‘নির্দিষ্ট কেন্দ্র’ জটিলতায় টিকা নিতে ভোগান্তি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে গণটিকা কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশে ৭৫ লাখ ডোজ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে পাড়া-মহল্লায় টিকা নিতে আসা অনেকেই ‘নির্দিষ্ট কেন্দ্র’ জটিলতায় ভোগান্তির মুখে পড়েছেন।
এদিন পার্শ্ববর্তী কেন্দ্রে গেলেও অনেকে টিকা নিতে পারেননি। কেন্দ্র থেকে তাদের বলা হচ্ছে, যেখানে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে সেই কেন্দ্রে যেতে। সাধারণ নাগরিকেরা বলছেন, সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) মহল্লায় মাইকের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছে, এদিন টিকা নিতে কোনো এসএমএস লাগবে না। এটা প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের উপহার। তবে কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বরতরা বলছেন, গণটিকা নিতে হলে যে কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন করেছেন বা রেজিস্ট্রেশনে যে কেন্দ্র রয়েছে তাকে সেখান থেকে টিকা নিতে হবে।
মোজাম্মেল হক সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর বাগিচা এলাকায় নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন টিকা নিতে। সকাল ৯টার দিকে তাকে বলা হয়, আপনি তিলপাপাড়া কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে পারবেন। তিনি তিলপাপাড়া কেন্দ্রে গেলে সেখানেও বলা হয় অন্য কেন্দ্রে যেতে। সবশেষে ফিরে আসেন বাগিচা কেন্দ্রে। সেখানে দায়িত্বরতরা বলেন, এখানে তিনি টিকা নিতে পারবেন না, কেন্দ্র যেখানে আছে সেখান থেকেই নিতে হবে।
একপর্যায়ে মোজাম্মেল, আবুল হোসেন, নাজমা বেগমসহ প্রায় ১৫ জন এভাবে বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের টিকা কেনো পাবো না, কেনো নানা কেন্দ্রে ঘুরতে হচ্ছে? পরে কেন্দ্রের দায়িত্বরত ডাক্তার মুহসিনা তাবাসসুম তাদের সান্তনা দিয়ে বলেন, আপনারা এসএমএস ছাড়া টিকা নিতে পারবেন কিন্তু সনদ পাবেন না, যেটা অনেক প্রয়োজনীয়। তাছাড়া আপনাদের একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্র কার্ডে উল্লেখ রয়েছে, সেখান থেকেই আপনাদের টিকা নিতে হবে।
এ বিষয়ে মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি প্রথমে মুগদা মেডিকেলে যাই টিকা নিতে। সেখানে বলা হয়, নিজ নিজ এলাকায় টিকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে নিতে হবে। আমি সকাল থেকে ১১টা পর্যন্ত ঘুরছি নানা কেন্দ্রে, কিন্তু টিকা নিতে পারিনি। অথচ গতকাল মাইকে বলা হয়েছিল, আজ টিকা নিতে কোনো এসএমএম লাগবে না।’
এ বিষয়ে বাগিচা মাতৃসদন কেন্দ্রে দায়িত্বরত ডা. মুহসিনা তাবাস্সুম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা সাধারণ নাগরিকদের টিকা দিতে এখানে দায়িত্ব পালন করছি। সবাই টিকা নিতে পারবেন, তবে বোঝার ভুলের কারণে নানা কেন্দ্রে গিয়ে হয়রান হচ্ছেন তারা। আমাদের কার্ড দেখালে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের নাম বলে দিচ্ছি, সেখানে তারা যাচ্ছেন।’
এর আগে গত রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে সারাদেশের ছয় হাজারের বেশি কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে দিনব্যাপী একাধিক শিফটের মাধ্যমে ৭৫ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হবে। টিকাদানের ক্ষেত্রে প্রথম দুই ঘণ্টা ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা অগ্রাধিকার পাবেন। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে টিকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য এ টার্গেট নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে ৭৫ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার টার্গেট পূরণ করতে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যমকর্মীসহ সবার সহযোগিতা চান তিনি।
চার হাজার ৬০০টি ইউনিয়ন, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৩৩টি ওয়ার্ডে স্থাপন করা টিকাকেন্দ্র থেকে এ গণটিকাদান কর্মসূচি চলছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে তিনটি, পৌরসভায় একটি এবং সিটি করপোরেশন এলাকার কেন্দ্রগুলোতে তিনটি করে বুথ রয়েছে। যারা টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাদের এ ক্যাম্পেইনে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ইএআর/ইউএইচ/জিকেএস