পাড়ায় পাড়ায় যাচ্ছে ভ্যান, বিনা পয়সা দিচ্ছে সবজি
করোনাভাইরাসের তীব্রতায় গোটা বিশ্বে চলছে ভয়ানক দুঃসময়। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট দুঃসময়ে কতভাবেই না মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। রোববার (৫ এপ্রিল) চট্টগ্রাম নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর এলাকায় দেখা গেল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নতুন এক দৃষ্টান্ত।
সাধারণ ছুটির আদলে গোটা দেশই ‘লকডাউন’। এ সময়ে নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর এলাকায় দেখা গেল, একটি ভ্যানগাড়িতে ভর্তি নানা জাতের সবজি। ভ্যানের সামনে পেছনে লেখা ‘ফ্রি’।
ভ্যানগাড়ির চালককে জিজ্ঞেস করতেই জানালো, এ সব সবজি বিনামূল্যেই মানুষের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। কারও প্রয়োজন হলেই যে কোনো দুই পদের সবজি এক কেজি করে নিয়ে যেতে পারবেন। এক যুবক হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়েই বিনামূল্যে সবজি নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
সেই মাইকিং শুনে ঘরবন্দি মানুষরা একে একে এসে নিয়ম মেনেই সেই সবজি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য তাদের কারও টাকা দিতে হচ্ছে না। আর এতেই টানা দুই সপ্তাহ ধরে ঘরে থাকা মানুষগুলোর মুখে তখন হাসির ঝিলিক।
শুধু মোহাম্মদপুর নয় জানা গেছে, ওই ওয়ার্ডের রাজধানী গলি, ইব্রাহীম কলোনি, দিপুর গ্যারেজ, আব্দুল্লাহ শাহর মাজার এলাকায় এভাবেই সবজি বিতরণ করা হয়েছে।
এ সময় কথা হয় এই আয়োজনের সঙ্গে থাকা তোসাদ্দেক নূর চৌধুরী তপু’র সঙ্গে। তিনি জানান, মূলত আরশাদুল আলম বাচ্চু এই মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন। পুরো শহরে প্রতিদিন ৫০০ কেজি নানান জাতের সবজি ঘরবন্দি মানুষের কাছে বিনামূল্যে পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একজন বা একটি পরিবার তার প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো দুই ধরনের এক কেজি সবজি নিতে পারবেন। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকায় যাবে এ ভ্যান। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এ বিষয়টি দেখাশোনা করবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ছাত্রনেতা আরশাদুল আলম বাচ্চু জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। এর আগে চাল-ডাল-তেল দিয়ে দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। গতকাল ভাবলাম, আমরা তো চাল-ডাল-তেল দিয়েই যাচ্ছি। কিন্তু এই মানুষগুলো সেগুলো কী দিয়ে খাবেন? তাই এই ‘ফ্রি সবজি বাজার’ আইডিয়া। এতে অন্তত একটি পরিবার প্রতিদিন কিছু না কিছু খেয়ে বেঁচে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আজ নগরের বিভিন্ন এলাকায় ৪টি গাড়ি সবজি বিতরণ করেছে। আগামীকাল ৫টি গাড়ি পাড়ায়-মহল্লায় যাবে। যেকোনো পরিবার চাইলেই দুই পদের সবজি এক কেজি করে নিতে পারবেন। এ জন্য তাদের কোনো টাকা দেয়া লাগবে না। আর এক কেজির বিষয়টা করেছি, কিন্তু কারও পরিবার যদি বড় হয়, তিনি চাইলেই বেশি দেয়া হবে। এছাড়া যারা সামাজিক কারণে খুঁজতে পারছেন না, তারা আমাকে ফোন করলেই বাড়ির দরজায় প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠিয়ে দেয়া হবে। গ্রহীতার পরিচয় গোপন থাকবে।’
আবু আজাদ/এফআর/এমএস