‘রেড জোন’ হচ্ছে অর্ধশতাধিক এলাকা, চূড়ান্ত হতে পারে আজ
অডিও শুনুন
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের মাত্রা বেশি- এমন এলাকাগুলোকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করে সোমবার (১৫ জুন) তালিকা প্রকাশ হতে পারে। এই তালিকায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪৫টি ও চট্টগ্রামের ১০টি এলাকা থাকতে পারে বলে জানা গেছে।
রোববার (১৪ জুন) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে। আগে থেকেই বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের আধিক্য বিবেচনায় রেড জোন, ইয়েলো জোন ও গ্রিন জোনে চিহ্নিত করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাস্তবায়ন হবে স্বাস্থ্যবিধি ও আইনি পদক্ষেপ।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ও করোনা সংক্রান্ত মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মো. হাবিবুর রহমান খান জাগো নিউজকে বলেন, কোন এলাকাগুলো রেড জোন হবে তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। আজ-কালের মধ্যেই তালিকা প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, সংক্রামক ব্যাধি আইনে এ সংক্রান্ত তালিকা প্রকাশের ক্ষমতা স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে দেয়া আছে। তবে লকডাউন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।
ঢাকায় ৪৫টি স্থানকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন করা হবে বলা হচ্ছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘৪৫টি তো হতে পারে, কমও হতে পারে। চূড়ান্ত তালিকাটা হয়তো আগামীকালকে (সোমবার) প্রকাশ হতে পারে।’
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোথায় লকডাউন হবে তার তালিকা স্থানীয় প্রশাসন ঠিক করবে। কোন কোন স্থান লকডাউন করা হবে তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। কোথায় কোথায় লকডাউন হবে তা আমার বলারও সুযোগ নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতর এটা ঘোষণা করবে।’
জানা গেছে, করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি ঢাকার ৪৫টি এলাকাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে তা লকডাউনের সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৮টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭টি এলাকা রয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটির গুলশান, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রাজাবাজার, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গুলশান, উত্তরা, মিরপুরকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণার সুপারিশ করেছে টেকনিক্যাল কমিটি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে রেড জোনের জন্য সুপারিশকৃত এলাকার মধ্যে আছে- যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, পরীবাগ, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড ও সেগুনবাগিচা।
চট্টগ্রাম সিটির রেড জোনের মধ্যে থাকতে পারে- বন্দর এলাকার ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, পতেঙ্গার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড, পাহাড়তলীর ১০ নম্বর ওয়ার্ড, কোতোয়ালির ১৬, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড, খুলশীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড এবং হালিশহর এলাকার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড।
করোনা মোকাবিলায় ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে গত ৩১ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে অফিস খুলে দেয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হয় গণপরিবহনও। এই পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যেতে থাকায় ফের সাধারণ ছুটি ঘোষণার কথা বলা হচ্ছিল। কিন্তু এখন সেদিকে যাচ্ছে না সরকার। জোনভিত্তিক লকডাউনের মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চাইছেন কর্মকর্তারা।
বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়োলো ও একেবারে কম আক্রান্ত বা সংক্রমণমুক্ত এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। রেড জোনকে লকডাউন করা হবে, ইয়োলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও। লকডাউনের মেয়াদ হবে ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত।
গত ৯ জুন দিনগত রাত ১২টা থেকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকাকে পরীক্ষামূলকভাবে ‘রেড জোন’ হিসাবে লকডাউন করে স্বাস্থ্যগত ও আইনি পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১৪ দিনের জন্য এই লকডাউন কার্যকর করা হবে সেখানে।
আরএমএম/এইচএ/এমএস