চট্টগ্রামে বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস তৈরি করা হবে : নাছির
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নগরবাসীর সেবায় নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কাজে পেয়েছেন সফলতা, তবে কিছু ক্ষেত্রে আছে প্রতিবন্ধকতা।
নগরীর উন্নয়নে চসিকের চলমান নানা কার্যক্রম নিয়ে জাগোনিউজ২৪.কমের মুখোমুখি হন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রামের জীবন মুছা।
জাগো নিউজের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস তৈরি করে নগরের দরিদ্র পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে, যাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের সাশ্রয় হয়। বর্জ্য থেকে গ্যাস উৎপাদন করা হলে কর্পোরেশনের সেবা ও আয়ের পরিধি বাড়বে। এখান থেকে যে আয় আসবে তা দিয়ে আরো পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ দেয়া যাবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে ‘ক্লিন সিটি গ্রিন সিটি’ করার জন্য যা যা করা দরকার তার সবই করা হবে। চট্টগ্রাম শহরকে দুর্গন্ধ ও বর্জ্যমুক্ত করতে এরই মধ্যে নানা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। খ্যাতনামা প্রকৌশলি ও পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ ব্যাপারে বারবার বসে পরামর্শ করা হচ্ছে। ডাস্টবিন ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, শহরকে কিভাবে আবর্জনামুক্ত রাখা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা-ভবনা চলছে। টার্গেট ঠিক করা, আবর্জনামুক্ত শহর হবে। প্রতিটি ঘরের দরজায় দরজায় গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের লোকজনই সেই আবর্জনা নিয়ে আসবেন। আশা করছি এক বছরের মধ্যে দৃশ্যমান বাস্তবায়ন দেখতে পাবেন।
তিনি বলেন, নগর ভবন নির্মাণের বিষয়টিকে আমরা অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে দেখছি। আশা করছি এক দেড় মাসের মধ্যে নগর ভবনের জন্য অর্থের সংস্থান হয়ে যাবে। বাজেট পেতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। এখন শুধু মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই হবে, ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবো। ৩-৪ বছরের মধ্যে কর্পোরেশনের নিজস্ব উদ্যোগে ২৫ তলা বিশিষ্ট নান্দনিক নগর ভবন নির্মাণ করা হবে। আশা করছি আগামী মার্চ-এপ্রিলে নগর ভবনের টেন্ডার আহ্বান করতে পারবো।
প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে মেয়র বলেন, যারা ঘরে ঘরে গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করবে তাদের একটা ইনসেনটিভের ব্যবস্থা রাখা হবে। প্রতিটি ঘর থেকে মাসে ১০ টাকা করে তারা নিবে। এতে যারা আবর্জনা সংগ্রহ করবে তারা উৎসাহিত হবে। যারা টাকা দিতে পারবে না (বিশেষ করে বস্তি এলাকার মানুষ) তারা নিজেরাই সহযোগিতা করবে। বাড়তি রোজগারের আশায় সেবকরা বেশি ঘর থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করবে। সেটা নিয়ে আরো চিন্তা ভাবনা চলছে। একটা মডার্ন সিটি করার জন্য যা যা প্রয়োজন সব করার জন্য চিন্তা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, উন্নত বিশ্বের মত চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন পার্কে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এবং রাস্তা-ঘাটে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় উন্নত ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে কোনো পরিবেশ দূষণ না হয়। নগরবাসী যেন পরিচ্ছন্ন নগরে সুস্থ শরীর নিয়ে চলতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হবে।
ফুটপাতের হকারদের প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ফুটপাতে হকাররা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বসতে পারবে। সেজন্য একটি পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে হকার সমিতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সামনে আরো আলোচনা করা হবে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সময়ের জন্য তারা রাস্তায় ভ্রাম্যমাণভাবে বসতে পারবে। তাদের মোবাইল ভেহিক্যাল থাকবে।
