ঘরবন্দি জীবনে নেই বৃষ্টির আনন্দ
আগে বৃষ্টি শুরু হলে কত আনন্দ হতো। বন্ধুরা এক জায়গায় বসে আড্ডা দিতাম। কত গল্প হতো। মহামারি করোনাভাইরাস সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। কত দিন বন্ধুদের মুখ দেখি না। আবার কবে সবার দেখা পাব তা জানি না। বন্ধুরা দল বেঁধে আবার জড়াজড়ি, খুনসুটিতে মেতে ওঠার সুযোগ পাব কি-না তাও জানি না। কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ।
হঠাৎ এক পশলা শান্তির বৃষ্টির ছোঁয়া ভালো লাগে না-এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। বৃষ্টির অবিরাম ধারায় জনজীবনে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে আসলেও সবার মধ্যেই এক ধরনের প্রশান্তির পরশ দিয়ে যায়। যান্ত্রিক জীবনেও বৃষ্টির ছন্দ দিয়ে যায় অবিরাম আনন্দ।
হয়তো প্রেমিক মনে বৃষ্টি একটু বেশিই নাড়া দিয়ে যায়। তাই তো বৃষ্টির সময় প্রিয়জনের কথাই রোমান্টিক মানুষগুলোর বেশি মনে পড়ে। বৃষ্টিতে ঘরবন্দি হয়ে পড়ে প্রিয়জনকে কাছে পেতে মন চায়।
কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে আরিফের মতো অনেকের জীবনে বৃষ্টির আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। প্রাণঘাতী করোনার হাত থেকে বাঁচতে প্রায় দুই মাস ধরে ঘরবন্দি জীবন কাটছে সবার। এই ঘরবন্দি জীবনে বৃষ্টি এলেও মনকে শান্তির পরশ দিতে পারছে না।
দেবে কী করে? সবাই যে বন্দিদশা থেকে মুক্তি হওয়ার জন্য অধীর হয়ে রয়েছে। কবে থামবে মহামারি করোনার প্রকোপ? কবে স্বাভাবিক হবে মানুষের জীবন? মুক্তমনে কবে ঘোরা যাবে একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত? কবে সুযোগ পাওয়া যাবে প্রিয় মানুষকে দেখে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করার আনন্দ? সবাই যেন এসব চিন্তায় মগ্ন।
তাইতো ঘরবন্দি জীবনে শান্তির বৃষ্টির দেখা মিললেও তা মনকে শীতল করতে পারছে না। সবার মধ্যেই এক ধরনের বিষণ্নতা ভর করে বসেছে। জনজীবনে ছন্দপতন ঘটানো করোনাভাইরাস সব আনন্দই কেড়ে নিয়েছে।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা সোহেল বলেন, ‘বৃষ্টির দিনে আগে কত আনন্দ হতো। সকালে বৃষ্টি আসলে নানা অজুহাতে অফিসে যাইনি কতদিন। বাসায় বসে সবাই আড্ডা দিয়েছি। ভালো-মন্দ রান্না করে খেয়েছি।’
‘এখন অফিসে না যেতে কোনো অজুহাত দেখানো লাগে না। সকাল, বিকাল সন্ধ্যা-সবসময় ঘরে বন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে। সারাক্ষণ মনের ভেতর নানা দুশ্চিন্তা উঁকি দিয়ে যায়। এমন জীবনে বৃষ্টির সেই আনন্দ কীভাবে ফিরে আসবে? সময় এখন জীবন বাঁচানো নিয়েই ব্যস্ত।’
ব্যবসায়ী ফারুক হাসান বলেন, ‘আগে সকালের দিকে বৃষ্টি আসলে বাসা থেকে বারবার বলত অফিসে না যাওয়ার জন্য। এখন বৃষ্টি আসা লাগে না, এমনিতেই সবসময় বাসায় থাকি। বৃষ্টির কারণে অলস জীবনে আগে যে আনন্দ ছিল, এখন তার ছিটেফোঁটাও নেই। বৃষ্টির ফোঁটা মনকে একটু নাড়া দিয়ে যায় না। সারাক্ষণ বন্দিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার অপেক্ষা করি। জানি না আবার কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব! সবাই মিলে আনন্দ করতে পারব।’
এমএএস/এসআর/পিআর