সমূদ্রের নিচের জীববৈচিত্র্য হতে পারে আমাদের অর্থনীতির বড় শক্তি
![সমূদ্রের নিচের জীববৈচিত্র্য হতে পারে আমাদের অর্থনীতির বড় শক্তি](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/seminar-20200927221406.jpg)
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি বলেছেন, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ পূর্বক আমাদের পর্যটন করতে হবে। উন্নত সমৃদ্ধ এবং টেকসই বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কনসারভেশন ভ্যালুজ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো।
সামুদ্রিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে সরকার দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড এর ১ হাজার ৭ শত ৩৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া হিসেবে ঘোষণা করেছে। ফলে বিভিন্ন প্রজাতির বিপন্ন সামুদ্রিক ডলফিন, তিমি এবং হাঙ্গর এর সংরক্ষণ ও বংশ বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে। এছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপ সংলগ্ন ১ হাজার ৭শত ৪৩ বর্গ কি. মি. এলাকার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া হিসেবে ঘোষণা করার কার্যক্রম চলমান আছে। বঙ্গোপসাগরে জলজ সার্বিক জীববৈচিত্র্য বিশেষ করে ডলফিন সংরক্ষণের টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২০ উপলক্ষে সাগরের জীববৈচিত্র সংরক্ষণ নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠন ’সেভ আওয়ার সি’ আয়োজিত অনলাইন ওয়েবিনার ‘আন্ডারওয়াটার ন্যাচার এক্সিবিশন অ্যান্ড ডিসকাশন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সংযুক্ত থেকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সমূদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সেন্টমার্টিন দ্বীপ, কক্সবাজার-টেকনাফ সমুদ্র সৈকত এবং সুন্দরবনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করেছে। এসব এলাকায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমসহ পরিবেশ সংরক্ষণে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকার ঘোষিত ইসিএ যথাযথভাবে কার্যকরের মাধ্যমে এ সকল এলাকার জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
এছাড়া উপকূলের দূষণ প্রতিরোধে ৫২টি স্থানকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে দূষণ প্রতিরোধে কাজ করা হচ্ছে। সমূদ্রের বায়োডাইভার্সিটি এসেসমেন্টের জন্যও প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভবিষ্যতে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে যুগান্তকারী ১০০ বছরের ডেল্টা প্লান বাস্তবায়ন করছে। এই প্লান অনুযায়ী অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ড হবে। তবে আমাদেরকে কনসারভেশন ভ্যালুজ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো। পরিবেশ মতো সংরক্ষণ হলে প্রত্যেক কাঙ্খিত ফলাফল ভালো পাওয়া যায়। যার বাস্তব প্রমান ইলিশ সংরক্ষণ।
পর্যটন বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ পূর্বক আমাদের পর্যটন করতে হবে। সেভ আওয়ার সি’র উদ্যোগে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত দেশে এবং বিদেশে অবস্থানরত ডাইভারদের পানির নিচের সৌন্দর্যের স্টিল ও ভিডিও চিত্র প্রদর্শন নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবিদার। এর মাধ্যমে আমাদের দেশের ডাইভারদের স্কিল যেমন প্রদর্শন হচ্ছে, একই সঙ্গে তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের জলের তলের ট্যুরিজমের যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে তাও বিশ্বের দরবারে ছড়িয়ে পড়বে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনলাইন এক্সিবিশন