লকডাউনের এখনও সুনির্দিষ্ট ম্যাপিং পায়নি সিটি করপোরেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৫ পিএম, ১৫ জুন ২০২০

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের আধিক্য বিবেচনায় রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে চিহ্নিত করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাস্তবায়ন হবে স্বাস্থ্যবিধি ও আইনি পদক্ষেপ, এমনটা আগে থেকেই বলা হচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি ঢাকার ৪৫টি এলাকাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে তা লকডাউনের সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৮টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭টি এলাকা রয়েছে।

তবে সুনির্দিষ্ট কোনো কার্যপরিধি, ম্যাপ ও নির্দেশ না পাওয়ায় লকডাউন কার্যকর করা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তারা বলছে, যেসব এলাকা লকডাউনের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে বা হচ্ছে সেসব এলাকার বিস্তারিত ম্যাপিং দিতে হবে। তা না হলে কোন এলাকার কতটুকু লকডাউনের আওতায় আনা হবে তা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হবে। তালিকায় শুধুমাত্র এলাকার নাম বলা হয়েছে।

জানা গেছে, সংক্রামক ব্যাধি আইনে এ সংক্রান্ত তালিকা প্রকাশের ক্ষমতা স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে দেয়া আছে। তবে লকডাউন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।

এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ৪৫টি এলাকা ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও লকডাউন কার্যকর করতে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পায়নি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অন্যদিকে লকডাউনের তালিকায় থাকা শুধু এলাকার নাম পেয়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। যে কারণে সুনির্দিষ্ট কোনো কার্যপরিধি, ম্যাপ ও নির্দেশ না পাওয়ায় লকডাউন কার্যকর করা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন।

ঢাকায় ৪৫টি স্থানকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন করা হবে বলা হচ্ছে? এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল রোববার জাগো নিউজকে বলেন, কোথায় লকডাউন হবে তার তালিকা স্থানীয় প্রশাসন ঠিক করবে। কোন কোন স্থান লকডাউন করা হবে তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। কোথায় কোথায় লকডাউন হবে তা আমার বলারও সুযোগ নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতর এটা ঘোষণা করবে।

জানা গেছে, লকডাউনের জন্য রেড জোন হিসেবে তালিকায় থাকা ঢাকা উত্তর সিটির এলাকাগুলোত মধ্যে রয়েছে- গুলশান, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রাজাবাজার, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গুলশান, উত্তরা, মিরপুরকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণার সুপারিশ করেছে টেকনিক্যাল কমিটি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে রেড জোনের জন্য সুপারিশকৃত এলাকার মধ্যে আছে- যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, পরীবাগ, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড ও সেগুনবাগিচা।

এদিকে আজ সোমবার (১৫ জুন) ডিএনসিসি নগর ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপকালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসির আওতাধীন যে ১৭টি এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, সেগুলোর সুনির্দিষ্ট ম্যাপিং পাওয়ার পর ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে লকডাউন কার্যকর করা যাবে। আমরা এখনও সুনির্দিষ্ট ম্যাপিং পাইনি। সামনে ১৭টি এলাকায় লকডাউন হতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি বলেছি যত দ্রুত আমাদের ম্যাপ দেয়া হবে তত দ্রুত ব্যবস্থা নেব। অনেক বড় বড় এলাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা চাচ্ছি যত কনফাইন করে আমাদের দেয়া যাবে তত আমাদের ম্যানেজ করতে সু্বিধা হবে। রেড জোনিং একটা হিউজ ম্যানেজমেন্ট। কাউন্সিলর, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে মিলে কিন্তু কাজ করতে হয়।

তিনি আরও বলেন, পূর্ব রাজাবাজারে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকও জোগাড় করতে হবে। আমি স্বাস্থ্য অধিদফতরকে বলেছি, আমাদের রিমার্কেশন করে দিতে হবে। কোন বাড়ি, কোন লেন, কোন মহল্লা বা কোন ওয়ার্ডে রেড জোন হবে তা রিমার্কেশন করে দিতে হবে। অসহায় যেসব পরিবার আছে তাদের তালিকা করতে হবে। যাদের পয়সা আছে, খাদ্য কিনতে পারবে তাদের জন্য ভ্যানের পরিকল্পনা করতে হবে।

আতিকুল ইসলাম বলেন, যে ১৭ ওয়ার্ড লকডাউন করা হবে সে বিষয়ে খবর পেয়েছি। কিন্তু আমরা ওই প্রজ্ঞাপন চাচ্ছি কীভাবে কোথায় এটা করব সেটি চিহ্নিত করে দিতে হবে। ম্যাপিং হাতে আসলে টেলিভিশনে স্ক্রল প্রচার, স্থানীয় মসজিদে মাইকিং, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নিয়ে কাজ করতে হবে, নমুনা সংগ্রহের বুথ খুলতে হবে, হোম কোয়ারেন্টাইন-আইসোলেশন কেন্দ্র ও টেলিমেডিসিন সেবা কোন জায়গা থেকে দেব সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। লকডাউন এলাকায় মৃতদেহ সৎকার, রোগী পরিবহন, হাসপাতাল-মুদি দোকান-ফার্মেসি-রেস্তোরাঁ চায়ের দোকান-বাজারের কী অ্যাকশন হবে তা ঠিক করা হয়েছে। আমাদের ম্যাপিং দিলে সর্বোচ্চ ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে লকডাউন করতে পারব।

অন্যদিকে গতকাল রোববার রাজধানীর সিপাহীবাগ এলাকার ঝিলে মাছ অবমুক্ত অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, প্রজ্ঞাপন ও তাতে যে বিধি রয়েছে, আমরা সেগুলো পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এলাকার কাউন্সিলর, সংসদ সদস্য এবং অন্যান্য সবার সঙ্গে মতবিনিময় করে ব্যবস্থা নেবো। মানুষকে আমরা যদি ১৪ থেকে ২১ দিন নিজ ঘরে রাখতে পারি, তাহলে সংক্রমণটা স্তিমিত করতে পারবো। কারণ সংক্রমণ যখন বেড়ে যায়, তখন হু হু করে বাড়তে থাকে। এটাকে যদি কিছুটা হলেও স্তিমিত করা যায়, তাহলে এর কার্যকারিতা ধীরে ধীরে কমে যায়।

এএস/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।