উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৪২ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
সেনানিবাস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী/ছবি: পিআইডি

কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস’ করায় হাওর অঞ্চলে সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এ সেনানিবাসের মাধ্যমে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে।’

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা সোয়া ১১টার দিকে সেনানিবাস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবাধ পানি প্রবাহ ও নিরাপদ মৎস্য উৎপাদনের জন্য হাওর অঞ্চলের প্রতিটি সড়ক এলিভেটেড করা হবে। আমি এরইমধ্যে জমি ভরাট না করে হাওর, বিল ও জলাভূমি এলাকার প্রতিটি রাস্তা এলিভেটেড করার নির্দেশনা দিয়েছি।’

jagonews24

তিনি বলেন, ‘হাওর এলাকার মানুষ সবসময় বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশের প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করেন। বর্ষা মৌসুমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ও মাছের চলাচল যেন বাধাগ্রস্ত না হয় এবং নৌকাসহ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেন ব্যাহত না হয়, সেজন্য সব সড়ক এলিভেটেড করা হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে এই এলাকা থেকে বারবার নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের পাশে থেকে এবং তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে তিনি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এ এলাকার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি এখানে একটি সেনানিবাস স্থাপনের ইচ্ছাপোষণ করেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা এ সেনানিবাস স্থাপন করেছি।’

আরও পড়ুন: ১৯ পদে রাষ্ট্রপতির বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্নভোজ

সরকারপ্রধান বলেন, ‘মো. আবদুল হামিদ ডেপুটি লিডার, ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার এবং সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির মতো পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি যে পদেই ছিলেন, সেখানেই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি তিনি তার টানা দ্বিতীয় মেয়াদেও সফলভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই আমরা তার নামে সেনানিবাসের নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

দেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ গঠনে রাষ্ট্রপতির বড় ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (রাষ্ট্রপতি) একজন নিবেদিতপ্রাণ এবং জনগণের সেবা করার জন্য তিনি সৎ জীবনযাপন করেন। তাই আমরা তার নামে এ সেনানিবাসের নামকরণ করতে পেরে খুবই আনন্দিত।’

jagonews24

তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং বরিশালে ৭ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করেছে। সরকার গত চার বছরে বিভিন্ন ফরমেশনের অধীনে তিনটি ব্রিগেড ও ৫৮টি ছোট-বড় ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছে। একই সময়ে অ্যাডহক হিসেবে ২৭টি ছোট-বড় ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছে। ৯টি সংস্থাকে পুনর্গঠিত করা হয়েছে। গত বছরও মাওয়া-জাজিরায় শেখ রাসেল সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বর্তমানে রাজবাড়ী ও ত্রিশালে দুটি নতুন সেনানিবাসের কাজ চলছে। সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে সরকার কঠোর পরিশ্রম করছেন।’

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ বিশ্বশান্তিতে বিশ্বাস করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে, করোনাভাইরাস মহামারি, বৈশ্বিক মন্দা এবং পরবর্তীকালে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশের অগ্রগতি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এবং পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। উন্নত দেশগুলোও এতে ভুগছে। তবে আমাদের দেশে আমরা অর্থনীতির চাকা সচল করতে পেরেছি।’

বাংলাদেশে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের নিজেদের খাদ্য উৎপাদনের জন্য সব আবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে আমরা অন্যদের সাহায্য করবো। কিন্তু নিজেদের কাজ নিজেদেরই করতে হবে।

jagonews24

‘সরকার দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, যাতে মন্দার ঢেউ দেশে আঘাত করতে না পারে। আমাদের সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে, আমাদের কঠোরতা বজায় রাখতে হবে এবং আমাদের সম্পদ সংরক্ষণ করতে হবে’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামরিক বাহিনী এ পর্যন্ত স্টেট অব দ্য আর্ট এয়ারক্রাফট, হেলিকপ্টার, টাইগার এমএলআরএস, শোরাদ মিসাইল, চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংক, এপিসি, মিসাইল ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করেছে। তাছাড়াও অত্যাধুনিক আইটি যন্ত্রপাতি এবং আধুনিক যানবাহন সংগ্রহ করা হয়েছে। সিএমএইচ আধুনিক চিকিৎসাসামগ্রী দিয়ে সাজানো হয়েছে।’

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর জনসভা কানায় কানায় পূর্ণ

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সব পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য মেস ও এসএম ব্যারাক নির্মাণের পাশাপাশি তাদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের বেতন-ভাতা ও রেশনের ব্যবস্থাসহ আমরা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে। বাঙালিদের খাদ্যাভ্যাস বিবেচনা করে রুটির বদলে আমি তাদের জন্য দুই বেলা ভাত ও মাছ-মাংসের ব্যবস্থা করেছি।’

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য এবং সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এএএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।