‘ভালোবাসার উপহার’ নিয়ে কর্মহীন শ্রমিকদের পাশে বিআইডব্লিউটিএ
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোর মধ্যে একটি সদরঘাট। একসময় সদরঘাটে লোকে সরগরম থাকত, জায়গা থাকত না পা ফেলার! তবে করোনার কারণে এখনকার সদরঘাটের চেহারাটা অন্যরকম। চারদিক ফাঁকা। সদরঘাট থেকে ছাড়ছে না কোনো লঞ্চ, তাই মানুষের নেই কোনো আনাগোনা। ঢাকা নদীবন্দর টার্মিনালেও জনশূন্যতা বিরাজ করছে। সব মিলিয়ে পুরোপুরি নিষ্প্রাণ হয়ে আছে রাজধানীর ব্যস্ততম এসব এলাকা।
করোনা পরিস্থিতিতে সদরঘাট থেকে কোনো লঞ্চ আসা-যাওয়া না করায় বেকার হয়ে পড়েছেন এখানকার শ্রমিকরা। লঞ্চও চলে না, উপর্জনেরও পথ বন্ধ তাদের। ওদিকে ঢাকা নদীবন্দর টার্মিনালে বন্দরও ফাঁকা। কোনো কাজ নেই শ্রমিকদের। জমানো টাকাও নেই যে কারণে জুটছে না খাবারও। কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকরা অসহায়ত্বের মধ্যে দিয়ে দিন পার করছেন এখানে।
এ অবস্থায় ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই তাগিদ থেকে কর্মহীন হয়ে পড়া লঞ্চের মাস্টার, ড্রাইভার, সুকানিসহ লঞ্চস্টাফদের মাঝে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে অতিপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বা ভালোবাসার উপহার নিয়মিত বিতরণ করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
বৃহস্পতিবার ঢাকা নদীবন্দর টার্মিনালে বন্দর এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় দেড়শ লঞ্চের স্টাফদের মধ্যে এই খাদ্যসমাগ্রী বিতরণ করা হয়। মনুষ্যত্ববোধের পরিচয় বিপদেই দিতে হয়- এমন মানবিকতা থেকে করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন, দিনমজুর ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুরু থেকেই নৌশ্রমিক, কুলি, দিনমজুর, মাঝি, জেলে, ভবঘুরে, ছিন্নমূল, প্রতিবন্ধীসহ সদরঘাট ও ঢাকা নদীবন্দর কেন্দ্রিক নানা শ্রেণির অসহায় মানুষের মাঝে বিআইডব্লিউটিএর পাশাপাশি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। রমজান শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ২০০ জনের মাঝে ইফতার ও সেহরী বিতরণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ২৪ মার্চ থেকে সারাদেশে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেই থেকে যাত্রী চলাচলের দিক থেকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর অর্থাৎ ঢাকা নদীবন্দর দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ২২ জেলায় ৪৩ নৌপথে ছোটবড় ৮০টি লঞ্চে গড়ে লক্ষাধিক নৌযাত্রীর চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রচণ্ড ব্যস্ততম সদরঘাট এখন এক শান্ত নীরব। কর্মহীন হয়ে অসহায়ত্বের মধ্যে পড়েছে নদী, নৌযান আর বন্দরনির্ভর বিপুল সংখ্যক কর্মজীবী, দিনমজুর।
তিনি বলেন, বিষয়টি বিবেচনায় এনে পরিস্থিতির শুরু থেকেই নৌশ্রমিক, কুলি, দিনমজুর, মাঝি, জেলে, ভবঘুরে, ছিন্নমূল, প্রতিবন্ধীসহ সদরঘাট ও ঢাকা নদীবন্দর কেন্দ্রিক নানা শ্রেণির অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ এবং চরম অসহায় মানুষদের মাঝে ইফতার ও সেহরি বিতরণ করা হচ্ছে।
এ সকল কর্মসূচির মধ্যে কয়েকটিতে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক উপস্থিত ছিলেন।
বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন জানান, বন্দর এলাকায় অবস্থানরত মোট ১৫০টি যাত্রীবাহী লঞ্চের প্রতিটিতে ২৫ কেজি চাল, ৫ কেজি ডাল, ৫ কেজি পেঁয়াজ, ৫ লিটার সয়াবিন তেল প্রদান করা হয়। এছাড়া এ সকল লঞ্চে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও ব্যবহার্য পানি সরবরাহেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এএস/বিএ