অর্ধেক র‍্যাব সদস্যই সুস্থ, আক্রান্তদের তথ্য পেতে অ্যাপস চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১১ পিএম, ০৮ জুন ২০২০

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের পরেই লড়ছে পুলিশ। করোনায় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন, সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউন নিশ্চিত করতে গিয়ে একক বাহিনী হিসেবে পুলিশে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তবে পুলিশেরই এলিটফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এক্ষেত্রে অনেকটা ব্যতিক্রম।

র‌্যাব বলছে, সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যনিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ব্যাপক প্রস্তুতি থাকার কারণে বাহিনীতে করোনা সংক্রমণ তুলনামূলক কম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাব সদর দফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাহিনীটিতে সব মিলিয়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হাজারখানেক। তবে স্বস্তির কথা এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ শতাংশ আক্রান্ত র‌্যাব সদস্যই সুস্থ হয়ে কর্মে ফিরেছেন। আরও স্বস্তির কথা হচ্ছে, এই মহামারিতে আমাদের কোনো সদস্যকে হারাতে হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘দেশপ্রেমে উজ্জীবিত র‌্যাব সদস্যরা তাদের পেশাগত দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার মাধ্যমে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষাসহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের একযোগে কাজ করে যেতে হবে।’ দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘লকডাউন নিশ্চিত করা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মানুষকে করোনার বিষয়ে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। মাঠ পর্যায়ে মাইকিংসহ আমাদের নিয়মিত প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও নিয়মিতভাবে টহল, চেকপোস্ট এবং নৌ-টহল পরিচালনা করা হচ্ছে।’

এদিকে, সোমবার (৮ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে র‍্যাবের করোনা আক্রান্ত সদস্যদের চিকিৎসা মনিটরিংয়ের জন্য তৈরিকৃত অ্যাপ্লিকেশন উদ্বোধন করা হয়।

সেখানে বাহিনীতে সংক্রমণ রোধ ও করোনা মোকাবিলায় র‌্যাবের নিজস্ব নিরাপত্তা প্রস্তুতির ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়।

র‌্যাব জানায়, ‘র‌্যাব করোনা আপডেট’ নামে অ্যাপটির মাধ্যমে বাহিনীটিতে কর্মরত কতজন সদস্য করোনায় আক্রান্ত ও আক্রান্ত সদস্যদের সব আপডেট জানা যাবে। এর ফলে আক্রান্ত সদস্যদের চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ সার্বিক নজরদারি সহজ হবে।

rab-1

অ্যাপটি উদ্বোধনকালে র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সদস্যদের চিকিৎসা নজরদারিতে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।’

অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, ‘করোনাকালে বাহিনীর সদস্যদের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হচ্ছে ‘র‌্যাব করোনা আপডেট’ অ্যাপ্লিকেশন।’

র‌্যাব সদস্যরা যাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হয়, সে জন্য শুরু থেকে সুপরিকল্পিত কার্যক্রম গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে কর্মযজ্ঞ চলছে।

সচেতনতা বৃদ্ধি-

মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। ব্যারাকের বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক পোস্টার লাগানো হয়েছে। পাশাপাশি অভিযান/টহল/চেকপোস্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।

ফোর্সের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি-

প্রাথমিকভাবে শারীরিক রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের মধ্যে পরিবর্তন এবং প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। এছাড়া জিংক, ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট দেয়া হয়েছে।

সংক্রমণ রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ-

করোনাভাইরাস উপলক্ষে জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত সকল প্রকার ছুটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যেকোনো র‌্যাব সদস্য ছুটি বা অন্য কোনো সংস্থা থেকে আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে।

ইউনিটসমূহের প্রবেশ পথে যানবাহন ও ব্যক্তি পর্যায়ে জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া সংযোজন করা হয়েছে। আবাসন, খাদ্য গ্রহণ, নৈমত্তিক কাজসমূহ স্বাস্থবিধি মেনে পরিচালিত হচ্ছে।