তিনি বলেন, কেউ বল প্রয়োগ করে ফুটপাত দখল করতে পারবে না। ফুটপাত বা রাস্তায় হকাররা কোনো মালামাল রাখতে পারবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মালপত্র এনে তা আবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নিয়ে যেতে হবে। ফুটপাতের হকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ইতিমধ্যে এ নিয়ে বোঝাপড়া হয়েছে। তাদেরকে কিছু দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে রাস্তার পাশে লাল রঙের প্রলেপ দিয়ে হকারদের বসার স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
খেলার মাঠ রক্ষার কথা জানিয়ে মেয়র নাছির বলেন, খেলা আর মেলা একসঙ্গে চলতে দেয়া যায় না। এমনিতেই যে কয়টি মাঠ আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দিনে দিনে খেলার মাঠের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তাতে ক্ষতি হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে যাদের মাঠ তাদের উদ্যোগী হতে হবে। তবে নগর পিতা হিসেবে তাদের পরামর্শ দিতে পারি। খেলার মাঠ দখলমুক্ত রাখা, মাঠে পার্কিংয়ের গাড়ি রাখতে না দেওয়ার এবং মাঠ কর্তৃপক্ষকে নিজ নিজ মাঠ সংস্কার করে মাঠের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি জন্য কাজ করতে হবে। সন্তানরা যেন মুক্ত আকাশে বিকাশ করতে পারে, তাদের মানসিক বিকাশ যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য কাজ করার আহ্বান জানান মেয়র।
তিনি আরো বলেন, নগরীর আউটার স্টেডিয়াম এতোদিন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) ছিল না। গত কয়েক বছর এই নিয়ে মামলা চলছিল। সাত মাস আগে এই নিয়ে হাইকোর্ট থেকে সিজেকেএস রায় পেয়েছে। এক মাস আগে সিজেকেএস এর হাতে রায়ের কপি আসার কথা ছিল। কিন্তু তা এখনো আসেনি।
রায়ের কপি হাতে পেলে সিজেকেএস মাঠ বুঝে নিয়ে একে সংস্কার করে খেলাধুলার উপযোগী করে তোলা হবে। মামলার রায়ের কপি হাতে আসলে মাঠে কোনো মেলা বসাতে দেওয়া হবে না।
আউটার স্টেডিয়ামকে নতুন আঙিকে সাজানোর কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, এ মাঠকে সংস্কার করার জন্য কনসালটেন্টের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। ২-১ দিনের মধ্যে কনসালটেন্ট মাঠ পরিদর্শন করবে। আউটার স্টেডিয়াম ও তার আশপাশের এলাকায় নতুন আঙিকে ঢেলে সাজানো হবে। কিছুদিনের মধ্যেই এসব কাজ শুরু হবে।
এতে শুধুই খেলাধুলার পরিবেশ থাকবে। বিদেশের স্টাইলে কিভাবে সুন্দরভাবে মাঠকে সাজানো যায় সে পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, একটি ব্যতিক্রমী স্টেডিয়াম হবে আউটার স্টেডিয়াম। প্লেনিং সেল থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, নিচে বেচমেন্ট করে মাল্টি পারপাস ব্যবহার করার। এতে মাঠের কোনো অসুবিধা করা হবে না।
বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত নতুন খাল খননের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, নতুন খাল খননের জন্য কিস্তিতে টাকা দিতে চায় মন্ত্রণালয়। এজন্য ২০ কোটি টাকা দিতে চায়। কিন্তু জেলা প্রশাসনের সঙ্গে নীতিমালা অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের টাকা একসঙ্গে দিতে হবে। তাই খাল খননের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করতে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা ১৯৭ কোটি টাকা একসঙ্গে চেয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই একসঙ্গে টাকা পাবো। এতে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করা যাবে।
মেয়র নাছির বলেন, নগরীতে খাল খনন কাজ শুরু করার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। অনেকে কাজ শুরু করেছে। যারা কাজ শুরু করেনি, তারা শুক্রবার থেকে কাজ শুরু করবে বলে কথা দিয়েছে। কাজ কখন শুরু করছে সেটা বিষয় নয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা গেলেই হলো। প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারবে বলে মনে করছি।
দখলদারদের উচ্ছেদ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতরের সহযোগিতা নিয়ে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। ইতোমধ্যে দখলদারদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে সেই তালিকা নিয়ে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। আরএস খতিয়ান অনুযায়ী নাকি বিএস খতিয়ান ভিত্তিক হবে তা নিরসন হলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জীবন মুছা/একে/এবিএস