করোনা পজিটিভ হয়েও বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা শতাধিক যুবকের!
করোনা পজিটিভ সনদ নিয়েও স্বপ্নের দেশে যাওয়ার অপচেষ্টা করছেন এক শ্রেণির যুবকরা। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত শতাধিক বিদেশ গমনেচ্ছু তরুণকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
তাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন তরুণ করোনা পজিটিভ সনদ নিয়ে দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দেয়ার অপচেষ্টা করছিলেন। সরকার অনুমোদিত ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা না করা কিম্বা সরকারের বেধে দেয়া ৭২ ঘণ্টার কয়েকদিন আগেই আগাম করোনা নেগেটিভ সনদ প্রদর্শনের কারণে আরও ৮২ জন যুবককে অফলোড করা হয়।
করোনা পজিটিভ নিয়ে বিদেশ যাত্রার অপচেষ্টাকারী যুবকদের সকলকেই সরকারি কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। পাশাপাশি কয়েক যুবককে ডিজিটাল জালিয়াতি করে করোনা পজিটিভ রিপোর্টকে নেগেটিভ রিপোর্ট হিসেবে তৈরি করার অপরাধে আর্থিক জরিমানাও করা হয়।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ এ সব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর তরুণরা বিশেষ করে গ্রামের অল্পশিক্ষিত তরুণরা করোনা পজিটিভ প্রতিবেদন নিয়ে বিমানবন্দরে হাজির হয়ে যাচ্ছেন। তারা মনে করছেন, পরীক্ষা করিয়ে একটি সনদ পেলেই আর কোনো ঝামেলা নেই। পজিটিভ সনদ নিয়ে কেন যাচ্ছেন এমন প্রশ্নে তারা হতবাক হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার যেতে পারবেন না শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাদের একটাই কথা যেকোনো মূল্যে তারা বিদেশে যাবেন। টাকা-পয়সা রোজগার করবেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই কর্মকর্তা জানান, গত দেড় মাসেরও কম সময়ে বিদেশ গমনেচ্ছু যে ৮২ জনকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই সরকার অনুমোদিত আরটিপিসিআর ল্যাবরেটরি থেকে করোনার নমুনা পরীক্ষা করাননি। এক শ্রেণির দালালের মাধ্যমে তারা কম টাকায় অনুমোদিত নয় এমন ল্যাবরেটরি থেকে করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে উপস্থিত হন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুসারে ফ্লাইটের ৭২ ঘণ্টা আগে করোনা নেগেটিভ সনদ সঙ্গে রাখার কথা বলা হলেও কেউ কেউ আগাম ৪/৫দিন আগে পরীক্ষা ও রিপোর্ট নিয়ে আসছেন। ফলে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ডা. সাজ্জাদ বলেন, বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা বিদেশ থেকে আগত ও বিদেশে যারা যাচ্ছেন তাদের প্রত্যেকের করোনা নেগেটিভ সনদ পরীক্ষা করে সব ঠিকঠাক থাকলে তবেই একজন যাত্রীকে দেশে প্রবেশ কিংবা বিদেশে যেতে দেয়া হচ্ছে।
গত ৮ মার্চ বিমানবন্দরে কর্মরত এক এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট তার ফেসবুক পেজে দেয়া একটি স্ট্যাটাসে বলেন, এখন কোভিড টেস্ট করানোর পর যাদের রেজাল্ট পজিটিভ আসে তাদেরকে প্রদত্ত সনদটি প্রিন্ট করলে রেজাল্টের ঘরে লাল বর্ডারের বক্সের ভেতর মোটা অক্ষরে পজিটিভ লেখা দেখা যায়। স্বল্পশিক্ষিত একজন মানুষও সনদটি হাতে নিয়ে একবার চোখ বুলালেই বুঝতে পারবেন যে সনদের বাহক করোনা পজিটিভ! এরপরেও এরকম সনদ হাতে নিয়ে গতরাতে একজন এবং আজ সকালে আরও একজন যাত্রী বিদেশ যাওয়ার আশায় বিমানবন্দরে চলে এসেছেন।
ওই ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেন, তাদের মধ্যে একজন দুবাইগামী তরুণকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ঢাকায় যদি কেউ আপনাকে না আটকাতো এবং দুবাই পৌঁছে ওই দেশের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের হাতে যদি আপনি এই করোনা পজিটিভ সনদটি তুলে দিতেন তখন ওরা কী করতো? এ প্রশ্নের জবাব তার জানা নেই। তার জানার কোনো ইচ্ছাও নেই। কোনো মতে স্বপ্নের দেশে পৌঁছাতে পারলেই হলো।
এ যাত্রী এবং গত রাতের যাত্রী উভয়কেই পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ম্যাজিস্ট্রেট।
তিনি আরও বলেন, বিদেশগামী যাত্রীদের মনে রাখা প্রয়োজন যে, তাদের কোভিড টেস্টের সনদ বিমানবন্দরে যথাযথভাবে যাচাই করা হবে। কম্পিউটারের কোনো কুতুবকে দিয়ে পজিটিভকে নেগেটিভ বানালেও লাভ নেই। ডিজিটাল জালিয়াতি করলেও লাভ নেই। ধরা পড়ে জরিমানা গুনতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশের ১৫টি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে বিদেশ গমনেচ্ছু যাত্রীদের নমুনা পরীক্ষা হয়। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার থেকে প্রায় ছয় হাজার যাত্রীর নমুনা পরীক্ষা হয়।
গত বছরের ৮ মার্চ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে বিদেশ গমনেচ্ছু ছয় লাখ ৬৯ হাজার ৩৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
এমইউ/জেডএইচ/এমকেএইচ