রাস্তায় রিকশা নিয়ে নামলে পুলিশ পেটায়, বাসায় গেলে মালিক ভাড়া চায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:২৫ এএম, ০১ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে লকডাউনে (অবরুদ্ধ) আছে বিশ্বের অনেক দেশ। বাংলাদেশেও গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এ ছুটি এখন ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ছে। এ সময়ে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে বিরাজ করছে এক রকম লকডাউন অবস্থা।

এতে করে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন শহর এলাকায় বসবাসরত খেটে খাওয়া জনগোষ্ঠী। কাজ না পেয়ে দু-তিন দিন অনাহারে থাকার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

বুধবার খিলগাঁও রেলওয়ে এলাকার পুলিশ ফাঁড়ি বউবাজার বস্তিতে থাকা রিকশাচালক ও বাসাবাড়িতে কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা সবাই বলেন, ‘রাস্তায় রিকশা নিয়ে নামলে পুলিশ পেটায়, আর বাসায় গেলে বাড়ির মালিক ভাড়া চায়। এ অবস্থায় আমরা কী করব?’

এমন এক রিকশাচালকের নাম তার মো. হেলু। তিনি বলেন, ‘আমরা রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামলে পুলিশে মারে, বাড়িতে গেলে বাড়ির মালিক বাড়িভাড়া চায়। আমরা এখন কোন দিকে যাব? সরকার কি আমাদের জন্য কিছু করতে পারে না? আমরা এখন কী করে খাব?’ এ সময় তার পাশে অন্যরা বলে ওঠে, তা নাহলে সরকার আমাদের মেরে ফেলুক।

এ রিকশাচালক আরও বললেন, ‘ভাড়া না দিতে পারলে বাড়ির মালিক ঘর থেকে মালামাল বের করে দেয়। সরকার তো আমাদের বাড়িভাড়ার জন্য কিছু একটা করতে পারে।’ তখন অন্যরা একসঙ্গে বলে ওঠে, ‘আমরা কাজ করতে না পারলে ভাড়া কীভাবে দেব? বাড়ির মালিক গতকালকে বলেছেন, ভাড়া দিতে না পারলে ঘর ছাড়েন। এ সময় আমরা ভাড়া কই পামু।’

হেলু আরও বলেন, ‘আমরা দিনে এনে দিনে খাই। একদিন কাজ করতে না পারলেই খাওয়া বন্ধ। এ পর্যন্ত কোনো সাহায্য আমরা পাইনি।’

ricksha

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আনুমানিক ৬০ বছর বয়সী আমেনা নামের এক নারী বলে ওঠেন, ‘২০ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছে। তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করে জীবিকা চালাতেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৫ মার্চ তাদের ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন কাজ নেই, খাওয়াও নেই। একবেলা কোনো রকম খাওয়া পেলেও আরেক বেলা উপোস থাকতে হয়।’

গতকাল সারাদিনে একটা বিস্কুট ও পানি খেয়ে থেকেছেন এই বৃদ্ধা। বয়স্ক মানুষ হওয়ায় না খেয়ে থাকতে খুব কষ্ট বলেও জানান তিনি।

সাহায্য পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আমেনা বলেন, ‘অনেক সময় সাহায্য দিতে আসে কিন্তু লাইন ধরেও সাহায্য পাই না। গতকাল লাইনে দাঁড়িয়ে পাড়াপাড়ি করতে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়েছি কিন্তু চাল পাইনি।’

সাহায্য দেয়ার অব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাহায্য নিতে গেলে সেখানে মারামারি লেগে যায়। কেউ পাঁচটা কেউ একটাও পায় না।’ সবায় মিলে বলে ওঠেন, সরকার যদি আমাদের বাসায় গিয়ে দিত তাহলে আমরা পেতাম।

এমইউএইচ/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।