‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, প্যারাসিটামলও খেতে হয়নি’
অডিও শুনুন
‘দুজনেই একসঙ্গে করোনা ভ্যাকসিন নিয়েছি। ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পরও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। একটা প্যারাসিটামল ট্যাবলেটও খেতে হয়নি। লকডাউনেও প্রতিদিন কাজ করতে হয়েছে। তাই অধীর আগ্রহে এ ভ্যাকসিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। যখন ভ্যাকসিন আসার সংবাদ পাই তখনই আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে ভ্যাকসিনটি নেবো। ভ্যাকসিন নিয়ে নানা নেতিবাচক কথাবার্তা থাকায় আমরা এগিয়ে এসেছি। আমাদের দেখে যেন সাধারণ মানুষ ভরসা পায় যে, ভ্যাকসিনটি নিরাপদ।’
দেশের প্রথম চিকিৎসক দম্পতি হিসেবে করোনার টিকা নেয়ার পর শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই ভ্যাকসিন নেয়ার পর শারীরিক অবস্থা ও ভ্যাকসিন নেয়ার পূর্ব সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা।
ডা. মোস্তফা জামান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক। তার স্ত্রী ডা. কানিজ ফাতেমা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বিএসএমএমইউ’র টিকাদান কেন্দ্রে তারা টিকা গ্রহণ করেন। টিকা নেয়ার ২৪ ঘণ্টা পরও তারা দুজনই সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন।
অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামান বলেন, ২০২০ সাল অর্থাৎ গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। তারপর থেকে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের জীবন ও জীবিকা বদলে গেছে। মানুষের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ও মৃত্যুভীতি ছিল। করোনার কারণে অনেকেই স্বজন হারিয়েছেন। ঝুঁকি থাকলেও চিকিৎসক হিসেবে আমরা দুজনেই কাজ করেছি।
বিএসএমএমইউ’র এই চিকিৎসক বললেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা মনে-প্রাণে আশা করছিলাম যেন ভ্যাকসিন আমাদের দেশে আসে। কিন্তু যখন ভ্যাকসিন আসার একটা আলো দেখেছি তখনই নানা ধরনের বিভ্রান্তি ও গুজব রটনা শুরু হয়। কেউ কেউ বিজ্ঞানভিত্তিক আচরণও করছিল না। কথাবার্তায়ও বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য ছিল না। তখনই আমরা সিদ্ধান্ত নিই ভ্যাকসিন আসলে আমরা আগে নেবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা যেহেতু সমাজের এমন একটি অংশ যাদের ভ্যাকসিন নেয়া দেখে সাধারণ মানুষ ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী হবেন ও ভরসা পাবেন। অন্যান্য ভ্যাকসিন আসতে পাঁচ থেকে ১০ বছর সময় লাগলেও এ করোনার ভ্যাকসিন ১০ মাসের মধ্যে এসেছে। অনেকের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। তাদের ভীতি দূর করতেই যত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থাকুক সবার আগে ভ্যাকসিন নিতে চেয়েছি। বিএসএমএমইউতে রেজিস্ট্রেশন করি ও ভ্যাকসিন নিই।
তার স্ত্রী ডা. কানিজ ফাতেমা বললেন, তাদের দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে বাবা-মায়ের ভ্যাকসিন নেয়ার বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। তবে ছোট ছেলে ভালবাসার টান কিংবা বয়স অল্প হওয়াতে প্রশ্ন করেছে, কেন বাবা-মা একসঙ্গে ভ্যাকসিন নিচ্ছে। একজন আগে ভ্যাকসিন নিয়ে দেখে-শুনে পরে অন্যজন নিতে পারতেন। তবে সার্বিক প্রেক্ষাপট বুঝিয়ে বলার পর সে-ও খুশি মনে বাবা-মাকে ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহ দেয়।
এমইউ/এমআরআর/জেআইএম