সবস্থানে চলমান ও অনুষ্ঠেয় বাণিজ্য মেলা বন্ধ ঘোষণা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের অফিসে না এসে ঘরে বসেই কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শপিং মল কিংবা দোকানপাট বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য বেশি পরিমাণে কিনে মজুত করতে শুরু করেছে জনগণ। এতে করে রাজধানীর কাাঁচাবাজারসহ সুপার শপগুলোতে কেনাকাটার হিড়িক পড়েছে।
এমন পরিস্থিতি দেখে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রয়োজনের বেশি পণ্য না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন। ভোক্তাদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ রয়েছে। মূল্যও স্বাভাবিক রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করার প্রয়োজন নেই।
এদিকে চাল, ডাল, আটা, ময়দা ভোজ্যতেল, চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক ও ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে রাজধনীর বাজারে অভিযান চালাচ্ছে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। দাম বেশি নেয়ায় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে রাজধানীর বাজারগুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষ যেন করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত না হয় এবং অতিরিক্ত পণ্যসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিরত থাকতে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি না করা এবং অযৌক্তিকভাবে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে না দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হচ্ছে। এসব কাজে যারাই জড়িত থাকবে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে বলে হুশিয়ারি দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এ কর্মকর্তা।
এসআই/এমএফ/জেআইএম