বিরূপ অভিজ্ঞতায় করোনা টেস্ট করতে আগ্রহ হারিয়েছেন আক্রান্ত আইনজীবী

প্রথমে তিনি নিজে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে তৎক্ষণাৎ তিনি বাসায় আইসোলেশনে চলে গেলেও এর মধ্যেই তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। এই অসুস্থ অবস্থায়ই তিনি স্ত্রী-সন্তানদের করোনার পরীক্ষা করাতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে যান। সেখানে স্ত্রী ও দুই সন্তানের নমুনা দিয়ে আসার ২৪ দিন পেরিয়ে গেলেও আসেনি কোনো রিপোর্ট। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেও কোনো ফল মেলেনি। এর মধ্যে অবশ্য তিনি সুস্থতাবোধ করছেন, ভালো বোধ করছেন তার স্ত্রী ও দুই সন্তানও। আগের করোনা টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে যে বিরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেজন্য পুরোপুরি সুস্থ কি-না, তা জানতেও হাসপাতালে যাচ্ছেন না তিনি।
করোনার ছোবলে এমন বিরূপ অভিজ্ঞতার শিকার ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুর রশিদ মোল্লা। যদিও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়ে আসছেন, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন করোনা মোকাবিলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন পর্যায়ের সমন্বয়হীনতা ও অবহেলা নিয়েও।
আক্রান্ত হওয়া ও চিকিৎসার বিস্তারিত তুলে ধরে রশিদ মোল্লা জানান, এপ্রিলের মাঝামাঝি একদিন হঠাৎ তার জ্বর হয় এবং তা বাড়তে থাকে। সাথে হাঁচি-কাশিও। ১৮ এপ্রিল তিনি নমুনা দিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে তাকে জানানো হয়, তার করোনা পজিটিভ। সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যান তিনি। অবস্থান নেন আলাদা একটি রুমে। পুলিশ তখন তাদের বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে।
কিন্তু দুদিন পর (২০ এপ্রিল) তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের মধ্যেও দেখা দেয় করোনার উপসর্গ। তখন রশিদ মোল্লা স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নমুনা দিয়ে আসেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে। তবে শনিবার (১৬ মে) প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত রশিদ মোল্লার পরিবারের সদস্যদের করোনা টেস্টের রিপোর্ট জানানো হয়নি।
এ আইনজীবীর গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জে। থাকেন ৩০/৩ নারিন্দার শাহ্সাহেব লেনে। তিনি জানান, গত মার্চের শেষ সপ্তাহে সরকারি ছুটি ঘোষণার পর থেকে ৮ ও ১০ এপ্রিল মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস পরে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার সদাই করা ছাড়া আর কোথাও যাননি তিনি। এরপর গায়ে হালকা জ্বর অনুভব করতে থাকেন। রশিদের ভাষ্য, ‘এতো সুরক্ষার মধ্যে থেকেও আক্রান্ত হওয়ায় আমার মনে হচ্ছে, বাজার থেকে আনা তরিতরকারির মাধ্যমে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারি।’
আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা প্রক্রিয়ার মধ্যে একাধিকবার পরীক্ষা করে তবেই কর্তৃপক্ষ সুস্থতা ঘোষণার কথা থাকলেও রশিদ মোল্লা বলেন, ‘শারীরিকভাবে আমি সুস্থ। কিন্তু আমাকে আর নতুন করে কোনো পরীক্ষা করা হয়নি। আমার পরিবারের তিনজনের করোনা পরীক্ষার টেস্টের রিপোর্ট আজ পর্যন্ত জানতে পারলাম না। এখনো আতঙ্কে আছি। তবে সুস্থতা বোধ করছি।’
আগের টেস্টের ফলাফলই যেখানে পাননি, সেখানে নতুন করে টেস্ট করাতে গেলে সহযোগিতা পাবেন কি-না, হাসপাতালে যাওয়ার পথ বা সেখানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এবং নানা শঙ্কায় ফের টেস্টের আগ্রহ হারিয়েছেন বলেও জানান এ আইনজীবী।
নিজের চিকিৎসা প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনায় আমি চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ সেবন করেছি। এছাড়া ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া প্রতিষেধক ও চিকিৎসার পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। একই সঙ্গে কিছু নিয়মকানুন ফলো করেছি। নিয়মিত ওষুধ যেমন নাপা এক্সটেন্ড, রোজিথ (অ্যাজিথরোমাইসিন গ্রুপের ওষুধ), ফেক্সো (ফেক্সোফেনাডিন গ্রুপ), সিভিট এবং ওরস্যালাইন খেয়েছি। গরম পানির মধ্যে লবণ ও ভিনেগার দিয়ে বেশি বেশি গার্গল করেছি। আদা, রসুন, লবঙ্গ, এলাচি, গোলমরিচ, তেজপাতা ও কালো জিরা একটু ছেচে পানি ফুটিয়ে ওই পানির বাষ্প নাকে-মুখে টেনেছি। এই বাষ্পটা টানার জন্য মাথায় গামছা হাত দিয়ে এমনভাবে ধরতে হবে যেন ওই বাষ্প পুরোটাই নাকে-মুখে লাগে।’
‘এরপর আদাজাতীয় গরম পানি, লেবুর রস ও মধু সরিষার তেল দিয়ে খেয়েছি। গরম পানির মধ্যে গামছা ভিজিয়ে হালকা চিপুর দিয়ে নাকে চেপে ধরে নাকে টেনেছি। তাতে নাকের ভেতরের শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থ বেরিয়ে এসেছে। সব সময় গরম পানি খেয়েছি। গরম পানি দিয়ে গোসল করেছি। ব্যবহৃত কাপড়-চোপড়, চাদর, বালিশের কভার প্রতিদিন ফুটন্ত পানি ও ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করেছি। বাথরুমে বারবার ফুটন্ত পানি ঢেলেছি। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন ফলমূল খেয়েছি প্রচুর। মাল্টা, আনারস, মাছ, মাংস ডিম বেশি বিশি খেয়েছি।’
তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি আল্লাহকে ডেকেছি। আল্লাহ আমাদের মাফ করেছেন। শুভাকাঙ্ক্ষী বহু মানুষ আমাদের জন্য দোয়া করেছেন। আমার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে পরিচিত চারজন চিকিৎসক মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠিয়েছেন। বন্ধু আইনজীবী অ্যাডভোকেট সোহেল ও আমাদের বিল্ডিংয়ের অন্য ভাড়াটিয়া রানা ভাই কয়েকদিন বাজার-সদাই এবং ওষুধ কিনে দিয়েছেন। বেশ কয়েকজন সাংবাদিক কলিগ অনেক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।’
‘আমার কাছে মনে হয়েছে, মন থেকে আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাইলে কাউকে ফিরিয়ে দেন না। করোনা আক্রান্তদের প্রতি একটাই অনুরোধ তারা যেন মনোবল না হারায়’— বলেন রশিদ মোল্লা।
এফএইচ/এইচএ/জেআইএম