কাঁচাবাজারে একজনের ঘাড়ের ওপর আরেকজন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৩৩ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০২০

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। নাগরিকদের ঘরে থাকতে আহ্বান করা হচ্ছে। তারপরও রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার প্রতিদিন লোকে লোকারণ্য থাকছে।

এসব বাজারে কেউ বাজার করতে, আবার কেউ কেউ অকারণেই এসে ভিড় করছেন। একসঙ্গে জড়ো হয়ে কেউ কেউ খোশগল্পও করছেন। আর যারা বাজার করছেন তাদেরও মধ্যেও কোনো ধরনের সচেতনতা নেই।

একসঙ্গে একাধিক ক্রেতা ঘিরে ধরে রাখছেন বিক্রেতাকে। এমনকি একজনের ঘাড়ের ওপর দিয়ে আরেকজন বিক্রিতার সঙ্গে কথাও বলছেন। প্রায় একজন ক্রেতার সঙ্গে আরেকজন ক্রেতার শরীরে স্পর্শ হচ্ছে।

অথচ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাকে। অর্থাৎ একজন অন্যজনকে স্পর্শ না করা। কিন্তু বিভিন্ন কাঁচাবাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ধার ধারছে না কেউ।

শনিবার সকালে রামপুরার মোল্লাবাড়ি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দলে দলে মানুষ। বাজারটিতে মানুষের ভিড় এতটাই দেখা যায় যে, চলাচলের জন্য একজনকে অন্যজনের প্রায় শরীর ঘেঁসে চলতে হচ্ছে। যারা বাজার করছেন তারাও দোকানের সামনে গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকছেন। যেন করোনাভাইরাস নিয়ে কারও মধ্যে কোনো দুশ্চিন্তা নেই।

বাজারটি থেকে সবজি কেনা মধ্যবয়সী এক নারীকে দেখা যায়, একজন ক্রেতার পেছন দিক থেকে গিয়ে তার গাঁ ঘেঁষে বিক্রেতার কাছে সবজির দাম জানতে চাচ্ছেন।

Bazar-(4)

এরপর ওই নারীর সঙ্গে এ প্রতিবেদক কথা বললে নিজেকে ফাতেমা বলে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, ‘বাজারে এভাবে না দাঁড়িয়ে উপায় কী? বিক্রেতার কাছে না যাওয়া পর্যন্ত তো কেউ দাম বলবে না, কোনো কিছু কেনাও যাবে না।’

এভাবে ভিড় করলে করোনা হওয়ার ঝুঁকি আছে। এ কথা বলতেই তিনি বলেন, ‘যার করোনা হবে তার ঘরের ভেতরে থাকলেও হবে। করোনার ভয়ে তো আর না খেয়ে থাকতে পারি না।’

বাজারটির সবজি বিক্রেতা মশিউর বলেন, ‘আমাদের কিছু করার নেই। যতই বলি কেউ কথা শোনে না। সবাই একসঙ্গে এসে দোকানে ভিড় করে। এক সপ্তাহ ধরে বাজারে মানুষের ভিড় যেন আরও বেড়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আগে বাজারের কোনো সময়সীমা ছিল না। কিন্তু এখন দুপুর ২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। ২টার পর দোকান খোলা রাখা যাবে না। এ কারণেই হয়তো ক্রেতাদের ভিড় বেশি হচ্ছে। সবাই ২টার আগে বাজার করার জন্য ছুটে আসছে।’

রামপুরা থেকে মালিবাগ হাজীপাড়া বৌ-বাজারে গিয়েও ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। এ বাজারটিতে প্রতিদিন শতশত মানুষ একসঙ্গে জড়ো হচ্ছেন। সামাজিক দূরুত্ব বাজার রাখার ক্ষেত্রে সেখানো কারও কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি যারা জড়ো হচ্ছেন তাদের মধ্যেও কোনো সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়নি।

Bazar-(4)

বাজারটির এক ব্যবসায়ী মিলন। তিনি বললেন, ‘এখানে মানুষের মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই। কয়দিন আগেও পুলিশ এসে লাঠি দিয়ে সবাইকে দাবড় দিয়ে গেছে। কিন্তু এখন আবার আগের অবস্থা। সবাই একসঙ্গে বাজারে এসে ভিড় করছে। এতে আমাদেরও ঝুঁকি বাড়ছে। কিন্তু কিছু করার নেই।’

তিনি বলেন, ‘পরিবারের খরচ চালাতে গেলে দোকান খুলতেই হবে। এই দোকানের ওপরই আমার চার সদস্যের পরিবার চলে। দোকান বন্ধ রাখলে না খেয়ে থাকতে হবে।’

বাজারটি থেকে সবজি কিনতে আসা আয়নাল নামের একজন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভয়ে বাসা থেকে খুব একটা বের হই না। বাসায় বাজার না থাকায় বাজার করতে এসেছি। বাজারে এসে দেখি মানুষের অনেক ভিড়। নিজে সেভে চলার চেষ্টা করলে অন্য কেউ এসে ঘাড়ের ওপর পড়ছে। এটা খুব বিরক্তিকর।‘

তিনি বলেন, ‘সরকার মানুষকে সচেতন করার সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। মানুষ যাতে ঘরে থাকে এজন্য সাধারণ ছুটির সময় একের পর এক বাড়ানো হচ্ছে। এখন সন্ধ্যার পর বাইরে বের হওয়া বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসছে না। নিজেরা সচেতন না হলে লাভ হবে না।’

এমএএস/এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।