টিপু-প্রীতি হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-মোটরসাইকেলের জোগানদাতা কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০৭ পিএম, ০৮ এপ্রিল ২০২২

রাজধানীর শাহজাহানপুরে চাঞ্চল্যকর আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতির হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেলের জোগানদাতা ব্যক্তিকে খুঁজছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। নাম-পরিচয় না জানালেও ওই ব্যক্তির বয়স আনুমানিক ৩০ বছর এবং তার আকৃতি ছোটখাটো গড়নের বলে জানিয়েছে ডিবি। এরইমধ্যে ওই ব্যক্তির বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দিন (গত ২৪ মার্চ) সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর গোড়ান ছাপড়া মসজিদের উল্টো পাশের গলিতে গ্রেফতার শুটার মো. মাসুম ওরফে আকাশ ও পলাতক আকাশের বন্ধু মোল্লা শামীমের কাছে একটি ব্যাগ ও একটি মোটরসাইকেল দিয়ে যায় ওই সাপ্লাইয়ার। ব্যাগটিতে ছিল একটি অস্ত্র। রাত সাড়ে ১০টার দিকে টিপুকে গুলি করার পর রাতেই গোড়ান ছাপড়া মসজিদের উল্টো পাশের গলিতে একই স্থানে শুটার মাসুম ও শামীম অস্ত্র এবং মোটরসাইকেলটি ওই ব্যক্তির কাছে ফেরত দিয়ে তারা যে যার মতো চলে যান।

গত মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন শুটার মো. মাসুম ওরফে আকাশ। অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) তোফাজ্জল হোসেন তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে ওইদিনই সন্ধ্যায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যার কথা জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন মাসুম। বন্ধু মোল্লা শামীমের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে সেদিন ঘটনাস্থলে যান তিনি। টিপুকে গুলি করে শামীমের মোটরসাইকেলে করেই তিনি এলাকা ছাড়েন।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, আদালতে শুটার মাসুম জবানবন্দিতে বলেছেন- ‘গত ৯-১০ বছর আগে শামীমের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। শামীমের সঙ্গে কমলাপুরে তাদের বাসার সামনে সন্ধ্যার দিকে আমার দেখা হয়। তখন সে তার ফোন নম্বর থেকে জনৈক মুসা নামের এক ব্যক্তির ফোন নম্বরে কল করে আমার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। সেসময় শামীম আমাকে বলেছিল, টিপুকে গুলি করতে হবে। সে টিপুর পরিচয় বলেছিল। আমার সঙ্গে টিপুর ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল না। তবে টিপু বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিল। আমি টিপুকে চিনতে পারি। টিপুকে গুলি করলে আমার আগের মামলার ঝামেলা থাকবে না বলে তখন শামীম আমাকে নিশ্চয়তা দেয়।’

জবানবন্দিতে মাসুম আরও বলেন, ‘২৪ মার্চ সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর গোড়ান ছাপড়া মসজিদের উল্টো পাশের গলিতে ৩০ বছর বয়সী একজন ছেলের কাছ থেকে আমি ও শামীম মোটরসাইকেল ও ব্যাগ নেই। সেই ব্যাগে পিস্তল ছিল। তার কাছ থেকে মোটরসাইকেল ও ব্যাগ নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আমরা দুজন (শামীম ও শুটার মাসুম) মতিঝিল এজিবি কলোনিতে যাই। আমি ব্যাগ হাতে নিয়ে মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ছিলাম এবং শামীম মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল। টিপু গাড়িতে বসার পরপরই তার গাড়ি স্টার্ট দেয়। আমরা পেছন পেছন তার গাড়ি ফলো করতে থাকি। টিপুর গাড়ি শাহজাহানপুর আমতলা রেললাইনের সিগন্যালের একটু সামনে এসে দাঁড়ায়। আমি তখন মোটরসাইকেল থেকে নেমে ব্যাগ হাতে নিয়ে রোড ডিভাইডার পার হয়ে পায়ে হেঁটে টিপুর গাড়ির জানালার কাঁচের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে খুব কাছ থেকে টিপুকে লক্ষ্য করে পিস্তলের ট্রিগার চেপে গুলি চালাই।’

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে শুটার মাসুম আরও বলেন, ‘গুলি শেষ হয়ে গেলে আমি শামীমের মোটরসাইকেলে উঠি। শামীম ও আমি সেই গোড়ান ছাপড়া মসজিদের উল্টো পাশের গলিতে অপরচিত সেই ছেলেকে মোটরসাইকেল ও পিস্তলসহ ব্যাগ ফেরত দেই। ওই ছেলে সেখানে আগে থেকেই আমাদের অপেক্ষায় ছিল। সেখানে শামীম ৫৬ মিনিট থাকার পর চলে যায়। শামীম চলে যাওয়ার পরে আমি ঢাকার বাইরে চলে আসি।’

শুটার মাসুমের মোটরসাইকেলচালক শামীমও নজরদারিতে
রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিকে হত্যায় কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া আরেক ব্যক্তির নাম পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তাকে এরইমধ্যে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যে কোনো সময় তিনি গ্রেফতার হতে পারেন তিনি।

ডিবির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া ওই ব্যক্তির নাম মোল্লা শামীম। তিনি শুটার মাসুমের বন্ধু। ঘটনার দিন মাসুমকে মোটরসাইকেলে করে শাহজাহানপুরে টিপুর মাইক্রোবাসের সামনে নিয়ে যান শামীম।

এ বিষয়ে গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রিফাত রহমান শামীম জাগো নিউজকে বলেন, এরইমধ্যে একাধিক ব্যক্তির ওপর গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি শুরু করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের বিষয়ে একাধিক সূত্রে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এমনকি প্রতিনিয়ত তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। শুটার মাসুমকে অস্ত্র সাপ্লাই দেওয়া ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছে। এছাড়া মাসুমের বন্ধু মোটরসাইকেলচালক মোল্লা শামীমকেও খোঁজা হচ্ছে।

দুবাইতে থাকা সুমন শিকদার ওরফে মুসার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে একটি প্রসিডিউর রয়েছে। পুলিশ সদরদপ্তরের মাধ্যমে সেই প্রসিডিউর ফলো করে আমরা মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনবো। মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনা গেলে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।

গত ২৮ মার্চ শুটার মাসুমকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১৫ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে ২৬ মার্চ রাতে বগুড়া থেকে শুটার মাসুমকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গত ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের সামনে জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় তিনি নিজ গাড়িতে করে বাসায় যাচ্ছিলেন। গাড়ি যানজটে পড়ার পর মোটরসাইকেলে আসা হেলমেট পরা এক যুবক টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এলোপাতাড়ি গুলিতে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি নিহত হন। এছাড়া টিপুর গাড়িচালক মুন্নাও গুলিবিদ্ধ হন।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়।

টিটি/এমকেআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।