ও ওয়েবিনারে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারি, অ্যাকুয়াকালচার এবং মেরিন সায়েন্স বিভাগের ডিন প্রফেসর ড. কাজী আহসান হাবিব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসলেম উদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রাকিব আহমদ পিএইচডি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিটাইম ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ রশিদুল হাসান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. দীনেশচন্দ্র সাহা এবং ব্লু ইকোনমি এর গবেষক ড. দিলরুবা চৌধুরী, অধ্যাপক ড. আবদুল মোমেন সিদ্দিকী, ড. আমিনুর রহমান, ড. মুস্তাফিজুর রহমান, সেভ আওয়ার সি’র ডিরেক্টর ও ওসেন এক্সপ্লোরার এসএম আতিকুর রহমান, মেরিন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি মাহমুদ সোহেল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ওয়েবিনারটি পরিচালনা করেন সমুদ্র সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন এবং অনুষ্ঠানের আয়োজক ‘সেভ আওয়ার সি’ এর সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক।
অনলাইন এক্সিবিশনে সাগরের জীববৈচিত্র সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিকারী সংগঠন ‘সেভ আওয়ার সি’ এর উদ্যোগে দেশে এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডুবুরিদের পানির নিচের সৌন্দর্যের স্থির ও ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে কক্সবার ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্ণেল (অবঃ) ফোরকান আহমেদ বলেন, কক্সবাজার এবং সেন্টমার্টিনের পরিবেশ উন্নয়নে যে পদক্ষেপ রয়েছে রয়েছে, সে সব পদক্ষেপগুলোকে কার্যকর করতে পারছি না। কক্সবাজার বলুন কিংবা সেন্টমার্টিন- এসব জায়গার পরিবেশ উন্নয়নে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
কক্সবাজারকে একটি আন্তর্জাতিক এবং উন্নত পর্যটন নগরি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মাস্টারপ্ল্যান করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা সে আলোকেই কাজ করে যাচ্ছি। কক্সবাজারে ৮ থেকে ৯টি পয়েন্ট রয়েছে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। আমাদেরকে এখন শুধু পরিবেশ আর পর্যটন নিয়ে এখানে আলাপ-আলোচনা করলেই হবে না, কার্যকরি ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমাদের প্রথম প্রত্যাশাই হলো যেন কক্সবাজারকে দেশি এবং বিদেশি পর্যটকের জন্য উপযোগি হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন কক্সবাজারকে আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, সিঙ্গাপুরের আদলে গড়ে তুলতে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির আদেশ দিয়েছেন আমাদেরকে। সে আলোকে এ নিয়ে আমরা যে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছি। সেটা একনেক থেকে পাশ হয়ে আসলেই আমরা অনেকদুর এগিয়ে যেতে পারবো। এ জন্য আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সব মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে কাজ করতে চাই। বিশেষজ্ঞদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা আমাদের সাথে থাকুন, সবাই একসাথে মিলে এই সুন্দর পর্যটনের জায়গাটিকে রক্ষা করি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাকিব আহমেদ পিএইচডি বলেন, বাংলাদেশে স্কুবা ডাইভিংয়ের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সবার সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক আছে, সবাইকেই চিনি। এসএম আতিকুর রহমান স্কুবা ডাইভিংয়ের বিষয়ে সবাইকে সহযোগিতা করেন । কিন্তু আমরা বাংলাদেশে সেভাবে স্কুবা ডাইভকে পপুলারাইজ করতে পারিনি। যে কারণে স্কুবা ডাইভ করতে আমাদেরকে বিদেশে যেতে হয়েছে। আমাদের দেশে পর্যটনের বিকাশ ঘটেছে। যদিও সেটা বায়োডাইভারসিটি বান্ধব নয় এখনও। যে ট্যুরিজম রয়েছে আমাদের, তার সঙ্গে আমরা স্কুবা ডাইভিংকে ইন্টিগ্রেট করতে পারিনি। আমাদের দেশে সেভাবে কোনো ইনস্টিটিউটও তৈরি করতে পারিনি। তবুও, ব্যক্তিগতভাবে আমি অনেককে ডাইভিং শিখিয়েছি।
