কর্মচারীর মৃত্যু, সুরক্ষার দাবিতে চট্টগ্রাম বন্দরে বিক্ষোভ
করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহন বিভাগের ওয়ান স্টপ সার্ভিসের উচ্চমান সহকারী আবদুল হালিমের (৫৬) মৃত্যু হয়েছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বন্দরে কর্মরত ৭ হাজার কর্মচারীর মধ্যে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি জানান, বন্দরের ওই কর্মী মঙ্গলবার (৫ মে) কোভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর বুধবার (৬ মে) নমুনা পরীক্ষায় তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
এদিকে, তার মৃত্যুতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবিতে বৃহস্পতিবার (৭ মে) সকাল ১০টা থেকে বিক্ষোভ করেছেন ওয়ান স্টপ সার্ভিসের কর্মীরা। ওই দফতরে কর্মরত আবদুল হালিম মিয়ার মৃত্যুতে সেখানে কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করে কর্মকর্তারা। তিন ঘণ্টা কাজ বন্ধ থাকার পর কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দুপুর ১টার দিকে কাজে ফেরেন তারা।
বন্দর সূত্র জানা যায়, আব্দুল হালিমের বাড়ি ঝালকাঠি জেলায়। তিনি চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় বাস করতেন। গত শনিবার পর্যন্ত তিনি বন্দরের পরিবহন বিভাগের ওয়ান স্টপ সার্ভিসে কর্মরত ছিলেন।
আবদুল হালিমের ছেলে আজমল হাসিব জানান, করোনার উপসর্গ নিয়ে তার বাবা গত সোমবার (৪ মে) চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে কিছু ওষুধ দিয়ে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেন। এরপর মঙ্গলবার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার বাবা মারা যান। চমেক হাসপাতালে তার নমুনা নেয়ার পর বুধবার রাতে তার করোনা শনাক্তের প্রতিবেদন আসে।
আজমল হাসিব বলেন, ‘বন্দরের কর্মরত হয়েও বাবার চিকিৎসায় সেভাবে এগিয়ে আসেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। মেলেনি অ্যাম্বুলেন্সও। ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি এবং ঢাকার আইইডিসিআরেও বহুবার ফোন করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে অনেক কষ্ট করে মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান। এরপর গরীবুল্লাহ শাহ মাজারের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।’
চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালের মেডিকেল সুপারেন্টেন্ডেন্ট ডা. মুকুন্দ কুমার ঘোষ বলেন, ‘করোনা উপসর্গ নিয়ে আবদুল হালিম মিয়া বন্দর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে তাকে কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। ২ দিন ধরে তিনি জ্বর কাশিতে ভুগছিলেন।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদের (সিবিএ) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নায়েবুল ইসলাম ফটিক বলেন, ‘বন্দরের পরিবহন বিভাগের কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করায় বন্দরে কর্মরত ৭ হাজার কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার ওয়ান স্টপ সার্ভিসে কর্মকর্তারা সকাল ১০টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দুপুর ১টার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।’ তিনি বন্দরের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ওয়ান স্টপ সার্ভিসের কর্মীরা কিছুক্ষণ কাজ বন্ধ রেখেছিলেন। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। বন্দরে কর্মরত সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।’
এফআর/এমকেএইচ