‘৬০ টেকার ভাড়া ২০০, তাই শিয়ারে রিকশায়’

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৭:৫৫ পিএম, ২৯ জুন ২০২১

‘আপনারা তো একজন নাইমা যান কইয়াই খালাস। ফকিরাপুল থাইক্যা ২০০ টেকায় ভাড়া ঠিক কইরা রিকশায় উঠছি। মাসের শেষে পকেট গড়ের মাঠ। একজনের কাছে কয়টা টাকা পামু। আনতে যামু কিন্তু ভাড়া নাই। তাই নিরূপায় অইয়া একজনকে পার্টনার লইয়া (২০০ টাকার অর্ধেক ১০০ টাকা) মোহাম্মদপুরে যাইতাছি। অহন আপনারাই কন রিকশা থেকে একজনরে নামাইয়া দিলে আমি ২০০ টাকা ভাড়া কেমনে দিমু।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে বিধিনিষেধ সাপেক্ষে চলমান তিনদিনের লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার (২৯ জুন) দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টায় রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে চেকপোস্টে রিকশার আরোহী দুইজন যাত্রীর একজনকে (সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে না বলে) নেমে যেতে বললে নরম সুরে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে কথাগুলো বলছিলেন। বাস্তবতা বিবেচনায় পুলিশ কর্মকর্তা ওই দুজনকেই এক রিকশায় যাওয়ার সুযোগ দেন।

তিনদিনের লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে আজ দুপুরে সরেজমিনে সায়েন্স ল্যাবরেটরি ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা সিটি কলেজের পূর্ব দিকে মিরপুর রোডে ব্যারিকেড বসিয়ে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন (মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও রিকশা) যাত্রীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে কিনা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হয়েছে কিনা তা জানতে চাইছেন।

মোটরসাইকেলে দুজন যাত্রীকে একসঙ্গে বসা দেখলেই সেটি থামিয়ে চাবি জব্দ করছেন। রিকশায় দুজন যাত্রী বসা দেখলে একজনকে নামিয়ে দিয়ে হেঁটে যেতে বলছেন। শুধু রিকশা ও মোটরসাইকেলই নয়, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস থেকেও অনেকেই নেমে যেতে বাধ্য করছেন। যানবাহনের যাত্রী ও চালকদের মুখে মাস্ক না থাকলে তাদের পরতে বাধ্য করছেন।

সেখানে কর্তব্যরত নিউমার্কেট থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সংক্রমণরোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তারা মোটরসাইকেল, রিকশা কিংবা গাড়িতে অধিক যাত্রী অ্যালাউ করছে না। বিশেষ করে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলগুলোতে একই হেলমেট বিভিন্ন যাত্রীর মাথায় পরিধান করায় এবং ক্লোজ কন্টাটে বসার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় তারা মোটরসাইকেলে দুজনকে বসতে দিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে ডিএমপি থেকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ভাড়ায়চালিত পাঠাও গাড়িচালক তারা মিয়া যাত্রী নিয়ে যাওয়ার সময় জেরার মুখে পড়েন। তার মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে নেন কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য। তিনি বারবার বলছিলেন, কোম্পানি তো অ্যাপ চালু রেখেছে। যাত্রী পরিবহন করা যাবে না তা তিনি জানতেন না। চেকপোস্টে অসংখ্য যানবাহনের কাগজপত্রসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে কিনা তা দেখার কারণে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ১ জুলাই সারাদেশে কঠোর লকডাউনের সংবাদে চলমান লকডাউনের মাঝেও মানুষ নানাভাবে গ্রামে ফিরছে। তাই রাস্তায় এত যানবাহন।

ইসলামি ব্যাংকের কলাবাগান শাখার ম্যানেজার পরিচয়দানকারী একজন কর্মকর্তা মাইক্রোবাসে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি পরিচয় দেয়ার পরও সঙ্গে থাকা লোকজনকে নামিয়ে দেয় পুলিশ।

চলমান লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিভিন্ন কাজে বের হওয়া অধিকাংশ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। একে তো রিকশায় ভাড়া বেশি তারপরও একাধিক যাত্রী দেখলেই সামাজিক দূরত্ব বজায় না থাকার দোহাই দেখিয়ে একজন যাত্রী রেখে বাকিদের নামিয়ে দেয়ায় দুর্ভোগ বাড়ে। অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকে হেঁটেই দূরের পথ পাড়ি দেন।

এইউ/এমআরএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।