জীবন বাজি রেখেও বাসে ওঠার চেষ্টা
সরকার ঘোষিত সাত দিনের লকডাউনের প্রথম দিন (সোমবার) সকালে রাজধানীর বাসস্ট্যান্ডগুলোতে আগের মতোই যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। তবে অন্যান্য সব যানবাহন চলাচল করলেও যাত্রীবাহী বাস না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এর মাঝেই দুয়েকটি বাসে যাত্রী পরিবহন করায় জীবন বাজি রেখে সেগুলোতে সাধারণ মানুষকে উঠতে দেখা যায়।
যাত্রাবাড়ী ও এর আশপাশের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে সকাল থেকেই অন্যান্য দিনের মতো বিপুল সংখ্যক যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তারা মূলত বিভিন্ন স্থানে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষা করছিলেন। এর মাঝেই দুয়েকটি স্টাফ বাসে যাত্রী নিচ্ছিল। এমন বাস আসলেই যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন। কাউকে কাউকে জানালা দিয়ে লাফিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বাসে উঠতে দেখা যায়।
অপেক্ষারত যাত্রীরা বলছেন, সরকার লকডাউন দিলেও অফিস-কারখানা বন্ধ নয়। আবার ঢাকার মধ্যে চলাচল করা বাসগুলো বন্ধ রয়েছে। তাই তারা কর্মস্থলে যেতে পারছেন না।
গণপরিবহন না পেয়ে সকাল ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন যাত্রীরা। পরে অবশ্য পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
এই সড়ক দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়াও প্রাইভেট কার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ি এবং আন্তঃজেলা বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। সকালের দিকে এখানে যাত্রীরা সড়ক অবরোধ করলে দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল।
রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন শফিকুল ইসলাম। তিনি সায়েদাবাদ এলাকার একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী। তিনি বলেন, ‘সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা বুঝি না। এসব সিদ্ধান্তে আমাদের মতো গরিব মানুষের কষ্ট হয়। রাস্তার পাশের কিছু দোকান-মার্কেট ছাড়া সবই খোলা। কিন্তু আমরা কিভাবে কাজে যাব?’
সেখানেই অপেক্ষারত মতিঝিলের একটি ব্যাংকের কর্মী শামসুল ইসলাম বলেন, ‘কেমন লকডাউন বুঝলাম না। সব খোলা না থাকলে রাস্তায় এত মানুষ কেন? সব গাড়ি চলছে কিন্তু বাস নেই। সমস্যার সমাধান না হয়ে একের পর এক সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’
সাধারণ মানুষের অবস্থা বিবেচনা করে সরকারকে সিদ্ধান্ত নেয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।
লকডাউনের প্রথম দিন যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, শনির আখড়া, সায়েদাবাদসহ রাধানীর বিভিন্ন এলাকায় অফিসমুখী মানুষকে এভাবে সড়কে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
সচিবালয়ের ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন অফিস সহায়ক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমার বাড়ি মিরপুর, আমাকে অফিস করতে বলা হয়েছে। কিন্তু অফিস আমাকে কোনো গাড়ি সুবিধা দেয়নি। আমি মিরপুর থেকে ৩০০ টাকা খরচ করে অফিসে আসছি, আবার ৩০০ টাকা খরচ করে ফিরতে হবে। মাসে বেতন পাই ৯ হাজার টাকা। কিভাবে চলব?’
এর আগে লকডাউন ঘোষণা ও এই সময়ে পালনের জন্য ১১টি বিধি-নিষেধের কথা জানিয়ে রোববার (৪ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এতে বলা হয়, সকল প্রকার গণপরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা, জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না।
এছাড়া সব সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারবে। শিল্প-কারখানা ও নির্মাণ কার্যাদি চালু থাকবে। শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া করতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরএমএম/এমএইচআর/এমকেএইচ