মাহফুজ আনাম প্রতিহিংসার শিকার নন


প্রকাশিত: ০৬:০৬ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক সরকারের প্রতিহিংসার শিকার নন বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

তিনি আরো বলেছেন, রাজনীতিবিদদের যেমন ন্যূনতম নৈতিক মান বজায় রাখা উচিৎ, ঠিক তেমনই একজন সম্পাদকের ন্যূনতম নৈতিক মান বজায় রাখা উচিৎ। একজন রাজনীতিক যদি নৈতিকতার বিবেচনায় সমালোচিত হতে পারেন, একজন সম্পাদকও তেমন নৈতিকতার বিবেচনায় সমালোচিত হতে পারেন।

বৃহস্পতিবার তথ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এসব কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এক-এগারোর সময়কালের ঘটনার বিবরণ মাত্র। এখানে কোনো অত্যুক্তি নেই, বিষোদ্গার নেই। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা সেই সময়ে সেনাসমর্থিত সরকার কর্তৃক রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মচারী— এমনকি গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর যে নির্যাতন হয়রানি হয়েছিল, তারই পরিষ্কার চিত্রটি দেখতে পাই। এখানে কোনো হিংসা-প্রতিহিংসার বিষয় নেই।

ইনু বলেন, সংবাদপত্র বা সম্পাদক রাজনীতিকদের সমালোচনা করতে পারেন। একজন রাজনীতিকের কি একজন সম্পাদক বা সংবাদপত্রের যৌক্তিক সমালোচনা করার অধিকার নেই? রাজনীতিকেরা সমালোচনা করলে এত শোরগোল কেন? প্রধানমন্ত্রী এক-এগারো পরবর্তী সংবাদপত্র ও কয়েকজন সম্পাদক নিয়ে কথা বলেছেন, সেটা সত্য ঘটনাই বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী কি সত্য কথা বলার অধিকার রাখেন না? গণমাধ্যম রাজনৈতিকদের সমালোচনা করলে যেমন গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, তেমনি সংবাদপত্র বা সম্পাদকের সমালোচনা করলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হয় না। কিন্তু দুই পক্ষের অযৌক্তিক সমালোচনা গণতন্ত্রকে ক্ষতি করে, এতে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি উৎসাহ পায়।

তিনি বলেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর সঙ্গে সরকারের কোনো ‘বৈরিতা’ নেই।

তথ্যমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মাহফুজ আনামকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ‘শতভাগ ঠিক’।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে ‘সঠিক চিত্র আসেনি’ বলেও মন্তব্য করেন ইনু।

তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরেন না। ভিন্ন কোনো পক্ষের হয়ে একচোখা প্রতিবেদন তৈরি করছে; যা আমরা গ্রহণ করতে রাজি নই। কারণ, এই তথ্য খণ্ডিত, যেখানে সঠিক চিত্রের প্রকাশ পায়নি।

সরকার ডেইলি স্টার বা প্রথম আলোর সঙ্গে ‘বৈরি কোনো আচরণ করছে না’ দাবি করে ইনু বলেন, ওই দুটি পত্রিকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা ‘আন্তরিকভাবে নিয়মিত’ অংশ নিচ্ছেন।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু একাধিকবার দাবি করেন, গণমাধ্যমের ওপর কোনো চাপ নেই। সরকারে ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলে আপনারা সমালোচনা করতে পারেন। সরকার সমালোচনা ও পরামর্শকে সাদর আমন্ত্রণ জানায়। দেশের গণমাধ্যম এখন স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে।

গত মঙ্গলবার প্রকাশিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মানবাধিকার-বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে বিজ্ঞাপন না দিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের সতর্ক করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার বিজ্ঞাপন দেয়া বা না দেয়ার নির্দেশ দিতে পারে না। এমন কোনো নির্দেশ দেয়াও হয়নি। তবে যদি কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ কথা সরকারকে জানায় যে তাদের বিজ্ঞাপন দিতে নিষেধ করা হয়েছে তাহলে সেটা আমরা দেখবো।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, ‘এটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গোয়েন্দাদের সিদ্ধান্ত হতে পারে। এটা কোনো চাপ বলা যাবে না। অনেক মন্ত্রী ও সাংসদও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকতে পারেন না।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক মন্তব্য প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা যা ইচ্ছা বলতে পারে না। অ্যামনেস্টি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অপরাধীদের পক্ষে ওকালতি করছে।

টিআইবি প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংস্থাটি গর্হিত অন্যায় করেছে। টিআইবি সংসদ সম্পর্কে যে ন্যক্কারজনক তথ্য দিয়েছে এবং এর ভিত্তিতে সংসদীয় কমিটি সংস্থাটির নিবন্ধন বাতিলের যে প্রস্তাব করছে, সরকার তা খতিয়ে দেখছে।

অ্যামনেস্টি বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাত, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগগুলোকে বরাবরই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এসবের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে স্বাধীন গণমাধ্যমকে চাপে রেখে মত প্রকাশের সুযোগ সীমিত করার ঘটনাগুলো। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গণমাধ্যম নিয়ে মায়াকান্না করছে, এটি একচোখা সংস্থা। যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা খণ্ডিত ও বিকৃত এবং সত্যের অপলাপ।

এসএ/এনএফ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।