উন্মুক্ত স্থানের গোসলে যৌন হয়রানির শিকার ১৩ শতাংশ তরুণী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:১৫ পিএম, ১১ জুন ২০২২

দেশে উন্মুক্ত গোসলখানায় ৭৯ দশমিক ২ শতাংশ তরুণী মৌখিক সহিংসতা এবং ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ যৌন নিপীড়নের শিকার হন। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের একটি জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এ কারণে সবার জন্য নিরাপদ গোসলখানার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

শনিবার (১১ জুন) ঢাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উন্মুক্ত স্থানে গোসলের ফলে অনিরাপত্তায় ভোগেন ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার নিম্ন আয়ের কিশোরী ও যুব নারীরা। দিনে বা রাতে পানি নিয়ে আসতে অনেক দূরে যাওয়া এবং টয়লেট ও গোসলখানায় পর্যাপ্ত সুবিধা (দরজার লক, ওপরের ছাঁদ ইত্যাদি) না থাকার কারণে সারাক্ষণ যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির ঝুঁকিতে থাকেন তারা।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ওয়াশ স্পেশালিস্ট এস এম তারিকুজ্জামান বলেন, সংস্থাটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে 'এমপাওয়ারিং গার্লস ফর ইকোনমিক অপরচুনিটি ইন সেইফ স্পেস (ই-গ্লস) নামক একটি মডেল প্রজেক্ট শুরু করে। এর আওতায় ঢাকা শহরের চার কলোনি- ধলপুর, মালেক মেম্বার কলোনি, আইজি গেট কলোনি ও ম্যাচ কলোনিতে ১৫টি গোসলখানা স্থাপনের কাজ করি আমরা।

‘পাশাপাশি এই চার কলোনির মানুষদের বিশেষ করে মেয়েদের নিয়ে একটি সমীক্ষা করি, যেখানে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৪১৭ জন মেয়ে উত্তরদাতা হিসেবে ছিলেন। এ সময় ১২টি ফোকাসড দলীয় আলোচনা করা হয়। এই সমীক্ষা এবং তিন মাসব্যাপী সোশাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন করার উদ্দেশে আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন বিওয়াইএস নামক একটি যুব সংগঠন।’

কী ধরনের গোসলখানা ব্যবহার করা হয়?- জরিপের এমন প্রশ্নের উত্তরে ৯৮ শতাংশ উত্তরদাতাই বলেছেন, নিত্যদিনের গোসলের কাজে তারা উন্মুক্ত গোসলখানা ব্যবহার করে থাকেন। এর মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ গোসলখানায় রয়েছে নারীদের জন্য পৃথক জায়গা। প্রতিটি গোসলখানার বিপরীতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা গড়ে ৩৫ থেকে ৪৫ জন। সর্বোচ্চ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭০ এবং সর্বনিম্ন ২০।

উত্তরদাতা নারীদের মধ্যে প্রায় সবাই ফোকাসড গ্রুপে উল্লেখ করেন, এই গোসলখানাগুলো তাদের জন্য নিরাপদ নয়। এসব জায়গায় গোসলের সময় আশেপাশের উঁচু দালানকোঠা থেকে ছবি তোলার মতো ঘটনাও ঘটে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, তারা রাতে টয়লেটে যেতে ভয় পান এবং ৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ কিশোরী ও যুব নারীরা বলেন, তারা টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে কোনো না কোনো সময় সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এই সমীক্ষাটি করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই, এই চার কলোনির টয়লেট বা গোসলখানায় কোথাও স্যানিটারি সামগ্রী নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা নেই ঠিকমতো। এই অবস্থায় মাসিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা বেশ কঠিন।

সহিংসতার কথা বলতে গিয়ে মেয়েরা উল্লেখ করেন, তারা বেশ দূর থেকে পানি আনতে যান এবং এই কাজটি করতে গিয়ে ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ বলেছেন, তাদের অনেক বেশি সময় লাগে ও সন্ধ্যা হয়ে যায়। ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ কিশোরী ও যুব নারীরা বলেছেন, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।

এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৯ দশমিক ২ শতাংশ বলেন, তারা মৌখিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ও ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মানিক কুমার সাহা জানান, বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজারের মতো নিম্নআয়ের এলাকা রয়েছে। জমির অপ্রতুলতার পাশাপাশি সুয়ারেজ লাইনের চ্যালেঞ্জও এখানে বিদ্যমান। আর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে কিশোরী ও যুব নারীদের উপর।

‘নিরাপদ গোসলখানার অভাবে পুরুষ ও নারীদের একই সঙ্গে গোসলের কাজ সারতে হয়। এর ফলে নারীদের গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হয়। সহিংসতার ঘটনা ঘটতে থাকে। ঢাকার চারটি কলোনিতে আমরা আমাদের প্রকল্পের আওতায় ১৫টি গোসলখানা নির্মাণ করেছি। এর মধ্যে দুইটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। আমরা আশা করি, কিশোরী ও নারীরা এগুলো ব্যবহারের মধ্য দিয়ে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাবে।’

নিরাপদ গোসলখানার চাহিদা আরও বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, নীতিনির্ধারক মহলকে আমরা এই বার্তাটা পৌঁছে দিতে চাই যেন আমরা সবাই একত্রে এই সমস্যাকে চিহ্নিত করে তা সমাধানে কাজ করতে পারি। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে বাজেটে কীভাবে এই ইস্যুটিকে গুরুত্ব দেওয়া যায়, তা নিশ্চিতেও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার সেমন্তী মঞ্জরী জানান, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ শিশু, কিশোর-কিশোরী বিশেষ করে যুব নারীদের উন্নয়নে কাজ করে। আগামী ১০ বছর আমরা সহিংসতার ভয় প্রতিরোধে কাজ করবো। নিরাপদ গোসলখানার উদ্যোগটি এ কার্যক্রমের একটি অংশ।

বিওয়াইএসের প্রতিষ্ঠাতা ফায়েজ বেলাল বলেন, গোসলখানার নিরাপত্তা কতটা জরুরি তা আমরা অনেকেই বুঝি না। এই প্রকল্পে কাজ করার মধ্য দিয়ে এই উপলব্ধিটি সর্বপ্রথম আমার মধ্যে কাজ করে। একজন কিশোরীর নিরাপত্তা থেকে শুরু করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এসইউজে/এমপি/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।