সুপারিশমালা নিয়ে চারটি প্রতিবেদন দিচ্ছেন চীনের বিশেষজ্ঞরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৭ পিএম, ২১ জুন ২০২০

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য সুপারিশসহ পৃথক চারটি প্রতিবেদন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে ঢাকা সফররত চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল।

রোববার (২১ জুন) বিকেলে এক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ দলের পক্ষে এ কথা জানান ঢাকায় চীন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন হুয়ালং ইয়ান। ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিক্যাব) এই ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করে। এতে চীনের বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য ডা. শুমিং শিয়ানউ ও ডা. লিউহাইট্যাং অংশ নেন।

দুই সপ্তাহের সফর শেষে আগামীকাল সোমবার (২২ জুন) ১০ সদস্যের এই বিশেষজ্ঞ দল ঢাকা ছাড়বে। তবে চীনা দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদন চারটি হস্তান্তর করা হবে।

এই দলটি কাল চলে গেলেও বাংলাদেশের জন্য চীনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে হুয়ালং ইয়ান বলেন, দুই সপ্তাহের সফরে চীনা বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ঢাকা ছাড়ার আগে সোমবার (২২ জুন) তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর সুপারিশ তৈরি করে দূতাবাসের মাধ্যমে সরকারের কাছে প্রতিবেদন আকারে হস্তান্তর করা হবে। এক সপ্তাহের মধ্যেই চারটি প্রতিবেদন তারা বাংলাদেশ সরকারকে দেবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে চীনের উদাহরণ দিয়ে ইয়ান বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে লকডাউন অত্যন্ত কার্যকরী। হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনা ছড়ানোর ওই সময়টিতে চীনের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে গিয়েছিলেন। এমনকি সেখানে খাদ্যও পাঠানো হয়েছিল। বিনামূল্যে সেবাও দেয়া হয়েছিল।

এই প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে লকডাউন সুপারিশ করবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই। লকডাউন অত্যন্ত কার্যকরী।

তার মতে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে দেশের কোন অঞ্চলে করোনার সংক্রমণ বেশি তা চিহ্নিত করতে হবে। কোন কোন ফ্যাক্টরিতে এই রোগ ছড়াতে পারে তা খুঁজে বের করতে হবে।

প্লাজমা থেরাপি সম্পর্কে জাগো নিউজের এক প্রশ্নের জবাবে আলোচনা অনুষ্ঠানে চীনের বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা জানান, এটি কার্যকরী চিকিৎসা। তবে সব রোগীর ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যায় না। শুধু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা উচিত।

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে ইয়ান বলেন, সুখবর হলো চীনে পাচঁটি কোম্পানি ভ্যাকসিন তৈরি করছে। ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শেষ হলে তা প্রথম পাওয়ার তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ থাকবে।

করোনাভাইরাস আগামী ২ থেকে ৩ বছর থাকবে বলে সম্প্রতি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়ান বলেন, এটি আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। এটি নির্ণয় করার জন্য বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ দরকার।

চীনের বিশেষজ্ঞরা সবাইকে মাস্ক পরার বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে মাস্ক পরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য যে মাস্ক (এন৯৫) ব্যবহার করা হয়, সেটি ভিন্ন এবং অত্যন্ত উন্নতমানের। সেটি সাধারণ মানুষ যারা কোভিড-১৯ আক্রান্তদের সংস্পর্শে যান না, তাদের ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।

গ্লোভস ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত মন্তব্য ইয়ান বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা গ্লোভস ব্যবহার করেন, তারা অমনোযোগী হন এবং অনেক ক্ষেত্রে মুখে হাত দেন, যার মাধ্যমে দ্রুত রোগটি ছড়ায়।’

বাংলাদেশে সংক্রমণের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর পর্যবেক্ষণ জানিয়ে বিশেষজ্ঞ দলের পক্ষ থেকে হতাশা ব্যক্ত করে বলা হয়, করোনার মতো ছোঁয়াচে ভাইরাসের বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা খুবই কম। নমুনা পরীক্ষাও খুবই কম। তবে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা অনেক কম সত্ত্বেও তারা অসাধারণ কাজ করে যাচ্ছেন।

করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার জন্য চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলটি গত ৮ জুন ঢাকায় আসে। ডা. লি ওয়েনশিউর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলে চিকিৎসক, নার্সসহ সংক্রামক ব্যাধি নিরোধ বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন।

বাংলাদেশ সফরকালে চীনের প্রতিনিধি দলটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের পরিদর্শন করে এবং মনোনীত হাসপাতাল, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার ও পরীক্ষাকরণ কেন্দ্রগুলোতে কাজ করে। তারা করোনাভাইরাস মহামারি নিয়েও আলোচনা করে এবং করোনা নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার জন্য নির্দেশনা ও প্রযুক্তিগত পরামর্শও দেয় বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের।

জেপি/এইচএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।