রিজেন্ট দুর্নীতিতে স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজির সম্পৃক্ততা পায়নি দুদক!
রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সাবেক স্বাস্থ্য মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সম্পৃক্ততা পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ফলে অনুসন্ধান শেষে দুদক রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। দুদক গঠিত তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিমের তদন্ত শেষে কমিশনের অনুমোদনক্রমে গত ২২ সেপ্টেম্বর (বুধবার) দুদক উপপরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. মো. আমিনুল হাসান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপপরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. মো. ইউনুস আলী, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. মো. শফিউর রহমান এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের গবেষণা কর্মকর্তা ডা. মো. দিদারুল ইসলাম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ‘আসামিগণ অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে লাইসেন্স নবায়নবিহীন বন্ধ রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর, মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং সম্পাদন ও সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমের ল্যাবে তিন হাজার ৯৩৯ জন কোভিড রোগীর নমুনা বিনামূল্যে পরীক্ষা করে অবৈধ পারিতোষিক বাবদ রোগীপ্রতি তিন হাজার ৫০০ টাকা হিসাবে মোট এক কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করে আত্মসাৎ এবং রিজেন্ট হাসপাতাল লি. ঢাকার জন্য চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের খাবার খরচ বরাদ্দের বিষয়ে এক কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকার মাসিক চাহিদা তুলে ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার উদ্যোগ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হলো।’
দুদকের অনুসন্ধানে সাবেক স্বাস্থ্য মহাপরিচালককে আসামি না করায় স্বাস্থ্য বিভাগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, তিনি নির্দোষ। ওই দুর্নীতির সঙ্গে তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল না। করোনার শুরু থেকে এটি নিয়ন্ত্রণে তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন। তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিপত্রে সই করেছেন। পরবর্তীতে রিজেন্ট হাসপাতালের সব কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের চার কর্মকর্তা। এ কারণেই তাকে আসামি করা হয়নি। তিনি স্বেচ্ছায় মহাপরিচালকের পদ ছেড়েছেন।
এছাড়া তিনি দুদকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সকল প্রকার ডকুমেন্ট দিয়েছেন। রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়মের সঙ্গে কোনোভাবেই তিনি জড়িত নন।
কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের অনেকেই সমালোচনা করে বলেছেন, রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় সাবেক স্বাস্থ্য মহাপরিচালক কিছুতেই দায় এড়াতে পারেন না। অধিদফতরের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে দুর্নীতির দায় তারও।
এমইউ/জেআইএম