যুক্তরাজ্যফেরত যাত্রীদের ২৪ হোটেলের ১৭টিতেই ঢিলেঢালা মনিটরিং!
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যুক্তরাজ্যফেরত যাত্রীদের রাজধানীর ২৪টি তালিকাভুক্ত আবাসিক হোটেলে সাতদিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে।
কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা নিষেধ থাকলেও তালিকাভুক্ত ২৪টির মধ্যে ১৭টি হোটেলেই নেই পুলিশি মনিটরিং। ঢিলেঢালা মনিটরিংয়ের ফলে যুক্তরাজ্যফেরত যাত্রীদের সঙ্গে তাদের স্বজনরা হোটেলে গিয়ে দেখা করছেন, সেখানে অবস্থান করছেন। এর ফলে স্বজনদের মাধ্যমে সংক্রমণের হার বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, শুরুর দিকে যে সাতটি আবাসিক হোটেলকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলোতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে একজন করে পুলিশ সদস্য যুক্তরাজ্যফেরত যাত্রীদের উপর নজর রাখছেন। হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোয়ারেন্টাইনে থাকা যাত্রীদের রুম নম্বর জেনে নিয়ে তারা যেন কোনভাবেই অবাধে মেলামেশা না করে নিজ কক্ষে কোয়ারেন্টাইন থাকেন সেদিকে নজর রাখা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে যে আরও ১৭টি হোটেল কোয়ারেন্টাইনের জন্য তালিকাভুক্ত হয়, সে ১৭টির একটিতেও পুলিশি প্রহরা নেই।
কর্মকর্তারা জানান, বিমানবন্দর পূর্ব ও পশ্চিম এবং উত্তরা ও বনানী এ চারটি থানা এলাকাতে তালিকাভুক্ত যে ২৪টি আবাসিক হোটেল রয়েছে সেগুলোতে পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নজরদারি বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৯ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক সভায় ২৪টি হোটেলের প্রত্যেকটিতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টার জন্য পুলিশি প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়। হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রতিদিনের যুক্তরাজ্যফেরত যাত্রীদের নামের তালিকা সংগ্রহ করা এবং সিভিল সার্জন ও ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক কার্যালয় থেকে একাধিক চিকিৎসকের মাধ্যমে দল গঠন করে হোটেলগুলোতে আকস্মিক পরিদর্শনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। দু’ একদিনের মধ্যে লিখিত আকারে নির্দেশনা জারি হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা আরও জানান, যুক্তরাজ্যফেরত কয়েকজন যাত্রীর নমুনা সে দেশের করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন ‘এন৫০১ওয়াই’ পাওয়ার ফলে তাদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যাপারে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাজ্যের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন স্ট্রেইন এন৫০১ওয়াই-এর সংক্রমণের তীব্রতা অন্যান্য স্ট্রেইনের চেয়ে বহু গুণ বেশি। ফলে যুক্তরাজ্যফেরত কোয়ারেন্টাইনে থাকা যাত্রীদের মাধ্যমে কেউ সংক্রমিত হলে তা দ্রুতহারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়ে যায়।
এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের বাড়ছে। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে নমুনা পরীক্ষায় করোনায় নতুন শনাক্তকৃত রোগীর শতকরা হার দুই থেকে আড়াই শতাংশ ছিল, বর্তমানে তা পাঁচের ওপরে চলে গেছে। রাজধানীসহ সারাদেশে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অর্থাৎ নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, মুখে মাস্ক পরিধান করা ও নিয়মিত হাত ধৌত করার ব্যাপারে উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে।
গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক সেমিনারে বলেছেন, মানুষের উদাসীনতার কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মানুষ পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যাচ্ছে। তিনি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, যুক্তরাজ্যফেরত যাত্রীদের মনিটরিং আরও জোরদার করা হচ্ছে। প্রতিটি হোটেলে কত যাত্রী থাকছে সে তালিকা নিয়মিত সংগ্রহ করা, যাত্রীদের কক্ষে কেউ যাচ্ছে কিনা তা দেখতে প্রতি হোটেলে পুলিশি নজরদারি করা এবং আকস্মিক পরিদর্শনের মাধ্যমে সার্বিক কোয়ারেন্টাইন কার্যক্রম মনিটরিং করা হবে বলে তিনি জানান।
এসইউ/জেডএইচ/এমকেএইচ