সমূদ্রের পানির নিচের ট্যুরিজম হলে আমাদের পরিবেশ সম্পর্কেও জানা হবে। কারণ সারা বিশ্বের পরিবেশের বড় অংশেই হচ্ছে পানির নিচে। আমরা যদি পানির নিচের পরিবেশ সম্পর্কে না জানি, তাহলে জ্ঞানের বড় অংশই অজানা থেকে যাবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুসলেম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে আন্ডারওয়াটার টুরিজমের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ এটাকে ট্যুরিজমের সম্ভাবনা হিসেবে গণ্যই করা হয় না। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো আন্ডারওয়াটার ট্যুরিজমকে গণ্য করে থাকে বলেই তারা এই খাতকে অনেকদুর এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে। আমাদের দেশে পর্যটন অনেক বেড়েছে। তবে এসব পর্যটন হতে হবে পরিবেশ বান্ধব, ইকো ট্যুরিজম। একই সঙ্গে আমাদের সমূদ্রতলে যে সৌন্দর্য রয়েছে, সেগুলোকে তুলে ধরতে হবে জনগনের কাছে। এ জন্য স্কুবা ডাইভিং হতে পারে ভালো একটা উদ্যোগ। ব্যক্তিগতভাবে ডাইভিং অনেকেই করছে, এটাকে জাতীয়ভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হলে আলাদা ইনস্টিটিউট করতে হবে।
ড. দিনেশ চন্দ্র সাহা বলেন, আমরা এখানে যে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি, মাছ বা জীববৈচিত্র্য নিয়ে যে সব কথা বলছি, সবই পানির নিচের। আমি কাজ করছি সুন্দরবন এরিয়া নিয়ে। এখানে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড রয়েছে। যেখানে ডাইভারসিটি অনেক বেশি। এর কারণ কি? আমাদেরকে তো এটা খুঁজে বের করতে হবে। পশুর নদী সুন্দরবনে এসে দুই ভাগে ভাগ হয়েছে। এখানে যে সাবমেরিন ক্যানিয়ন তৈরি হয়েছে সেটা চলে গেছে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড পর্যন্ত। আমরা এখনও গবেষণা করছি পানির উপরিভাগ নিয়ে। কিছু স্যম্পল নিয়ে আসলাম, গবেষণা করে কিছু ডাটা প্রদর্শন করলাম, তাতে কিন্তু সমূদ্রতলে আমাদের যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে সেটা বের হয়ে আসবে না। আমাদেরকে কাজ করতে হবে আন্ডারওয়াটার লাইফ নিয়ে।
ব্লু ইকনোমি বিশেষজ্ঞ ড. দিলরুবা চৌধুরী বলেন, ‘সমূদ্র বিজয় করে আমরা বাংলাদেশের সমান আরেকটি সমূদ্রসীমা পেয়েছি। এই সমূদ্রসীমার মধ্যে আসলে কি রয়েছে আমরা তা এখনও পুরোপুরি জানি না। এটুকু জানি, কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে, ৫১১ প্রজাতির মাছ রয়েছে। আন্ডারওয়াটার পর্যটনকে যদি মূল পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত করতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে আরও অনেকদুর এগিয়ে নিতে পারবো।
সমূদ্রের নিচে এত বৈচিত্র্য রয়েছে যে, যা না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। সারা পৃথিবীতে শুধুমাত্র প্রবালকে কেন্দ্র করেই প্রতি বছর ৭ কোটি ট্রিপ পরিচালনা হচ্ছে। যার মূল্য ৩৬ বিলিয়ন ডলার। আমাদের যে বিশাল সমূদ্র সম্ভার এবং প্রবাল সম্পদ রয়েছে, তাতে এই বিশাল অর্থনীতির একটা অংশ হতে পারে বাংলাদেশও।
