মহাখালী টার্মিনালেও যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়
করোনার সংক্রমণ রোধে ১৮ দফা নির্দেশনার পর আগামীকাল সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এ খবরে মানুষের মধ্যে রাজধানী ছাড়ার হিড়িক পড়েছে। এজন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
এ সময় দেখা গেছে, হাতে ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ফুটপাতে হাঁটছেন নানা পেশার মানুষ। তাদের লক্ষ্য গন্তব্যের বাসে ওঠা। লকডাউনের সময় কর্মহীন সময় কাটাতেই গ্রামের দিকে ছুটছেন তারা। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষেরা ঢাকা ছাড়ছেন। তবে বাস টার্মিনালে অনেক যাত্রী ও টিকিট কাউন্টারে অনেকের মুখের পরিবর্তে থুতনিতে মাস্ক দেখা যায়।
রোববার (৪ এপ্রিল) সরেজমিনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।
জানা গেছে, লকডাউনের ঘোষণা শোনার পরপরই কাউন্টারগুলোতে টিকিটপ্রত্যাশীরা যোগাযোগ শুরু করেন। অনেকে আবার সপরিবারে ভোরে টার্মিনালে এসে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে কাউন্টারগুলো থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে না। শুধু সরকারিভাবে যে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল তাই কাউন্টার থেকে নেয়া হচ্ছে।
এদিকে, যাত্রী ও অনেক টিকিট কাউন্টারে শ্রমিকদের মাস্ক থুতনিতে পরতে দেখা গেছে। শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের কাউন্টারে ভেতরেই টিকিট মাস্টারকে সিগারেট খেতেও দেখা যায়। যারা মাস্ক পরছেন না তাদেরকে মহাখালী বাস টার্মিনালের মাইক কন্ট্রোল রুম থেকে মাস্ক পরার জন্য বার বার অনুরোধ করা হচ্ছে।
ঢাকা ছাড়তে ঠাকুরগাঁওয়ে যাওয়ার টিকিট কিনেছেন কবির মাহমুদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে চাকরি চলে যায়। করোনার প্রকোপ কমলে ঢাকায় এসে হাড়ি-পাতিলের ব্যবসা শুরু করেছিলাম। এখন সাতদিনের লকডাউন আসছে। ঢাকায় বেকার বসে থাকতে হবে। আর লকডাউন যেহেতু বাড়তে পারে তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। ঢাকায় টাকা আয় করতে না পারলে নিজেরও খরচ চালাব কেমনে?
দিনমজুর ও ভ্যানচালক ইনসাফ মিয়া বলেন, করোনার এ সময়ে কাজ পাওয়া মুশকিল। লকডাউনের সময় প্রায় সবকিছু বন্ধ থাকবে। এতে আমাদের আয় ও রুটিরুজি হবে না। এজন্য গ্রামের বাড়ির দিকে চলছি।
তাবাসসুম অন্তরা নামের একজন যাত্রী চট্টগ্রামের টিকিট কিনেছেন। তিনি বলেন, লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য গ্রামের বাড়ি আগেই চলে যাচ্ছি। টিকিট পেতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে বাসের টিকিট মিলছে, তবে ভাড়া ৬০ শতাংশ ছাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে না।
এনা ট্রান্সপোর্টের কাউন্টার ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, যাত্রীদের চাপ সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঈদে যেমন মানুষ বাড়ি যায় ঠিক তেমনই দেখা যাচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
মাস্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রীকে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। আমরা সবাইকে বলে দিয়েছি আমাদের গাড়িতে যেতে হলে মাস্ক পরতে হবে। গাড়ির মধ্যেও মাস্ক না খোলার জন্য যাত্রীদের অনুরোধ করা হয়েছে।
একতা বাস কাউন্টার ম্যানেজার আফসার উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৪০ সিটের বাসে মাত্র ২০ জন করে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। তবে যাত্রীদের চাপ অনেক। আজকে শেষ দিন হওয়ায় সারাদিনই চাপ থাকবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে গাবতলী বাস টার্মিনালেও সকাল থেকে ঘরমুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। গতকাল শনিবার রাত থেকে বেড়েছে টিকিট বিক্রি। তবে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাসগুলো অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
টিটি/এএএইচ/এমএস