মেডিক্যাল সক্ষমতা বৃদ্ধি-

ল্যাব সহকারী নিয়োগ, আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১৫ জন প্যারামেডিকস নিয়োগ করা হয়েছে (আর্মির অবসরপ্রাপ্ত মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টগণ এবং বিভিন্ন নার্সিং স্কুল থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স)।

চিকিৎসা সামগ্রী সংযোজন-

২২টি অক্সিজেন কনসেনটির ও ২২টি ভেন্টিলেটর সংযোজন করা হয়েছে। এই অক্সিজেন কনসেনটর বায়ুমণ্ডলের বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে তাই সিলিন্ডারের প্রয়োজন নেই। এছাড়া পালস অক্সিমিটার, ইসিজি, নেবুলাইজার, থারমাল স্ক্যানার ও ডিজিটাল বিপি মেশিন সংযোজিত হয়েছে।

rab-2

চিকিৎসা কেন্দ্রের ব্যবস্থা-

র‌্যাব ফোর্সের আক্রান্ত রোগীদের সিএমএইচ এবং পুলিশ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত চিকিৎসা কেন্দ্রে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সিএমএইচ, পুলিশ হাসপাতাল, ইমপালস হাসপাতাল ছাড়াও র‍্যাব থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বসুন্ধরা কমিউনিটি সেন্টার, আনন্দ কমিউনিটি সেন্টার এবং হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

চিকিৎসাধীনদের পর্যবেক্ষণ-

প্রত্যেকটি রোগীর বেড সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে ডাক্তার তার মোবাইল থেকে রোগীদের পর্যবেক্ষণ এবং কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেডিকেল টিম এবং কমান্ড চ্যানেলের সমন্বয়ে সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করা, অন্যান্য সবার বিছানার পাশে ইলেকট্রিক কেটলি, গরম পানি, গরম চা আদা কালোজিরা ইত্যাদি নিশ্চিত করা হয়েছে।

জরুরি মেডিকেল ইভাকুয়েশনের এবং র‌্যাবের চেইন অব ইকুয়েশনের জন্য প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।

ঝুঁকিপূর্ণ সদস্যদের চিহ্নিত-

কোনো র‍্যাব সদস্য অসুস্থবোধ করলে বা লক্ষণ প্রকাশ পেলে আমরা তাদেরকে আলাদা করে কোয়ারেন্টাইনে রাখছি এবং টেস্টের আওতায় এনেছি। পূর্বে অন্যান্য রোগ যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস আছে এমন সদস্যদের চিহ্নিতসহ ও বয়সভিত্তিক গ্রুপ চিহ্নিত করা হয়েছে।

rab-4

সেল গঠন-

র‌্যাব সদর দফতরে কেন্দ্রীয় করোনা কন্ট্রোল সেল গঠন করা হয়েছে। যা ২৪ ঘণ্টাই চালু রয়েছে এবং সকল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রত্যেক ব্যাটালিয়নে পৃথক করোনা সেল গঠন করা হয়েছে এবং ব্যাটালিয়নসমূহ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এসওপি ও নির্দেশনা প্রদান-

সম্ভাব্য ঝুঁকি পর্যালোচনার মাধ্যমে কয়েক দফা Sop/Do's/Dont's ইত্যাদি বিষয়ে নীতি নির্ধারণ করে সকলকে অবহিত করা হয়েছে।

আভিযানিক ব্যবস্থার পরিবর্তন-

কর্মরত ফোর্সকে বিভাজন করে ক্লাস্টার অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মোতায়েন করা হচ্ছে। ক্লাস্টারের ফোর্সেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ডিউটিতে মোতায়েনের পর নির্দিষ্ট দিনের (১৪ দিন) বিরতি দিয়ে পুনরায় ডিউটিতে মোতায়েন করা হচ্ছে। ক্লাস্টার অনুযায়ী আন্তঃব্যারাক ও ফ্লোরের গমন রহিত করা হয়েছে।

জেইউ/এফআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।