মাস্ক পরা বড় কষ্টের!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০৯ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২০

করোনাভাইরাস মহামারির প্রেক্ষিতে বাসার বাইরে সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে মাঠ প্রশাসনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরও ঘর থেকে বের হওয়া রাজধানীর একটি বড় অংশ মাস্ক পরছে না। মাস্ক পরা যেন তাদের কাছে কষ্টের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, কাকরাইল, পল্টন, সেগুনবাগিচা, মতিঝিল, ফকিরাপুল ও রাজারবাগ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি অঞ্চলেই অসংখ্য নারী-পুরুষ মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছে। এদের অনেকে দল বেঁধেও মাস্ক ছাড়া চলাচল করছে। অথচ মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি মাস্ক পরা অভ্যাসে পরিণত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার কথাও বলেছে সরকার।

এ বিষয়ে গত ১০ আগস্ট সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়েছে, সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এর মধ্যে দেখা গেছে, অনেক মানুষের মধ্যে সচেতনতাটা একটু কমে গেছে, সেটা আরও বাড়াতে হবে।

jagonews24

তিনি বলেন, এগুলো ক্যাম্পেইনে নিয়ে আসা এবং যথাসম্ভব যদি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যায় তাও করতে হবে। মাঠ প্রশাসনকেও বলে দিয়েছি যে, এনফোর্সমেন্টে যেতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পর ১০ দিন কেটে গেলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। আগের মতোই অসংখ্য নারী-পুরুষ মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছেন। এদের বড় অংশই রিকশাচালক, পোশাক শ্রমিক ও তরুণ-তরুণী।

কাকরাইলে বন্ধুদের সঙ্গে মাস্ক ছাড়াই ঘোরাঘুরি করছিলেন নীলিমা নামের এক তরুণী। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ মানুষই তো মাস্ক পরছে না। আমি একা মাস্ক পরলে কী হবে? তাছাড়া মাস্ক পরে থাকলে ঠিকমতো কথা বলা যায় না। কথাও স্পষ্ট শোনা যায় না। তাই মাস্ক পরিনি।

সরকার ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে। আপনি তো সরকারের এই নির্দেশ লঙ্ঘন করছেন? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সরকার তো নিয়ম করেছে। কতজন সেই নিয়ম মানে? এই দেখেন গাড়িগুলো কি ঠিকমতো আইন মেনে চলছে? মাস্ক পরা সরকার বাধ্যতামূলক করেছে, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করবে কে? কাউকে তো রাস্তায় মাস্ক পরার কথা বলতে শুনি না।

jagonews24

মতিঝিলে মাস্ক ছাড়া ঘোরাঘুরি করছিলেন ফিরোজ নামের এক যুবক। তিনি বলেন, আমার মাস্ক আছে। অফিসে রেখে এসেছি। সব সময় মাস্ক পরে থাকা বেশ কষ্টের। দম আটকে যাওয়ার মতো হয়। তাছাড়া আমার ঠান্ডা-কাশি নেই। তাই মাস্ক ছাড়া নিচে নেমেছি।

পল্টন এলাকার রিকশাচালক মালেক বলেন, মাস্ক পরে রিকশা চালানো যায় না। একটু রিকশা চালালেই মাস্ক ভিজে যায়। তাই মাস্ক পরিনি। তাছাড়া আমরা যে পরিশ্রম করি করোনাভাইরাস আমাদের কাছে ভিড়তে পারবে না। খোঁজ নিয়ে দেখেন যারা এসির মধ্যে থাকে করোনা তাদেরই হয়।

মালিবাগের রিকশাচালক কালাম বলেন, আমাকেই আপনার চোখে পড়লো! চারদিকে তাকিয়ে দেখেন কতো মানুষ মাস্ক ছাড়া চলাচল করছে। আসলে সব দোষ আমাদের মতো গরিব মানুষের। কিন্তু কেউ ভাবে না মাস্ক পরে একজন কীভাবে রিকশা চালাবে। মাস্ক পরে রিকশা চালানো যায় না। এ কারণে অধিকাংশ সময় রিকশাচালকদের মুখে মাস্ক দেখা যায় না।

এদিকে রিকশাচালকদের পাশাপাশি রিকশার যাত্রীদেরও মাস্ক ছাড়া চলাচল করতে দেখা গেছে। রিকশাচালক ও দুই যাত্রীর কারো মাস্ক নেই। মালিবাগের আবুল হোটেল এলাকায় এমন চিত্র দেখে কথা হয় জহিরুল ইসলাম নামের একজনের সঙ্গে।

jagonews24

তিনি বলেন, করোনার শুরুর দিকে অনেক কড়াকড়ি ছিল। তখন মাস্ক পরতাম। এখন তো সবকিছু শিথিল করে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে যার করোনা হবে তার মাস্ক না পরলেও হবে। তাই সব দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে দিয়েছি, যা হওয়ার হবে। তাছাড়া মাস্ক ছাড়া যেভাবে নিঃশ্বাস নেয়া যায়, মাস্ক পরে সেভাবে নেয়া যায় না। এসব কারণে মাস্ক পরছি না।

মাস্ক না পরার এমন অজুহাত দেখালেও যারা মাস্ক পরছেন তারা বলছেন ভিন্ন কথা। মতিঝিলে মাস্ক পরে চলাচল করা হাসেম বলেন, মাস্ক পরতে কোনো সমস্যা হয় না। বরং মাস্ক পরার কারণে নানা উপকার পাওয়া যায়। ধুলাবালি, গাড়ির ধোঁয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, মানুষ কেন যে মাস্ক পরে না বুঝতে পারি না। মাস্কবিহীন মানুষ দেখলে ভয় করে। একে তো মাস্ক পরে না, তার পাশাপাশি এরা মানুষের গা ঘেঁষে চলাচল করে। আসলে নিয়ম করলে হবে না। শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, তা না হলে বাঙালি ঠিক হবে না।

মাস্ক পরে রিকশা চালানো রবিউল বলেন, ‘আমি বাসার বাইরে সব সময় মাস্ক পরি। অন্যরা কী করলো তা নিয়ে ভাবি না। নিজের সচেতনতা নিজের কাছে। পেটের দায়ে রিকশা চালাই, তাই বলে আমার জীবনের দাম নেই তা তো না। একজন কোটিপতির জীবনের যে মূল্য, আমার জীবনের সে রকম মূল্য।’

এমএএস/এমএসএইচ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।