সিলেটে বিনাচিকিৎসায় ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষুব্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০২:৩৬ এএম, ০৬ জুন ২০২০

সিলেটে একাধিক হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে ব্যবসায়ী কমপক্ষে তিন রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. আবুল কাশেম আব্দুল মোমেন (একে আবদুল মোমেন)।

এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমানের সাথে কথা বলেছেন। একই সাথে সিলেটের জেলা প্রশাসককে ই-মেইল করেছেন মন্ত্রী। শুক্রবার বিষয়টি গণমাধ্যমকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিজে নিশ্চিত করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাবেন, এটা চরম অমানবিক ও খুবই দুঃখজনক। এগুলো মেনে নেয়ার মতো নয়। কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা পাওয়া তার নাগরিক অধিকার। হাসপাতালগুলো চিকিৎসা সেবা দিতে বাধ্য।

ড. মোমেন আরও বলেন, অন্য যেকোনো সময় রোগীদের নিয়ে বাণিজ্য করা হয়। আর এখন দুঃসময়ে তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে না, এটা হতে পারে না। কঠিন সময়ে যদি পাশে না থাকে, তবে আর এসব হাসপাতাল দিয়ে কি হবে।

তিনি বলেন, সিলেটে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে।

সিলেটে গত ৫ দিনে অন্তত তিনজন রোগী বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন। গত ১ জুন রাতে সিলেট নগরের কাজীরবাজার মোগলটুলা এলাকার (বাসা এ/৫) এর লেচু মিয়ার স্ত্রী মনোয়ার বেগম (৬৩) মারা যান। তিনি নগরের ৬টি হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসাসেবা পাননি। ওই নারীকে নিয়ে তার স্বজনরা আলহারামাইন হাসপাতাল, নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সুবহানীঘাটস্থ মা ও শিশু হাসপাতাল, তালতলাস্থ পার্কভিউ হাসপাতাল, রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে পরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেটে তিনি মারা যান।

একইদিন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের এক নারী (৭০) স্ট্রোক করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে সিলেটে আসেন স্বজনরা। কিন্তু সিলেটে নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আলহারামাইন হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল, মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতাল, উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নুরজাহান হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসাসেবা পাননি তিনি। ওই নারী অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই মারা যান।

এদিকে, শুক্রবার ৫ জুন ভোরে নগরের কুমারপাড়ার বাসিন্দা বন্দরবাজারের আরএল ইলেকট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী ইকবাল হোসেন খোকাকে (৫৪) নিয়ে তার স্ত্রী ও ছেলে সোবহানীঘাটের আল হারামাইন, দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ চার চারটি হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসাসেবা পাননি। ওসমানী হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান।

একের পর এক এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার খবর জাগো নিউজসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে নানান শ্রেণিপেশার লোকজন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ও বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ঘটনাগুলো জেনে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনও।

এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রী সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশনা দিয়েছেন। ঢাকা থেকে শুক্রবার বিভাগীয় কমিশনারের সাথে কথা বলেন ড. মোমেন। তিনি সিলেটের জেলা প্রশাসককেও ইমেইল প্রেরণ করে একই নির্দেশনা দিয়েছেন।

জানা গেছে, যেসব হাসপাতাল রোগী গেলে ফিরিয়ে দেয় বা চিকিৎসাসেবা প্রদান করে না, তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা হিসেবে লাইসেন্স বাতিল করার প্রয়োজন হলে তা করতে মন্ত্রীর নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত হাসপাতালগুলোকে বড় অঙ্কের জরিমানা কিংবা বিধি মোতাবেক শাস্তির আওতায় আনতেও মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।

ছামির মাহমুদ/এমএএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।