কৃষি উৎপাদন বাড়াতে নানা উদ্যোগের কথা জানালেন কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:২৪ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০২০

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে নানা উদ্যোগের কথা জানালেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। কৃষকদের প্রণোদনা, স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, কৃষি উপকরণ সরবরাহ, সেচের চার্জ কমানোসহ নানা উদ্যোগের কথা জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে সভা শেষে কৃষিমন্ত্রী ভিডিও ব্রিফিংয়ে এসব উদ্যোগের কথা জানান।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদের স্বার্থে সার, সেচ, ইক্ষুচাষসহ কৃষিখাতে ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ প্রদান করেছে। ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসের কারণে বোরো ধান কাটার শ্রমিকের সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হাওর অঞ্চলের ধান কাটার জন্য জরুরি ভিত্তিতে নতুন ১৮০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ১৩৭টি রিপার সরবরাহের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

হাওরে ধান কাটায় কোনো সমস্যা হবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘হাওরে গমনেচ্ছুক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সাবান, স্যানিটাইজার, মাস্ক প্রভৃতি উপকরণ প্রদান, নিরাপদ যাতায়াতের জন্য আলাদা গাড়ি, নির্বিঘ্ন গমনাগমন, ধান কাটা স্থলে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে রাখার ব্যবস্থা ইত্যাদি কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষি শ্রমিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাওরে যাওয়া শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কৃষিখাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্রদান করেছেন। এর সুদ ৪ শতাংশ হলেও কৃষিখাতে ৯ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকিসহ অন্যান্য প্রণোদনা বিবেচনায় নিলে এটি অত্যন্ত ভালো। এ প্রণোদনার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে কৃষির সব সেক্টরে (মৎস্য ও প্রাণি খাতসহ) সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হবে।’

কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ‘এসব প্রণোদনার বাইরেও কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি পুনর্বাসনে ১২০ কোটি টাকা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষতিপূরণ ও সমবায়ভিত্তিক চাষাবাদের জন্য ৫০ কোটি টাকা এবং ফসলে নতুন জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য প্রদর্শনী স্থাপন ও গ্রহণকরণ বাবদ ৭৫ কোটি টাকা ইতিমধ্যে বরাদ্দ দিয়েছে। অতিসম্প্রতি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও বীজ, সেচ ইত্যাদিসহ কৃষিখাতে সহায়তা বাবদ ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

চলতি মৌসুমে আউশ উৎপাদনের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সাধারণত প্রতিবছর ৩০ লাখ টন আউশ ধান উৎপাদিত হয়। আসন্ন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা হলো ৩৫ লাখ টন। সেজন্য আসন্ন আউশ মৌসুমে বিএডিসির সেচের রেট ৫০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাড়ে ছয় হাজার টন হাইব্রিড ও উফশি জাতের বীজ ইতিমধ্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৩ লাখ ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সঠিক সময়ে বীজতলা তৈরি, রোপণ, সেচসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রণোদনা হিসেবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে সার, বীজ প্রভৃতি বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, বসতবাড়ির আঙিনাসহ সব পতিত জমিতে শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য ফসলের চাষের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

এছাড়া, কৃষিযান্ত্রিকীকরণে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০০ কোটি টাকার মাধ্যমে প্রায় ৮০০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪০০টি রিপারসহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১০০ কোটি টাকা দিয়ে সমপরিমাণ কৃষি যন্ত্রপাতি অচিরেই কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন সাধারণ ছুটির সময় কৃষি কার্যক্রম সক্রিয় রাখতে কৃষি মন্ত্রণালয়াধীন সব কর্মকর্তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে নিয়মিতভাবে মাঠে গিয়ে এই দুর্যোগময় অবস্থায় কৃষকের সঙ্গে, কৃষকের পাশে থাকতে বলা হয়েছে। যারা কর্মস্থলে থাকবেন না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল এবং বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

আরএমএম/এএইচ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।