৩৯ দিনেও সুরাহা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সমস্যা


প্রকাশিত: ০৫:৩১ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ পেলে আমাদের দাবি দাওয়ার ন্যায্যতা নিয়ে বুঝাতে সক্ষম হব। আমরা আশা করি শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের কথা শুনলে বেতন-বৈষম্য নিরসনের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৫ মিনিটের বৈঠকে বসলেই চলমান আন্দোলনের সমাধান হয়ে যাবে। বুঝাতে পারবো যে, শিক্ষকদের দাবি ন্যায্য। শিক্ষকরা বেতন-ভাতার জন্য আন্দোলন করছেন না, তারা আন্দোলন করছেন নিজেদের সম্মান রক্ষার্থে।’

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ পেতে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে এভাবে আত্ববিশ্বাস নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা। কিন্তু সাক্ষাতের বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ৫ মিনিট নয়, গত ১৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর পঞ্জিকার হিসেবে শেষ হয়ে গেছে ৩৯টি দিন। এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতিই নেই।

প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে গত ১১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া লাগাতার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি ১৯ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় স্থগিতের ঘোষণা দেয় শিক্ষকরা। সে সময় শিক্ষক নেতার বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে, শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার সম্মানজনক সমাধান হবে। তাই আমরা (শিক্ষক) প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আমাদের চলমান কর্মবিরতির কর্মসূচি ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করছি। তবে আমরা ঘোষণা করছি আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার নয়, শুধু কয়েকদিনের জন্যে স্থগিত করছি, যেটি আন্দোলনেরই অংশ।”

শিক্ষক নেতারা আরো বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি এ সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ করবে সরকার। যদি না করা হয় তাহলে আবারো আমাদের কর্মবিরতির আন্দোলন চলবে।”

তবে বেঁধে দেয়া সময়ে সম্মানজনক সমাধন না হওয়ায় ৪ ফেব্রুয়ারি আবারো সরকারকে ২৩ ফেব্রুয়রি পর্যন্ত সময় দেন শিক্ষক নেতারা। এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের দাবিসমূহের ন্যায্যতা সম্পর্কে জানার জন্যে সচিব-কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গেও দু’দফা আলোচনা করেন তারা।
 
২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্তও কোনো ধরণের সমাধান না হওয়ায় তৃতীয় বারের মতো সরকারকে ৮ মার্চ পর্যন্ত সময় দেন তারা।নতুন এ সময়ের মধ্যে মন্ত্রীসভা কমিটির সভায় সম্মানজনক সমাধান না হলে আবারো কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।

শিক্ষক নেতারা বলেন, আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট মহলকে সময় দিয়ে যাচ্ছি একটি শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক সমাধানের প্রত্যাশায়। শিক্ষকতার মান আরো উন্নত করার জন্য আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে পদায়নের ক্ষেত্রে গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা বৃদ্ধির মতো যৌক্তিক বিষয়ও মেনে নিতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পদায়নের ক্ষেত্রে সমন্বিত ও একক নীতিমালা গ্রহণ করতেও ফেডারেশনের আপত্তি নেই।
 
এদিকে শিক্ষকদের দীর্ঘদিন ধরে চলমান আন্দোলনের কোনো ধরণের সমাধান না হওয়ায় শিক্ষকদেরকেই দায়ী করছেন সাধারণ শিক্ষকরা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন শিক্ষক নেতা বলেন, “আমরা আমাদেরকে একজন শিক্ষকের চেয়ে একজন রাজনীতিবিদ ভূমিকাই দেখতে চাই। আমরা শিক্ষকতার মহান পেশার সঙ্গে রাজনীতিকে জড়িয়ে এটাকেই ক্ষেত্র বিশেষে প্রাধান্য দিচ্ছি। যার কারণে এখন আর আমাদের কথা কেউ শুনে না।”

“এছাড়া বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষক নেতা সরকারপন্থী হওয়ায় সরকার শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া পূরণে গুরুত্ব দিচ্ছে না। মনে করছে সবাইতো আমাদের।”

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনে সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা চাই না যে, শিক্ষকরা আবারো কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হোক। আমরা চাই একটা সম্মানজনক সমাধান।”

“সম্মানজনক সমাধানের আশায় আমরা বার বার কর্মবিরতি স্থগিতের সিদ্ধান্ত বৃদ্ধি করছি। আমরা আবারো বলবো, আমরা বেতন-ভাতার জন্য আন্দোলন করছি না। আমরা আন্দোলন করছি, আমাদের মর্যাদা রক্ষার্থে। মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে কোনো আপোষ নেই।”
 
এমএইচ/আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।