দখল হচ্ছে বসতভিটা, করোনার অজুহাতে থানায় ঘেঁষতে দেয় না পুলিশ
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ভাইয়ের বিরুদ্ধে বসতভিটাসহ প্রায় পাঁচ একর জমি ও বাগান জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এ কাজে দখলদারদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
বসতভিটা ও জমি দখলের অভিযোগে মামলা করতে গেলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা ‘করোনায় আক্রান্ত’ বলে থানা থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগও উঠেছে রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
বুধবার (১৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা মো. বেলায়েত আলী (৬০) ও তার পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভুক্তভোগী বেলায়েত আলীর সঙ্গে তার প্রতিবেশী ছায়েরা বেগমের (৩৫) সঙ্গে দীর্ঘ আট বছর ধরে বিভিন্ন কারণে মামলা মোকদ্দমা ও বিচার-সালিস চলছে। গত ১১ অক্টোবর ছায়েরা বেগমের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতার’ সুযোগে হোসনাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জালাল উদ্দিনের ভাই ফরিদ উদ্দিন বেলায়েত আলীর পরিবারকে মারধর করে বসতভিটা দখলে নেন। ওই দিনের হামলায় ৪০ দিনের শিশুসহ বেলায়েত আলীর পরিবার ও প্রতিবেশীদের অনেকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন। এ কারণে গত তিনদিন ধরে বসতভিটা হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় দিন পার করছে পরিবারটি।
এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় রাঙ্গুনিয়া থানায় গেলেও তাদের থানা চত্বরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পরিবারের সবাই ‘করোনা রোগী’ দাবি করে তাদের থানা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বেলায়েত আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘তার প্রতিবেশী ছায়েরা বেগম ২০১২ সালে তার এক আত্মীয়কে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। টাকা দেয়ার সময় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রাখায় ওই ঘটনার পর থেকে তার সঙ্গে ছায়েরা বেগমের বিরোধ চলছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ছায়েরা বেগমের সঙ্গে ‘বিশেষ ঘনিষ্ঠতা’র কারণে হোসনাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জালাল উদ্দিনের ভাই ফরিদ উদ্দিন বেলায়েত আলীর পরিবারের সঙ্গে বিরোধে জড়ান ও বিভিন্ন সময় হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও ফরিদ উদ্দিন রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে বেলায়েত আলীকে কোণঠাসা করে রাখেন।
সর্বশেষ গত ৯ অক্টোবর ছায়েরা বেগম ও ফরিদ উদ্দিন তার সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে বেলায়েত আলীর পরিবারের ওপর হামলা চালায়। তিনদিন ধরে চলা সংঘর্ষের এক পয়ায়ে ১১ অক্টোবর ফরিদ উদ্দিনরা বেলায়েত আলীর পরিবারকে তাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করে আশপাশের জমি-বাগানসহ প্রায় পাঁচ একর জায়গা দখলে নিয়ে নেন।
বেলায়েত আলী বলেন, ‘১১ তারিখ থেকে আমি পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। ওরা আমার বাড়িঘর দখলে নিয়েছে। বাগানের অনেক গাছ কেটে নিয়ে গেছে।’
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আমি এ ঘটনা জানাতে থানায় গেলে আমাকে থানায় ঢুকতে দেয়া হয়নি। প্রথমে আমাদের গ্রেফতাদের ভয় দেখানো হয়, পরে বলে, আমাদের নাকি করোনা আছে। এই বলে থানা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। তাই উপায়ান্ত না দেখে আমি আজ সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছি।’
বেলায়েত আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম বলেন, ‘২০-৩০ জন গুন্ডা নিয়ে আমার ঘর দখলে দিয়েছে ফরিদ ও নাছিমা। আমাকে, আমার ৪০ দিনের নাতিকে পর্যন্ত আঘাত করা হয়েছে। ঘরের রান্না করা খাবার ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়। অথচ পুলিশ বলে, আমাদের নাকি করোনা আছে!’
ওই দিনের হামলার ঘটনায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন বেলায়েত আলীর প্রতিবেশী হাসিনা আক্তার (২৫)।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা অনেক বছর ধরে একসঙ্গে বসবাস করছি। কিন্তু গত রোববার আমাদের আরেক প্রতিবেশী ছায়েরা বেগমে তার সহযোগী ফরিদকে নিয়ে বেলায়েত আলীর পরিবারের ওপর হামলা ও ভাঙচুর করে। এ সময় আমরা প্রতিবেশীরা কিছু বলার চেষ্টা করেছিলাম। তাই আমার হাতে দা দিয়ে কোপ দেয়া হয়। অথচ পুলিশ মামলা নেয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ স্থাপন করা যায়নি।
আবু আজাদ/এসআর/এমকেএইচ