কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি স্বাস্থ্য প্রশাসন

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:০৫ পিএম, ১৯ মার্চ ২০২০

‘বাবা, লকডাউন কী? আমাদেরকেও কি লকডাউন করা হবে?’ এ প্রশ্ন রাজধানীর একটি স্কুলের প্রথম শ্রেণিপড়ুয়া এক ছাত্রের। বৃহস্পতিবার বিকেলে টেলিভিশনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের মুখে ‘প্রয়োজনে যেকোনো এলাকা লকডাউন করা হবে’- এমন বক্তব্য শুনে সে তার বাবাকে এ প্রশ্ন করে।

রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী আমিরুল হাসান বিকেলে অফিস থেকে বাসায় ফিরলে ছেলে তার দিকে এ প্রশ্ন ছুড়ে বসে।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ছোট্ট ছেলেটি না বুঝেই এ প্রশ্ন করেছে। কিন্তু সত্যিই কি করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে? সত্যিই কি ঢাকাসহ সারা দেশ লকডাউন করা হবে?

শুধু আমিরুল হাসানের নয়, এমন প্রশ্ন এখন দেশের অসংখ্য মানুষের। সরকারের প্রশাসনে অনেক মন্ত্রণালয় থাকলেও সবাই এ প্রশ্নের জবাব চায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ নিয়ে প্রতিনিয়ত কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে স্বাস্থ্য প্রশাসনকে। ভয়াবহ ছোঁয়াচে এ রোগটি যেন ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে দিনরাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৭০ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধ মারা গেছেন। আইসোলেশনে রয়েছেন ১৯ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ৪৩ জন। সুস্থ হয়েছেন তিনজন। নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরও উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য প্রশাসন। এতো উদ্যোগের পরেও কি শেষ রক্ষা হবে? নাকি চীন ও ইতালির মতো বাংলাদেশেও ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়বে এবং ব্যাপক প্রাণহানি ঘটবে?

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক নয়, সচেতন হতে হবে। আগে থেকে নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে রোগটি এখনও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। করোনাভাইরাস যেন ব্যাপক হারে সংক্রমিত হতে না পারে সেজন্য সন্দেহভাজন বিদেশফেরত ও তার সহচার্যে আসা ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। সারা দেশে বিদেশফেরত ৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশিকে হোম কোয়োরেন্টাইনে (১৪ দিন) রাখা হয়েছে। কিছু কিছু সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্তকে আইসোলেশনে এবং কিছুসংখ্যক রোগীকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন ভবনে সমন্বিত করোনা ইউনিট সেল খোলা হয়েছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে কোনো দুযোর্গে এত বড় সেল খোলা হয়নি। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িতদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সংগ্রহ ও সরবরাহ করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় কমিটিসহ একাধিক কমিটি পরিস্থিতি পর্য়বেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এত কিছুর পরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা কাটছে না। করোনা আক্রান্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাধ্যমেই তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

চীনের হুবেই প্রদেশে নতুন ধরনের এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে অর্থাৎ গত দুই মাস আগ থেকে রোগটির সংক্রমণ ঠেকাতে নানা সতকর্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করে বাংলাদেশ। গত ২১ জানুয়ারি থেকে দেশের তিনটি আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে (শাহজালাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট) থার্মাল স্ক্যানার ও হ্যান্ড ইনফ্রারেড থার্মোমিটারে জ্বর মাপাসহ স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়।

পরবর্তীতে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সব স্থল, সমুদ্র ও রেলস্টেশন দিয়ে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়। বুধবার (১৮ মার্চ) পর্যন্ত সাড়ে ৬ লাখেরও বেশি প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে তিন লাখের বেশি দেশের তিনটি আন্তজার্তিক বিমানবন্দর দিয়ে ফিরেছে। তারা বিমাবন্দরে ফেরার পথে হেলথ ডিক্লারেশন ফরম জমা প্রদান ও জ্বর মেপে এসেছেন বটে, কিন্তু করোনাভাইরাসটি সংক্রমণের পর এর লক্ষণ ও উপসর্গ প্রকাশ পেতে ১৪দিন লেগে যায়।

বিদেশফেরত সবাইকে ১৪ দিন নিজ বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট কক্ষে বার বার অবস্থান করতে অনুরোধ জানানো হলেও তারা থাকেননি। তারা নিজদের সুস্থ মনে করে দিব্যি আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়েছেন ও মেলামেশা করেছেন। এদের কারণেই বিপাকে রয়েছে গোটা স্বাস্থ্য প্রশাসন। আজ প্রথম মাদারীপুরের শিবচরে লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এ এলাকাতে করোনাভাইরাসটি বেশি সংখ্যায় ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন রোগতত্ত্ববিদরা।

এমইউ/এমএসএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।