গাছে গাছে আমের মুকুল, বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা


প্রকাশিত: ০৪:৫২ এএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রাজশাহী অঞ্চলের আম গাছগুলোতে মুকুল আসতে শুরু করেছে। নানা ফুলের সঙ্গে সৌরভ ছড়াচ্ছে আমের মুকুলও। আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে প্রকৃতি। মুকুলের সেই সুমিষ্ট সুবাস আন্দোলিত করে তুলছে মানুষের মন।

জানা গেছে, দেড় সপ্তাহ আগে থেকেই গাছে মুকুল দেখা দিতে শুরু করেছে। এখন সময়ের ব্যবধানে তা আরো বাড়ছে। এ বছর গাছে মুকুলের পরিমাণ বেশি। আমচাষি এবং সংশ্লিষ্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং সময়মতো পরিচর্যা হলে চলতি মৌসুমে আমের ভালো ফলন হবে। আর এ কারণেই আশায় বুক বেধে আমচাষিরা শুরু করেছেন পরিচর্যা। তাদের আশা, চলতি মৌসুমে তারা আম থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।

উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ এবং নাটোরের প্রায় সব এলাকাতেই রয়েছে আমবাগান। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই আম বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। তবে গড়ে ওঠা নতুন আম বাগানগুলোর প্রায়ই বনেদি জাতের। বিশেষ করে নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত ও আশ্বিনা জাতেরই গাছ বেশি হচ্ছে।

Mango

মহানগরীর উপকণ্ঠ রায়পাড়া এলাকায় আম বাগানের সংখ্যা বেশি। ওই এলাকার আমচাষি কামাল হোসেন জানান, এ বছরের আবহাওয়া আমের জন্য অনুকূলে রয়েছে। গত বছরের চেয়ে টানা শীত ও কুয়াশার তীব্রতা এ বছর অনেক কম। গতবারের মতো মৌসুমের শুরুতে শিলাবৃষ্টিও হয়নি। এরই মধ্যে অনেক গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে।

আশা করা যাচ্ছে, ফাল্গুনের মধ্যে রাজশাহী ও এর পার্শ্ববর্তী জেলার আম গাছগুলোতে পর্যাপ্ত মুকুল আসবে। তবে মাঝে-মধ্যেই আকাশে মেঘ জমে উঠছে। এ সময় শিলাবৃষ্টি হলে আমের মুকুলের ক্ষতি হবে। এর উপর সামনে কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাই আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কাও কাজ করছে। তবে পরিস্থিতি অনূকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে বলে জানান তিনি।

অপর আমচাষি আবদুল হালিম জানান, আমের জন্য এখন আর অফ ইয়ার বা অন ইয়ার নেই। বছর জুড়ে গাছের পরিচর্যা করার কারণে এখন প্রতি বছরই আমের ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শে গাছে মুকুল আসার ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই তারা পুরো গাছ সাইপারম্যাক্সিন ও কার্বারিল গ্রুপের কীটনাশক দিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করে গাছ ধুয়ে দিয়েছেন। এতে গাছে বাস করা হপার বা শোষকজাতীয় পোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। যদি সঠিক সময়ে হপার বা শোষক পোকা দমন করা না যায় তাহলে আমের ফলন কমে যেত বলে জানান এই আমচাষি।

Mango

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আলিম উদ্দিন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। তবে ছত্রাকজনিত রোগেও আমের মুকুল-ফুল-গুটি আক্রান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে ম্যানকোজেট গ্রুপের ছত্রাকনাশক দুই গ্রাম অথবা ইমাডোক্লোরিড গ্রুপের দানাদার প্রতি লিটার পানিতে দশমিক দুই গ্রাম, তরল দশমিক ২৫ মিলিলিটার ও সাইপারম্যাক্সিন গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আবার মুকুল গুটিতে রূপান্তর হলে একই মাত্রায় দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে। এছাড়া পাউডার মিলডিউ নামের এক প্রকার ছত্রাকজনিত রোগেও আমের ফলনের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কখনও গাছে এ রোগের আক্রমণ দেখা দিলে অবশ্যই সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম হারে মিশিয়ে সাত থেকে ১০ দিন পর পর দুইবার স্প্রে করতে হবে বলে জানান এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী জানান, ধান-চাল বা অন্য ফসলের মতো আম উৎপাদনের কোনো লক্ষ্যমাত্রা কৃষি অধিদফতরের কাছে থাকে না। তবে রাজশাহীর ১৬ হাজার ৫১৯ হেক্টর জমিতে আম গাছ রয়েছে। আগামী বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ অঞ্চল থেকে প্রায় আড়াই লাখ টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা করা যাচ্ছে।

শাহরিয়ার অনতু/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।