দুবাইয়ে আরাভের সম্পদের পাহাড়
কোনো বাংলাদেশি জড়িত কি না খতিয়ে দেখবে ডিবি
![কোনো বাংলাদেশি জড়িত কি না খতিয়ে দেখবে ডিবি](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/arv-20230316175322.jpg)
পুলিশ খুনের মামলার আসামি আরাভ খান। সংযুক্ত আরব আমিরাতে করেছেন সোনার দোকান। সেই দোকান আবার উদ্বোধন করতে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমকে দুবাই নেন আরাভ খান। দুবাই পাড়ি জমিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে আরাভ খান হয়ে ওঠেন ‘আলাদিনের চেরাগ’।
শুধু তাই নয়, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫ তলায় ফ্ল্যাট কিনেন। যার নম্বর ৬৫১০। আরও ৪-৫টি ফ্ল্যাটের মালিক আরাভ খান। পাশাপাশি রয়েছে একটি সুইমিংপুল ও বাগানসহ বড় ডুপ্লেক্স বাড়িও।
সাকিব আল হাসান ও কণ্ঠশিল্পী নোবেলের সঙ্গে আরাভ খান
দুবাইয়ে এত সব সম্পদ গড়ার পেছনে কোনো বাংলাদেশি জড়িত কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ কথা জানান।
আরও পড়ুন: প্রয়োজনে সাকিব-হিরো আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে: হারুন
আরাভ খান দুবাইতে বিশাল সম্পদ গড়েছেন। তার সম্পদ গড়ার পেছনে অনেক বাংলাদেশি জড়িত রয়েছেন। এ বিষয়টি ডিবি তদন্ত করবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, আমাদের কাছে যদি নামগুলো আসে, অবশ্যই আমরা তদন্ত করবো।
খুন হওয়া পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান
আরাভ খানের সোনার ব্যবসার সঙ্গে সাকিব আল হাসানের কোনো ব্যবসা রয়েছে কি না, জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত জানি না। তবে আমরা তথ্য নিচ্ছি। সাকিব, হিরো আলম, দিঘী, রাজসহ অনেকেই গেছেন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখবো।
পুলিশ খুনের মামলার আসামির সোনার দোকান উদ্বোধন করতে যাওয়ায় সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমকে প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানান ডিবিপ্রধান।
তিনি বলেন, আরাভ খান যে পুলিশ খুনের মামলার আসামি, এই বিষয়টি সাকিবকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি দুবাইয়ে কেন গেলেন। এটি দুঃখজনক।
ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে ইন্টারপোলের সহায়তায় রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ডিবিপ্রধান।
আরাভ খানের বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা রয়েছে জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, আসামির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১২টি ওয়ারেন্ট রয়েছে। মামলা রয়েছে, অভিযোগপত্র রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আরাভ খানই যে রবিউল ডিবি কখন নিশ্চিত হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন কোনো মামলার অভিযোগপত্র হয় তখন সব আসামিরা কে কোথায় আছেন তার খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। আরাভ খানের বিভিন্ন ছবি প্রকাশ হয় এবং সাকিব আল হাসান টেলিভিশন ও ফেসবুকে ওই সোনার দোকান উদ্বোধনের বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলেন। সবকিছু মিলেই আমরা তথ্য পাই আরাভ খানই পুলিশ খুনের মামলার আসামি সেই রবিউল ইসলাম।
আরও পড়ুন: দুবাই পালানোর আগে আরাভ খান থাকতেন কলকাতার বস্তিতে!
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, খুনের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ধারণ করেন রবিউল ইসলাম। ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে তিনি এখন দুবাইতে অবস্থান করছেন।
এর আগে দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে উদ্বোধন করা হয় আরাভ জুয়েলার্সের। কয়েক দিন আগে এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের খ্যাতিমান তারকাদের সম্ভাব্য উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন আরাভ।
সেখানে তিনি লিখেছিলেন, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫ তলায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। যার নম্বর ৬৫১০। আরও ৪-৫টি ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। পাশাপাশি রয়েছে একটি সুইমিংপুল ও বাগানসহ বড় ডুপ্লেক্স বাড়িও।
তার ওই ফেসবুক পোস্ট দেখে অনেকেই চিনে ফেলেন, তিনি বাংলাদেশে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম। ফেরারি এক আসামি দুবাইয়ে গিয়ে কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। এরপর বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, পুলিশের সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার টাকায় দুবাইয়ে সোনার ব্যবসা শুরু করেন রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান।
দুবাইয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘আলাদিনের চেরাগ’ হাতে পাওয়া একজন বাংলাদেশি। কারণ এর আগে কোনো বাংলাদেশি দুবাই গিয়ে এত বিলাসী জীবনযাপন করেছেন- এমনটি দেখেননি তারা।
যেভাবে খুন হন এসবির পুলিশ পরিদর্শক
২০১৮ সালের ৮ জুলাই বনানীর একটি বাসায় গিয়ে খুন হন পরিদর্শক মামুন ইমরান খান। পরদিন তার মরদেহ বস্তায় ভরে গাজীপুরের উলুখোলার একটি জঙ্গলে নিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
মামলার তদন্ত শেষে পরের বছরের এপ্রিলে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সেই অভিযোগপত্রে বলা হয়, রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করতো একটি চক্র। তাদের লক্ষ্য ছিল বিত্তবানদের আটকে অশালীন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে টাকা আদায় করা।
আরও পড়ুন: ফিরিয়ে আনা হবে আরাভ খানকে, কীভাবে দেশত্যাগ খতিয়ে দেখছে পুলিশ
রবিউলসহ ১০ জনকে আসামি করে ২০১৯ সালের এপ্রিলে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয় আদালতে।
মামুন হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে রবিউল ছাড়াও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়াকে (২১) আসামি করা হয়। এছাড়া নিহত মামুনের বন্ধু রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১), সারোয়ার হোসেন (২৩) ও দুই কিশোরীকে আসামি করা হয়।
মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, রবিউল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের মতিউর রহমান মোল্লা এবং লাকি বেগমের ছেলে। ওই গ্রামটি উপজেলার হিরন ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত।
আয়নাবাজির মতো অন্যকে পাঠানো হয় কারাগারে
পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর রবিউল ইসলাম নামের একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে জেলে পাঠান। প্রায় ৯ মাস কারাবাসের পর ওই তরুণ বলেন, তিনি রবিউল ইসলাম নন, তার আসল নাম আবু ইউসুফ। রবিউল ইসলামের কথামতো তার নাম-পরিচয় ব্যবহার করে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন তিনি।
ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ
এরপর আদালত বিষয়টি অনুসন্ধান করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) প্রতিবেদন দিতে বলেন।
ডিবির অনুসন্ধানে জানা যায়, খুনের মামলার আসামি রবিউলের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মতিউর রহমান। আর রবিউলের পরিবর্তে আদালতে আত্মসমর্পণকারী আবু ইউসুফের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার আইনপুর গ্রামে। তার বাবা নুরুজ্জামান, মা হালিমা বেগম।
গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমান রিপন জাগো নিউজকে বলেন, জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খানই এসবির পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যার আসামি। তার আসল নাম রবিউল ইসলাম। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতে সোপর্দ করার চেষ্টা চলছে।
টিটি/জেডএইচ/জেআইএম