করোনায় স্থগিত ৭০০ বছরের ঐতিহ্য মোহছেন আউলিয়ার ওরস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৭:২৩ পিএম, ০৮ জুন ২০২০

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে চট্টগ্রামের প্রায় ৭০০ বছরের ঐতিহ্য হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়ার (র.) বার্ষিক দুই দিনব্যাপী ওরস শরিফ স্থগিত করা হয়েছে।

সোমবার (৮ জুন) দুপুরে আনোয়ারা উপজেলার বটতলী মাজার প্রাঙ্গণে দরবার শরিফ পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দরবার শরিফ পরিচালনা কমিটির যুগ্ম মোতোয়াল্লি এস এম জহিরুল ইসলাম।

তিনি জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ২০ জুন আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়ার (র.) ওরস শরিফ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিসহ সারাবিশ্ব এখন কার্যত স্থবির। রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় পরস্পরের সঙ্গে স্পর্শ তো দূরে থাক, কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজনীয় কাজ করতে হচ্ছে। তিনি জানান, পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্ত ও আশেকদের কথা চিন্তা করে দরবারের এক জরুরি সভায় ওরস স্থগিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সব ভক্তকে দরবারে না এসে ঘরে বসে মহামারি থেকে সবাই যেন মুক্তি পান বাবাজানের নিকট এই আর্জি বা প্রার্থনা করা হচ্ছে। সকলকে ঘরে থাকার আহ্বান করছি।

জহিরুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর ওরস শরিফে লাখ লাখ লোক সমবেত হন। এ বছর করোনোভাইরাসের কারণে জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে অগ্রাধিকার দিয়ে দুই দিনব্যাপী ওরস শরিফ স্থগিত করা হয়েছে। প্রায় ৭০০ বছর পর এবারই প্রথমবারের মতো ওরস শরিফ স্থগিত করা হলো।

সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম মোতোয়াল্লি এস এম ফজলুর করিম, সদস্য আবু তাহের মিয়া, প্রধান সহকারী হাবিবুর রহমানসহ দরবার পরিচালনা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ctg-1

এদিকে আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ দুলাল মাহমুদ বলেন, ‘দরবারের ওরসকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ভক্তরা দরবারে এসে থাকে। এ বছর করোনোভাইরাসের কারণে জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ওরস শরিফ স্থগিত করেছে মাজার পরিচালনা কমিটি। থানায় লিখিতভাবেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, এর আগে করোনাভাইরাসের কারণে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলি খেলা ও বৈশাখী মেলা স্থগিত করা হয়। শত বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এবার ঐতিহ্যবাহী এ কুস্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি।

জানা যায়, বাংলার সুফি মতবাদের অন্যতম প্রবর্তক হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (র.) সুদূর আরব থেকে সমুদ্রপথে ইসলাম প্রচারে চট্টগ্রামে আগমন করেন প্রায় ৭০০ বছর আগে। বর্তমান চট্টগ্রাম শহরের প্রবর্তক ছিলেন তার মামা বদর আউলিয়ার (রহ.)। চট্টগ্রাম নগরের চেড়াগী পাহাড়ে শুয়ে আছেন সেই মহান আধ্যাত্মিক ইসলাম প্রচারক।

চট্টগ্রামে আগমন করে হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (র.) চট্টগ্রামের আনোয়ারায় তার আস্তানা গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে আধ্যাত্মিক শক্তিতে জনপ্রিয় এ মহাপুরুষের মাজার প্রতিষ্ঠিত হয়। এ মহান সাধক দীর্ঘদিন ধরে এবাদত রেয়াজতে মগ্ন অবস্থায় ৯৮৫ হিজরি ৯৭১ বাংলা ৬ আষাঢ় ১৫৬৫ সনে মৃত্যুবরণ করেন।

এরপর থেকে প্রতি বছর ২০ জুন ৬ আষাঢ় বার্ষিক ওরস শরিফ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রতি বছর বার্ষিক ওরস শরিফকে ঘিরে উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের ররুমহাট দরগাহ প্রাঙ্গণে মাজার পরিচালনা কমিটি ছাড়াও উপজেলার ১১ ইউনিয়নের বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় সংগঠন ও ভক্তরা কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণের মধ্য দিয়ে ওরসের কর্মসূচি পালনের আয়োজন করে। ওরসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ ভক্তগণ দরবারে আসত। ওরসকে ঘিরে রাতব্যাপী বটতলী রুস্তমহাট ও আশপাশ এলাকায় ভক্তরা কবিগান, জারিগান ও ধর্মীয় গানের আসরের আয়োজন ছাড়াও পুরো এলাকায় মেলা বসত।

আবু আজাদ/এফআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।