করোনা হাসপাতালের পিপিই খোলা ডাস্টবিনে, বাড়ছে ঝুঁকি

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:২৬ পিএম, ১৮ মে ২০২০

রোববার বিকেল আনুমানিক ৩টায় রাজধানীর চাঁনখারপুলের দিক থেকে ট্রলি ঠেলে কয়েকজন তরুণ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দিকে যাচ্ছিলেন। ট্রলিগুলোর কোনোটি ফাঁকা আবার কোনোটিতে কালো, হলুদ ও সবুজ রঙের বিন দেখা যায়। যারা ট্রলি ঠেলছিলেন তাদের সবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) দ্বারা আবৃত।

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির মধ্যে পিপিই পরা ওই তরুণরা কোথায় গিয়েছিলেন জানতে চাইলে তারা জানান, অদূরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের বিপরীত দিকের ডাস্টবিনে মেডিকেল বর্জ্য ফেলে ফিরে আসছিলেন।

korona0

ডাস্টবিনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মেডিকেল বর্জ্যে ভরা। ডাস্টবিনের সামনে হ্যান্ড গ্লাভস ও হেড কভার ঝুলছে। ডাস্টবিনের ঠিক সামনেই ভাসমান হতদরিদ্ররা ছাউনি দিয়ে ঘর তৈরি করে সেখানে থাকেন। একই স্থানে ক্লান্ত রিকশাচালকদের বসে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। কয়েক গজ দূরে একটি চায়ের দোকানে ভাসমান কিছু লোক আড্ডা দিচ্ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্টসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিদিনের ব্যবহৃত (ওয়ান টাইম) পিপিইসহ বিভিন্ন মেডিকেল বর্জ্য এ ডাস্টবিনে ফেলা হচ্ছে।

korona0

ঢামেকের জরুরি বিভাগে করোনা আইসোলেশন কক্ষ এবং বার্ন ইউনিটে রোগীদের নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড কক্ষ করা হয়েছে। করোনা চিকিৎসায় সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে যে সুরক্ষা সামগ্রী পরিধান করা হচ্ছে সেগুলোই ফেলা হচ্ছে ওই ডাস্টবিনে। এর মাধ্যমে ডাস্টবিনের কাছাকাছি অবস্থানরত ভাসমান মানুষগুলো আক্রান্ত হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

যে কোনো ধরনের মেডিকেল বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার কথা থাকলেও বাস্তবে তা করা হচ্ছে না। বিশেষ করে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহৃত পিপিই স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করলেও তা এভাবে ফেলা নিয়ে সমালোচনাও তৈরি হয়েছে।

যে ডাস্টবিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে ঠিক তার পাশেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি বর্জ্য ফেলার বিশাল জায়গা। কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় সেখানে মেডিকেল বর্জ্য ফেলতে দেয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

korona0

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, এমন খোলা ডাস্টবিনে মেডিকেল বর্জ্য না ফেলার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার নিষেধ করলেও তারা এখানেই তা ফেলছেন।

এ ডাস্টবিনের ঠিক পাশেই সিটি করপোরেশনের বিশাল ডাস্টবিন রয়েছে, বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ বর্জ্য সংগ্রহ করে এখানে এনে ফেলা হয়। এ কারণে তারা মেডিকেল বর্জ্য এখানে ফেলতে দেন না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

মেডিকেল বর্জ্য বাইরের ডাস্টবিনে ফেলা হয় কি-না, জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আপনার কি তাই মনে হয়?’

korona0

তাহলে কোথায় ফেলা হয়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেডিকেল বর্জ্য কখনোই বাইরে ফেলা হয় না।’

প্রিজম বাংলাদেশ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢামেক হাসপাতালের চুক্তি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে প্রতিদিন ব্যাগে ভরে রাখা হয়। প্রিজম বাংলাদেশ সেগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।’

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহৃত পিপিই, গ্লাভস ও মাস্ক তাহলে কোথায় ফেলা হয়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো মেডিকেল বর্জ্যের আওতায় পড়ে। ফলে এগুলো বাইরে ফেলার সুযোগ নেই।’

এমইউ/বিএ/এইচএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।