কুর্মিটোলা হাসপাতালে নার্সরা নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন!
রাজধানীর উত্তরার জসিম উদ্দিন রোডের বাসিন্দা সুলতানা জামান (ছদ্মনাম) একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। তিনি করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষিত রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ডিউটি করছেন। ফ্রন্টলাইন ফাইটার হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে তিনি নিজেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত হন। এবার রোগী হিসেবে নিজে ভর্তি হতে কেবিনের জন্য নার্স, মেট্রনের মাধ্যমে হাসপাতালে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দেন।
বর্তমানে ওই হাসপাতালের একটি মাত্র কেবিনে করোনা আক্রান্ত চারজন নারী ও দুইজন পুরুষসহ মোট ছয়জন নার্স ভর্তি রয়েছেন। সুলতানা জামান নামের ওই নার্সকে আগে থেকেই একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন ওই চারজনের সঙ্গে তাকে কেবিনে ভর্তি হতে বলা হয়। একটি কেবিনে গাদাগাদি করে পাঁচজন অবস্থান করলে সমস্যা হতে পারে জেনেও আলাদা কেবিন পাননি।
অগত্যা অভিমান করে তিনি বাসায় চলে যান। তার সহকর্মী নার্সরা জানান, ওই নার্সের বাসায় স্বামী ও পাঁচ বছরের একটি সন্তান রয়েছে। হাসপাতালে কেবিন না পেয়ে নিরুপায় হয়ে বাসায় চলে যাওয়ায় তিনি স্বামী ও সন্তানকে সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলেছেন।
জাগো নিউজের এ প্রতিবেদনের সঙ্গে আলাপকালে সরকারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একাধিক নার্স অভিযোগ করেন, সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিলেও তারা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
তারা জানান, ফ্রন্টলাইন ফাইটার হিসসেবে চিকিৎসকদের মতো তারাও রোগীদের শয্যাপাশে কাছাকাছি থেকে নিবিড়ভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পান, সে তুলনায় তারা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না।
নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুর্মিটোলা হাসপাতালে এ ও বি দুটি কেবিন ব্লক রয়েছে। প্রতিটিতে ২৫টি করে কেবিন রয়েছে। এ ব্লকের অধিকাংশ কেবিন চিকিৎসকদের দখলে। কিছু কেবিনে ভিআইপি করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি করা হয়। অন্যদিকে বি-ব্লকের ২৫টির মধ্যে ২২টি কেবিনে রোগী ভর্তি, দুটি কেবিনে নার্সদের পিপিই পরিধান ও ডিউটি শেষে পিপিই খুলে ফেলা দেয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। মাত্র একটি কেবিনে করোনা আক্রান্ত চারজন নার্স ভর্তি রয়েছেন।
করোনা আক্রান্ত দুইজন পুরুষ নার্সের একজন আনসার সদস্যের সঙ্গে এবং অপরজন একজন ডেন্টাল টেকনিশিয়ানের সঙ্গে একটি কক্ষে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নার্সদের প্রশ্ন, চিকিৎসকরা এতগুলো কেবিন দখল করে থাকলেও নার্সদের কেন একটি কেবিনে গাদাগাদি করে থাকতে হবে? কেন একজন নার্সকে হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি না হতে পেরে বাসায় ফিরে গিয়ে স্বামী ও শিশু সন্তানকে ঝুঁকিতে ফেলতে বাধ্য হতে হবে?
নার্সদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, ডিউটি করার সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর (পিপিই) সঙ্গে তাদের মাত্র এক জোড়া গ্লাভস দেয়া হয়। এই এক জোড়া গ্লাভস পরে টানা ১২ ঘণ্টা ডিউটিকালে রোগীদের সংস্পর্শে আসা ওষুধ, ইনজেকশন ও ফাইলপত্র লেখাসহ বিভিন্ন কাজ করতে হয়। যে হাত দিয়ে করোনা রোগীদের ধরেন, সে হাত দিয়েই পানির বোতল ধরে খাওয়ার ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়। নার্সদের ব্যবহৃত ফেস শিল্ড সরবরাহ করা হয়। অথচ চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে হ্যান্ড গ্লাভসসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সব কিছুই নতুন সরবরাহ করা হয়।
তারা জানান, হাসপাতাল থেকে যে এন৯৫ ও সার্জিক্যাল মাস্ক দেয়া হচ্ছে সেগুলোতে স্টোর থেকে হাসপাতালের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ (কেজিএস) লিখে দেয়া হচ্ছে। যারা হাতে এগুলো লিখে দিচ্ছে তারা জীবাণুমুক্ত কি-না তা নিশ্চিত না করে ব্যবহারের ফলে সংক্রমণের ভয়ে থাকতে হচ্ছে তারা।
নার্সদের বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এমইউ/এসআর/পিআর