তদবিরেও জুটছে না বেড, ফটকে করোনা রোগীরা

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:২২ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২১

অডিও শুনুন

দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু। ছাড়িয়ে যাচ্ছে আক্রান্তের রেকর্ড। ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ দূরের কথা, মিলছে না সাধারণ বেডও। অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরছেন স্বজনরা।

ঘুরে-ফিরে যখন বেড মিলছে না, তখন বাধ্য হয়ে কোনো হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিচ্ছেন তারা। নিজেরাই অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে রোগী দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। স্বজনরা রোগীর জন্য একটি বেডের আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা চাতক পাখির মতো দুঃসহ সময় পার করছেন।

jagonews24

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর সরকারিভাবে ডেডিকেটেড ঘোষিত করোনা হাসপাতালে গত সপ্তাহ থেকেই সব আইসিইউ বেড পূর্ণ। খালি নেই এখন করোনা ইউনিটের সাধারণ বেডও। কারও মৃত্যু কাম্য নয়, তবুও যেন কারও মৃত্যুর খবরে আইসিইউ বেড খালি হবে ভেবে অপেক্ষায় সময় পার করছেন রোগীর স্বজনরা।

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে করোনা ডেডিকেটেড ঢামেক হাসপাতাল-২ এর সামনে ঘুরে দেখা গেছে, করোনা উপসর্গ নিয়ে অসংখ্য রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের বাইরের বেঞ্চে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে যাচ্ছেন। তীব্র গরমে হাতপাখা দিয়ে স্বজনরা রোগীকে বাতাস করছেন। তবে অপেক্ষায় অপেক্ষায় বেলা গড়ালেও সবার ভাগ্যে জুটছে না কাঙ্ক্ষিত বেড।

jagonews24

হাসপাতালের সামনে অপেক্ষা করা এক রোগী ও তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসকদের দেখানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। হাসপাতালে আসার পর অনেক সময় আনসার সদস্যরা এসে অক্সিজেন লেভেল পরীক্ষা করে যাচ্ছেন। পরীক্ষার মেশিন বিকল থাকায় তারা দ্রুত মেশিন কিনে আনার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় মেশিন কিনতে পারছেন না অনেক রোগী।

হাসপাতালের সামনে তাদের একটু দূরেই একটি অ্যাম্বুলেন্সের বেডে একজন বৃদ্ধকে অক্সিজেন মাস্ক পরিহিত অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। পাশেই বিষন্ন মুখে বসে ছিলেন এক তরুণ। বারবার হাসপাতালের ভেতরে উঁকি দিয়ে কারও আসার অপেক্ষা করছিলেন।

jagonews24

এগিয়ে গিয়ে কথা বলে জানা গেল তরুণের নাম মেহেদি তালুকদার। এসেছেন বিক্রমপুর থেকে। তার বাবা মাঈনউদ্দিন তালুকদার গত চার-পাঁচদিন ধরে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। করোনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসায় তাকে ঢামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রেফার্ড করা হয়।

মেহেদী বলেন, ‘পরিচিত এক চিকিৎসকের রেফারেন্সে এখানে এলেও বাবাকে ভর্তি করতে পারিনি। প্রায় এক ঘণ্টা বসে আছি। ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন- বৃদ্ধকে ভর্তি করা হবে। তার জন্য বেড খোঁজ করা হচ্ছে। ফাঁকা পেলেই সেখানে ভর্তি করানো হবে।’

jagonews24

অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে থাকা মেহেদীর বাবার অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগানো রয়েছে। তবে তার শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত উঠানামা করছিল। এমন সময় ভেতর থেকে দৌড়ে এসে একজন জানালেন, তার বাবাকে এক চিকিৎসকের তদবিরে শেষ পর্যন্ত ভর্তির ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। এ কথা শুনেই কেঁদে ফেলেন মেহেদী ও তার করোনা আক্রান্ত বাবা।

এমইউ/এএএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।