কারও হাতে বাজারের ব্যাগ, কেউ ছুটছেন হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:০৮ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০২১

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এড়াতে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। ঘোষিত বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন চলছে। একদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন অন্যদিকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন আজ। এ কারণে রাজধানী ঢাকার রাস্তা আজ ফাঁকা।

গত দুই দিনের তুলনায় সড়কে মানুষ ও যানবাহনের চাপ না থাকায় মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও তাতে দেখা যায়নি কড়াকড়ির কোনো আভাস। আজ ঘর থেকে যারা বের হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে বাসায় ফিরছেন আবার কেউ জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে ছুটছেন। অন্যদিকে রেলওয়ে স্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলোতে ছিল সুনসান নীরবতা।

dhaka02.jpg

শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, গাবতলী, শ্যামলী, আসাদগেট, মিরপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ধানমন্ডি, পল্টন, যাত্রাবাড়ী ও মতিঝিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মোড়ে মোরে পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও তাতে নেই কড়াকড়ি। রাস্তায় কিছু মানুষ বের হলেও তাদের হাতে দেখা গেছে বাজারের ব্যাগ কিংবা হাসপাতালে ছুটছেন রোগী নিয়ে।

রাস্তায় বের হওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বিধিনিষেধের মধ্যেও যেসব অফিস খোলা ছিল সেগুলোও বন্ধ। তাই রাস্তায় গাড়ির চাপ কমেছে। অন্য দুইদিন অফিস খোলা থাকায় রাস্তায় গাড়ি ও মানুষ বেশি ছিল। এছাড়া করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় মানুষও খুব জরুরি কাজ বা বাজার-সদাইয়ের কাজ ছাড়া তেমন একটা বাসা থেকে বের হচ্ছেন না।

অন্যদিকে রাস্তায় মানুষের চাপ কম থাকায় আজ চেকপোস্টেও তেমন ব্যস্ততা দেখা যায়নি। দু-একজন যাত্রী চেকপোস্ট দিয়ে মাঝে মধ্যে যাচ্ছেন, তাদের মুভমেন্ট পাস আছে কি-না চেক করতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।

dhaka02.jpg

রাজধানীর ধানমন্ডির-১৫ নম্বরে বাজারের ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ইকরামুল হাসান নামের একজন জাগো নিউজকে বলেন, আজ রাস্তাঘাটে মানুষ কম। গাড়িও কম। কিন্তু বাজার করতে গিয়ে দেখি বাজারে মানুষ আছে মোটামুটি। তবে একটা বিষয় ভালো লেগেছে- ব্যবসায়ী ও ক্রেতা বাজারের সবাই এখন মাস্ক পরছে। আগের তুলনায় মোটামুটি বলা যায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে।

কারওয়ান বাজার মোড়ে দায়িত্বরত ট্যাফিক সার্জেন্ট আজিজুর হক জাগো নিউজকে জানান, সকাল থেকে আজ রাস্তায় গাড়ি ও মানুষ অনেক কম। তবে কারওরান বাজারে অনেকেই এসেছেন বাজার করার জন্য। এছাড়া অন্যকোনো কাজে মানুষকে বের হতে দেখা যায়নি। আজ যারাই বের হচ্ছেন গত দুই দিনের চেয়ে তারা সচেতন হয়ে মুভমেন্ট পাস নিয়ে বের হচ্ছেন।

শাহবাগ মোড়ে রাকিব হাসান নামের একজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাতালে ভর্তি আছেন। বাবার কাছে যাওয়ার জন্যই তিনি বাসা থেকে বের হয়েছেন।

dhaka02.jpg

সংসদ ভবনের সামনে রিকশাচালক বরকত মিয়া বলেন, ‘গত দুইদিন সকাল সাড়ে ৯টার ভেতরে চার-পাঁচটা ক্ষ্যাপ মারতে পারছিলাম। কিন্তু আজ মাত্র একটা মারছি। আজ মানুষ নাই। এভাবে চলতে থাকলে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাবে আমাদের।’

বিধিনিষেধের মধ্যে যাদের একান্তই বাইরে যাওয়া প্রয়োজন হবে তাদের জন্য মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকালে movementpass.police.gov.bd ওয়েবসাইট ও অ্যাপের উদ্বোধন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

dhaka02.jpg

গত ৪৬ ঘণ্টায় এ পর্যন্ত মোট ১৫ কোটি ৯৯ লাখ ২২ হাজার ৬৫ জন নাগরিক পুলিশের মুভমেন্ট পাস নেয়ার জন্য ওয়েবসাইটে ঢুকেছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ওয়েবসাইটে ১৫ কোটি ৯৯ লাখ ২২ হাজার ৬৫টি হিট হয়েছে। সেই হিসাবে- প্রতি মিনিটে হিট হয়েছে ৫৭ হাজার ৯৪২ বার। তবে তাদের সবাই পাসের জন্য আবেদন করেননি। গত ৪৬ ঘণ্টায় ৪ লাখ ৯৭৭ জন মুভমেন্ট পাসের জন্য আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮০১ জনকে মুভমেন্ট পাস ইস্যু করা হয়েছে।

একটি নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য এই মুভমেন্ট পাস ইস্যু করা হয়। ওই সময় অতিবাহিত হলে কিংবা নির্ধারিত গন্তব্য থেকে অন্য কোথাও যেতে হলে পুনরায় এই মুভমেন্ট পাস ইস্যু করতে হবে। এই পাস কেবমমাত্র জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারযোগ্য বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দরফতর।

টিটি/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।