‘৪ হাজার টাকা দিলে চার ঘণ্টায় করোনা রিপোর্ট পাইয়ে দেব’

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:৪৫ পিএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০২০
ফাইল ছবি

রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক আবদুল মালেক (ছদ্মনাম)। এক সপ্তাহ ধরে পেটের টিউমারে আক্রান্ত মাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ করছেন। সপ্তাহখানেক আগেই আউটডোরে টিকিট কেটে চিকিৎসককে দেখানোর পর রোগীর টিউমারের বায়োপসি করার পরামর্শ দেন এবং বায়োপসি রিপোর্ট ছাড়া রোগী ভর্তি করা হবে না বলে জানানো হয়। কষ্টে করে টাকা জোগাড় করে বায়োপসি রিপোর্ট করে ৫ ডিসেম্বর (শনিবার) মাকে ওয়ার্ডে ভর্তি করান।

রোববার সকাল থেকে মায়ের অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। অস্ত্রোপচারের আগে চিকিৎসকরা তার মা করোনায় আক্রান্ত কি-না তা জানতে সরকারি ল্যাবরেটরি থেকে করোনা টেস্ট করতে বলেন। ল্যাবরেটরিতে গিয়ে শুনতে পান করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে সময় লাগবে সাতদিন। ল্যাবরেটরি থেকে বেরিয়ে আসতেই উপস্থিত এক ব্যক্তি আবদুল মালেককে ডেকে বলেন, ‘আপনার মায়ের অপারেশন করোনা রিপোর্ট ছাড়া হবে না, দেরিও করা যাবে না, আপনি এক কাজ করতে পারেন, চার হাজার টাকা দিলে আমি ল্যাব থেকে চার ঘণ্টায় রিপোর্ট পাইয়ে দেব। আমার জ্যাক আছে।’

মায়ের অস্ত্রোপচারে বিলম্ব হতে পারে এবং এ কারণে মায়ের মৃত্যু হতে পারে এমন আশঙ্কায় নিরূপায় হয়ে ৪ হাজার টাকায়ই দ্রুত পরীক্ষা করাতে রাজি হন তিনি।

রোববার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাড়িচালক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘গরিব হতে পারি কিন্তু চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় মরতে দিতে পারি না। ঋণ করে হলেও মায়ের চিকিৎসার জন্য শেষ চেষ্টা করে দেখি। সরকারি হাসপাতালে কী কৌশলেই না গরিব মানুষের টাকা লুটে নেয়া হচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই নয়, একশ্রেণির দালালচক্র রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগীদের স্বজনদের জিম্মি করে ১০০ টাকার পরীক্ষার ফিতে চার হাজার টাকা আদায় করছে। ১০০ টাকায় পরীক্ষা করালে রিপোর্ট পেতে সাতদিন লেগে যাবে এমনটা বলে কয়েক ঘণ্টায় রিপোর্ট পাইয়ে দিতে চার হাজার টাকা লাগবে বলে প্রস্তাব দেয়। দালালচক্রের সঙ্গে ল্যাবরেটরিতে কর্মরত কতিপয় টেকনিশিয়ানের যোগসাজশ রয়েছে।

সরকারি সব ল্যাবরেটরিতে রোগীদের সুবিধার্থে করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) শনাক্তে নমুনা পরীক্ষার ফি ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০ টাকা করলেও সে সুবিধা পাচ্ছেন না মুমূর্ষু রোগীর স্বজনরা। তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির দালালচক্র মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অত্যন্ত সুকৌশলে এ দুর্নীতি হওয়ায় তা জনসন্মুখে প্রকাশ হচ্ছে না।

এমইউ/জেএইচ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।