লোকাল বাসে রিমান্ডের আসামি : ৩ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার


প্রকাশিত: ০৫:৩৬ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ঢাকার নিম্ন আদালত থেকে রিমান্ড মঞ্জুর করা দুই আসামিকে লোকাল বাসে থানায় আনার ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানার তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহারকৃত পুলিশ সদস্যরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মশিউর রহমান, কনস্টেবল মোতালেব ও আব্দুল লতিফ।

সোমবার বিকেল নিম্ন আদালত থেকে দু’জন রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিকে মোহাম্মাদপুরগামী তরঙ্গ নামে লোকাল বাসে করে মোহম্মদপুর থানায় নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় জাগো নিউজের ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধরা পড়ে।

বিষয়টি তেজগাঁও বিভাগ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওই তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যহার করে নেয়। পাশাপাশি ঘটনার তদন্তে মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার হাফিজ আল ফারুককে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে এব্যাপারে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, মোহাম্মদপুর থানার ওই তিন পুলিশ সদস্য চুরির মামলার দুই আসামিকে আদালতের রিমান্ড মঞ্জুর শেষে থানায় আনার দায়িত্বে ছিলেন।

থানা থেকে প্রিজনভ্যানে করে নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু তারা থানাকে কোনো ধরনের তথ্য না দিয়ে অনুমতি না নিয়ে ওই দুই আসামিকে প্রথমে সিএনজিতে পরে বাসে উঠিয়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়।

পরে তাদের উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে ডেকে এব্যাপারে জিজ্ঞাবাদ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, নিজের পকেটের টাকা খরচ করে শুধুমাত্র সময় বাঁচানোর জন্য এ কাজ করেছেন তারা।

কিন্তু এতে করে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। তাই তাদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে ছিল কিনা সেজন্য মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার হাফিজ আল ফারুককে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে রিমান্ডের আসামিকে লোকাল বাসে ওঠানোর অভিযোগের সত্যতা মিললে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, জাগো নিউজের সরেজমিন তথ্য অনুযায়ী, সোমবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের সামনে যানজটে অপেক্ষমাণ একটি সিএনজি থেকে নেমে এলেন তিন পুলিশ সদস্য। একজন এএসআই ও দুই কনস্টেবল। পেছনে সাদা পোশাকের দু’জন আসামিকে হ্যান্ডকাপ লাগানো অবস্থায় তারা তরঙ্গ পরিবহনের বাসে উঠে পড়েন। এসময় ওই বাসে ১৫-২০ জন যাত্রীও বসা ছিলেন।

হাতে হ্যান্ডকাপ পড়ানো আসামিকে বাসে উঠানো দৃশ্যে যানজটে অপেক্ষমাণ বিভিন্ন বাস, রিকশা এবং পথচারীদের উৎসুক ও ভীতির চোখে তাকিয়ে দেখেন। হঠাৎ এক পথচারী চিৎকার করে বলেন, পালাও ...পালাও...।

যে ব্যক্তির সিএনজি থেকে ওই আসামি দুজনকে নামানো হয়, তিনি জাগো নিউজকে জানান, নিম্ন আদালত চত্বর থেকে মোহাম্মদপুর থানায় যাওয়ার জন্য তার সিএনজি ভাড়া করা হয়েছিল। কিন্তু পথিমধ্যে আসামিদের নামিয়ে বাসে উঠানো হয়।

এসময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তাছাড়া আসামিদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও পুলিশ সদস্যরা বাধা দেন।

পরে মোহাম্মদপুর থানার টেলিফোন নাম্বারে যোগাযোগ করে আসামি আনা-নেয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই ‍তিন পুলিশ সদস্যের নাম জানা যায়। তারা হলেন, এএসআই মশিউর রহমান, কনস্টেবল মোতালেব ও আব্দুল লতিফ।

ঘটনার পর যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য এএসআই মশিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এভাবে বাসে আসামি নিয়ে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ ও নিয়মও নেই। তবে প্রিজনভ্যানের অভাব ও রাস্তায় যানজট পরিস্থিরি কারণে দ্রুত আসামিদের থানায় নিতেই বাসে উঠতে বাধ্য হয়েছিলাম।

“আপনার রিপোর্টিংয়ের কারণে যদি আমার চাকরিতে প্রভাব পড়ে তবে অনুরোধ, দয়া করে রিপোর্ট করবেন না। এখানে আমার কোনো দোষ ছিল না। অসৎ উদ্দেশ্যও ছিল না। শুধুমাত্র দ্রুত আসামিদের থানায় আসার তাগিদেই তাদের বাসে উঠিয়েছিলাম”

পরে অপর পুলিশ সদস্য আব্দুল লতিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিয়ম আছে কি-না জানি না, তবে মফস্বলে প্রায়ই এঘটনা ঘটে।

মোহাম্মদুপর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জামাল উদ্দীন মীর জাগো নিউজকে বলেন, আসামিকে সিএনজি ভাড়া করে নিয়ে আসার কথা, বাসে নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

জেইউ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।