অধ্যাপক সৈয়দ রাশিদুল হাসান বলেন, আন্ডার ওয়াটার নেচার এবং এ নিয়ে যে ট্যুরিজম- একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বাংলাদেশ এখন ব্লু ইকনোমির যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। অথচ এ জন্য যেটা প্রয়োজন সেই পরিবেশ আমরা রক্ষা করতে পারছি না। বাংলাদেশ ট্যুরিজম সমৃদ্ধ একটি দেশ। জলে-স্থলে এত বেশি সম্ভাবনা রয়েছে, যা অকল্পনীয়। আমাদের ৭১০ কিলোমিটার কোস্টাল লাইন রয়েছে। অথচ, স্বল্প পরিমানে কোস্টাল লাইন ছাড়া বাকিটাতে পর্যটন কিংবা পর্যটককে দেখানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের সমূদ্রে রয়েছে সুবিশাল মৎস সম্পদ। এছাড়া নানা সমূদ্র সম্পদ। আমাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে। অর্থনীতি এবং মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য সমূদ্রের কাছেই যেতে হবে।
ড. আবদুল মোমেন সিদ্দিকী বলেন, পৃথিবীদে সমূদ্র সম্পদ কিংবা ব্লু ইকনোমি নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। মেরিন ট্যুরিজম এখন আমাদের একটা সম্পদ। পৃথিবীতে যদি প্রতিদিন ২৫০ বিলিয়ন ব্যারেল তেল পোড়ানো হয় এবং তাতে করে যে শক্তি উৎপন্ন হবে, তা শুধুমাত্র সূর্য থেকেই সমূদ্র গ্রহণ করছে। আর পৃথিবীতে প্রতিদিন প্রয়োজন হয় মাত্র ৮০ বিলিয়ন ব্যারেল ফুয়েল পোড়ানোর শক্তি। তাহলে সমূদ্র থেকে কিভাবে আমাদেরকে এনার্জি বা শক্তি আহরণ করা যাবে, সেটা জানতে হবে। আন্ডারওয়াটারে টারবাইন বা সে ধরনের ডিভাইস স্থাপন করে এনার্জি উৎপাদন সম্ভব। তাতে করে এই যে তেলের জন্য এত হানাহানি, যুদ্ধ-সংঘাত - এসবের আর কিছুই থাকবে না।
আমাদের সমূদ্রসৈকতে গেলে এখন আর সাদা চামড়ার মানুষ দেখা যায় না। অথচ কক্সবাজারে এখন প্রচুর পর্যটক। সবাই দেশীয়। এটা একদিকে ভালোদিক, দেশের মানুষ পর্যটন বান্ধব হচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এত বিপুল পরিমাণ পর্যটক কিন্তু পরিবেশের জন্যও হুমকি।
ইনানি থেকে কলাতলি পর্যন্ত আমরা ৩০ কিলোমিটারের নানা স্যাম্পল সংগ্রহ করে দেখেছি সেখানে প্রচুর মাইক্রো প্লাস্টিক রয়েছে। যা আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এজন্য এখন আমাদের ম্যানেজমেন্ট পলিসি ঠিক করতে হবে। আমাদেরকে আন্ডারওয়াটার ট্যুরিজমের পয়েন্ট ঠিক করতে হবে, যাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করে এই ট্যুরিজম করা সম্ভব হয়।
অধ্যাপক ড. আহসান হাবিব বলেন, সমূদ্র ট্যুরিজমকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের দেশে তিন ধরনের ইকোলজিক্যাল সিস্টেম গড়ে উঠেছে। একটি টেকনাফ, কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম এলাকা, দ্বিতীয়টি মেঘনা নদীর অবাহিকা অঞ্চল থেকে শুরু করে পটুয়াখালি, ভোলা-বরগুনা পর্যন্ত একটা এলাকা এবং মোঙলা সমূদ্রবন্দর থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত একটা এলাকা। এই তিনটা পয়েন্টকে ঘিরেই কিন্তু আমরা সুন্দর ইকো ট্যুরিজম গড়ে তুলতে পারি। সে জন্য সবার আগে আমাদেরকে জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে কাজ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
সমূদ্র বিশেষজ্ঞ এসএম আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিশাল কোস্টাল লাইন রয়েছে। কিন্তু কোস্টাল লাইনে ম্যানগ্রোভ নেই, রিফ মসৃণ নয়। যে কারণে ট্যুরিস্টদের আকর্ষণ করার মতও ভালো কিছু তৈরি হচ্ছে না। আমি এর আগে বেশ কয়েকবার সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিলাম, আমাদের সমূদ্রসীমায় স্কুবা ডাইভিংয়ের জন্য পয়েন্ট সিলেক্ট করে সেগুলো বিদেশি জার্নালে প্রকাশ করার জন্য। যাতে করে বিদেশী পর্যটকরা এ সম্পর্কে জানতে পারে এবং তারা এখানে ডাইবিং করার জন্য ছুটে আসে। কিন্তু সে সব আসলে আমলে নেয়ার মত কোথাও কেউ নেই। এখন শুনছি সরকার মাস্টারপ্ল্যান করছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, মেরিন ট্যুরিজম কিংবা আন্ডারওয়াটার নিয়ে যারা কাজ করে তাদের সঙ্গে সরকারের কেউ যোগাযোগ করেনি। তাহলে কোন মাস্টারকে দিয়ে তারা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছে বলে তিনি প্রশ্ন রাখেন।
আইএইচএস/পিআর