সারাদেশে ১১ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে দুর্গতদের পাশে সিসিএস
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারিতে দুর্গতের পাশে দাঁড়াতে পাঁচ উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) ও এর যুব শাখা কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ (সিওয়াইবি)। সংগঠনটির পক্ষ থেকে ১১ হাজার স্বেচ্ছাসেবী দেশের ৫৫টি জেলায় কাজ করে যাচ্ছেন।
করোনায় দুর্গতদের খাদ্য সহায়তা, ইফতার উপহার ও করোনায় বৃত্তিমূলক সহায়তা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে সিসিএস ও সিওয়াইবির করোনা স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠন করা হয়। বর্তমানে দেশের ৫৫টি জেলায় কাজ করছে করোনায় স্বেচ্ছাসেবীর ভিন্ন ভিন্ন এসব টিম।
এই টিমের প্রধান কাজ হলো- স্বেচ্ছাশ্রমে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা ও প্রশাসনের সঙ্গে সকল কাজে সমন্বয় করা।
সরকার নির্দেশিত বিভিন্ন বিষয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস ও সিভিল সার্জনকে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সহায়তা করা।
‘করোনায় স্বেচ্ছাসেবী’ টিমের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১১ হাজার। সিসিএস ও সিওয়াইবির সদস্যরা ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই নামে গ্রুপ করে সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সিসিএসের নির্বাহী পরিচালক ও সিওয়াইবির কেন্দ্রীয় সভাপতি পলাশ মাহমুদ এবং সিওয়াইবির কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি করোনায় স্বেচ্ছাসেবীর উপদেষ্টা এবং কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক কাজী জহিরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও ছয়জন সহ-সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া ৬৪ জেলাকে ১৪টি অঞ্চলে ভাগ করে ১৪ জন অঞ্চল সমন্বয়ক এবং জেলা ও থানায় একজন করে সমন্বয়কের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবী টিম কাজ করছে।
‘করোনায় খাদ্য সহায়তা’ প্রোগ্রামে কোনো এলাকা ধরে বা গোষ্ঠী ধরে নয়, স্বেচ্ছাসেবকদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রকৃত বিপদে থাকা বা না খেয়ে থাকা মানুষকে বাজার করে দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় প্রায় ৭ হাজার পরিবারকে এক সপ্তাহের বাজার সরবরাহ করেছে স্বেচ্ছাসেবীরা। অন্যদিকে, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ পরিবারকে ইফতার সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে।
সিওয়াইবি মূলত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন। করোনায় হলে বা মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের বাড়িতে ফিরতে হয়েছে। ফলে সঙ্কটে পড়েছেন বহু শিক্ষার্থী। যেসব শিক্ষার্থী টিউশনি বা খণ্ডকালীন চাকরি করে নিজে চলত এবং দরিদ্র বাবা-মাকেও সহযোগিতা করত, এমন সমস্যায় পড়া শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে সাতটি ক্যাম্পাসে কাজ করছে ‘করোনায় উপহার’ প্রোগ্রাম টিম। উপহার প্রোগ্রাম চালু করার পর এ পর্যন্ত ২০০ এর বেশি শিক্ষার্থীকে সহায়তা করা হয়েছে।
সাতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ (গোপালগঞ্জ)।
এছাড়া করোনায় বিপাকে পড়া শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুষ্টিয়া) সিসিএস ও বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম আইইউয়ান যৌথ উদ্যোগে ইবির ১০০ শিক্ষার্থীকে আগামী তিন মাস ২ হাজার টাকা করে বৃত্তিমূলক সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এই অর্থ মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই দেয়া হবে। কমপক্ষে তিন মাস এবং প্রয়োজন হলে ছয় মাস এ সহায়তা দেয়া হবে।
মানুষকে সহায়তার এসব উদ্যোগের অর্থায়নের বিষয়ে সিসিএসের নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, সিসিএসের নিজস্ব কোনো তহবিল নেই। বিভিন্ন মানুষ যে অনুদান দিচ্ছে, আমরা সেটি পৌঁছে দিচ্ছি। কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যেমন; ই-ভ্যালি ও ব্রান্ডবাই.এক্সওয়াইজেড ও বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ সোসাইটি কিছু অনুদান দিয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকে অনুদান দিয়েছে। তবে স্বেচ্ছাসেবীরা স্থানীয় পর্যায়ে অনুদান সংগ্রহ করে বণ্টন করছে। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে যেটুকু পারছি সহায়তা করছি। কিন্তু সারা দেশের স্বেচ্ছাসেবীরা খুব ভালো কাজ করছে।
এফএইচ/এফআর/পিআর