বিমানে নিয়োগে প্রশ্নফাঁস

প্রতিবেদন দাখিলে তদন্ত কমিটির কালক্ষেপণ

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ১১:১১ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০২২
প্রশ্নফাঁসের প্রতিবাদে চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ/ফাইল ফটো

বিমানে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনার পেরিয়ে গেছে ২৪ দিন। এর মধ্যে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন কয়েকজন। সন্দেহভাজন কয়েকজন এখনো পলাতক। ঘটনার একদিন পর গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। পাঁচদিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। যদিও পেরিয়ে গেছে তিন সপ্তাহ।
তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্টদের দাবি, তদন্তকাজ শেষ পর্যায়ে। শিগগির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। প্রতিবেদনে উঠে আসবে প্রকৃত ঘটনা।

গত ২১ অক্টোবর বিকেল ৩টায় ১০ পদে জনবল নিয়োগের জন্য পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। তখন পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিমান কর্তৃপক্ষ। পরে পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উত্তরায় পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রার্থীরা।

প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ওইদিন রাতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিমানের মোটর পরিবহন অপারেটর জাহাঙ্গীর আলম, মাহফুজ আলম ভূঁইয়া, এনামুল হক এবং অফিস সহকারী আওলাদ হোসেন ও হারুন উর রশিদসহ প্রশ্নফাঁস চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এছাড়া বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওর গাড়িচালকসহ অন্তত ২০ জন পলাতক। তারা নিয়োগ কমিটির সদস্যসহ বিমানের ঊর্ধ্বতন বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কাজের সূত্রে যুক্ত।

বিমানের জনসংযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, এ ঘটনায় গত ২২ অক্টোবর মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. মাহমুদুল ভূঁইয়া, আওলাদ হোসেন ও মো. এনামুল হক এবং মো. হারুন উর রশিদকে চাকরিচ্যুত করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এছাড়া একই দিন চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মো. নওসাদ হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে পাঁচদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) পর্যন্ত এই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়নি।

জানতে চাইলে চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মো. নওসাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত কাজটি করছি। যাতে কোনো অসম্পূর্ণতা, ভুল-ত্রুটি না থাকে। এখন তদন্তের কাজ শেষ পর্যায়ে। কয়েক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

কিন্তু ঠিক কবে জমা দেওয়া হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি। এছাড়া তদন্তের নামে কালক্ষেপণের অভিযোগও অস্বীকার করেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, বিমানের প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় খোদ নিয়োগ কমিটির এক সদস্য জড়িত। প্রশ্ন প্রণয়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি কৌশলে মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে নেন। পরে চক্রের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে অর্থের তা যায় নির্দিষ্ট চাকরিপ্রার্থীদের কাছে। শতাধিক পরীক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে যায় প্রশ্নপত্র। এভাবে প্রশ্নপত্র বিক্রির মাধ্যমে নিয়োগ কমিটির ওই সদস্য প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তবে তার নাম এখনো প্রকাশ করেননি তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।

গত ৩ নভেম্বর বিমানের প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ। তিনি জানান, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফটোকপি করা হয় বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. যাহিদ হোসেনের কক্ষে। আর সেখান থেকেই ছবি তুলে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়। প্রশ্নপত্র প্রণয়নে নিরাপত্তা ত্রুটির কারণেই তা ফাঁস হয়েছে, যার দায়ভার এড়াতে পারেন না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

গ্রেফতার হওয়া আসামিদের কাছ থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩২টি চেক, ১৭টি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ১৪টি মোবাইল ফোন সেট, মোটরসাইকেল, তিনটি ডায়েরি, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের হার্ড কপি ও সফট কপি এবং নিয়োগপ্রার্থীদের ৫৪টি প্রবেশপত্র জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে হারুন-আর-রশিদ বলেন, এর আগেও তারা বিমানে বিভিন্ন নিয়োগে একইভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। সবকিছু মিলে যাদের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের দায় এসেছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষার সদস্যদের কাউকে ফোনে আবার কাউকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত ও নিষ্পত্তির স্বার্থে প্রয়োজনে আরও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

জানতে চাইলে বিমানের সিইও মো. যাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, প্রশ্নফাঁসের ঘটনা গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত হোক, তদন্তে উঠে আসবে। এছাড়া বিমানের তদন্ত সুষ্ঠুভাবে চলছে। শিগগির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে গঠিত কমিটি।

এমএমএ/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।