সাহায্যের আশায় রাজধানীর পথে পথে হতদরিদ্র মানুষের অপেক্ষা
বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা। রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান ফটকের দুই পাশে ফুটপাতে বিভিন্ন বয়সী অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশুদের ভিড়। তারা সবাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য চিহ্নিত গোলাকার বৃত্তের মধ্যে বসে আছেন।
কখন আসবে কাঙ্ক্ষিত ত্রাণ- এ আশায় একটু পর পর এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন তারা। এ সময় একটি সেনাবাহিনীর বড় লরি দেখে সবাই নড়েচড়ে বসে। একজন পঙ্গু বৃদ্ধকে ক্রাচে ভর করে সামনে এগুতে দেখা যায়। এ সময় সেনাবাহিনীর লরিটি স্কুলের ভেতর প্রবেশ করলে অপেক্ষমাণ মানুষগুলো আবার গোলাকার বৃত্তে বসে ত্রাণের অপেক্ষা করতে থাকেন।
অপেক্ষমাণ নারীদের একজন সালমা বেগম জানান, ‘হুনছি কারা জানি ত্রাণ দিব। আমাগো একজনের কাছে খবর দিসে, লাইন ধইরা বইয়া থাকতে কইছে। জানিনা কখন আইবো। দুই ঘণ্টা ধইরা বইয়া আছি।’
ত্রাণ ও আর্থিক সাহায্যের আশায় অপেক্ষারত মানুষের এমন লাইন শুধু আজিমপুরে নয়, রাজধানীর পাড়া-মহল্লার অলিগলি থেকে শুরু করে রাজপথে দিনকে দিন হতদরিদ্রদের ভিড় বাড়ছে।
ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ত্রাণের খাদ্যপণ্য ও নগদ টাকা পাওয়া যাবে, এমন আশায় তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি কম হওয়ায় তাদের কপাল পুড়েছে। অন্যান্য বছর রোজার মাসে তাদের বেশ ভালো আয় রোজগার হলেও এবার ত্রাণের সাহায্যই বড় ভরসা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক পরিদর্শনে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্পটে হতদরিদ্র মানুষরা একসঙ্গে দল বেঁধে রাস্তায় অপেক্ষা করছেন। তাদের সামনে কোনো যানবাহন থামলেই তারা সাহায্যের আশায় ছুটে যাচ্ছেন। দল বেঁধে অপেক্ষা করা মানুষগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বালাই নেই। শারীরিক দূরত্ব তারা বোঝে না। তারা শুধু জানে সাহায্য না পেলে খাবার জুটবে না। রাস্তাঘাটে অপেক্ষমাণ এ মানুষগুলোর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরাও রয়েছেন।
রাজধানীর হাতিরপুলে এ প্রতিবেদককে ভিডিও ধারণ করতে দেখে মধ্যবয়সী এক নারী এগিয়ে এসে বলেন, ‘সবাই খালি ছবি তুলে, টাকা-পয়সার বেশিরভাগ মানুষই দেয় না। যাকাত হিসেবে কিছু দিলে তো আমরা খাইয়া বাঁচতে পারি।’
এমইউ/এমএসএইচ/এমকেএইচ