করোনার মাঝেই ৩৪ নার্স-আয়া চাকরিচ্যুত
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের হাসপাতালগুলো যখন স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুরক্ষা এবং তাদের আর্থিক বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, ঠিক তখনই ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র (ইউএসটিসি) অধীনে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের ১৯ নার্সসহ ৩৪ জনকে বিনা কারণে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
রোববার (২৬ এপ্রিল) সকাল থেকে চাকরিচ্যুতরা আন্দোলনে নেমেছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ নিয়ে কর্মরতদের সঙ্গে চাকরিচ্যুতদের সংঘর্ষের খবরও পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ৮ এপ্রিল ১৯ জন নার্স এবং ১৫ জন আয়া ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে নোটিশ বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি মার্চ মাস শেষ হলেও তাদের বেতন আটকে দেয় কর্তৃপক্ষ।
চাকরিচ্যুতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকেই ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে হাসপাতালটিতে চাকরি করে আসছিলেন। কিন্তু এখন বিভিন্ন অজুহাতে তাদের চাকরিচ্যুতি করা হচ্ছে। তাদের এমন একটা সময় চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে যখন দেশে ক্রান্তিকাল চলছে। মূলত হাসপাতালের নার্সিং সুপারিনটেন্ডেন্ট মিনুয়ারা খানমসহ বেশ কয়েকজনের প্ররোচনায় তাদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (ইউএসটিসি) কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. মানিক মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাসপাতালের ১৯ নার্সসহ মোট ৩৪ জনকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন কর্মচারীরা। আজ সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছু এক নার্স জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রশাসন সমর্থিত একটি গোষ্ঠী আন্দোলনরতদের ওপর হামলা চালিয়ে অন্তত পাঁচজনকে আহত করেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, নার্সরা মাধ্যমিক পাস নয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনায় নার্সদের ডিগ্রি না থাকায় তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. কামরুল হাসান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা রয়েছে চিকিৎসাসেবায় এইড নার্স রাখা যাবে না। ডিপ্লোমাধারী নার্স দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাতে হবে। এমনকি প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন পুনঃনবায়ন করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাই প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী নার্স নিয়োগ দেবে। এরই মধ্যে ২২ জন নতুন নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে যাদের একটু বয়স বেশি এবং দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. মানিক মিয়া বলেন, প্রতিষ্ঠান যে কারণ দেখাচ্ছে সেটা কোনো যৌক্তিক কারণ হতে পারে না। এতদিন প্রতিষ্ঠান চলতে পারলে এই ১৯ নার্সের জন্য কি প্রতিষ্ঠান চলতে পারবে না? তাছাড়া এখানে তো বেশির ভাগই এইড নার্স হিসেবে কর্মরত।
তিনি বলেন, শুধু তাই নয় ১৫ জন আয়া এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীকেও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আয়া বুয়া হতেও কি ডিপ্লোমা করতে হয়? তাছাড়া চাকরিচ্যুত করার সাথে সাথে তাদের বেতনও বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।সারাদেশে লকডাউন চলছে। এই সময় তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়ে তাদের আরও কষ্টে ফেলে দিয়েছে।
চট্টগ্রামের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (ইউএসটিসি) অধীনে ছিল বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল। পরে ইউএসটিসি আলাদা করা হয়। এই দু'টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত ডা. নুরুল ইসলাম।
আবু আজাদ/এসএইচএস/জেআইএম