কাউন্সিলকে ঘিরে ঢাকামুখী চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাকর্মীরা
বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা এখন ঢাকামুখী। আগামী ১৯ মার্চের কাউন্সিলে যোগ দিতে ঢাকার দিকে এগুচ্ছেন নেতাকর্মীরা। কাউন্সিলকে ঘিরে রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠছেন নেতারা। একই সঙ্গে নেতারা ‘উচ্ছ্বসিত’ এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্থ।
দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসায় থাকা দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, কাউন্সিলকে উপলক্ষ করে ধীরে ধীরে আবারো মাঠের রাজনীতিতে এবং সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে। তবে দলটির বেশিরভাগ নেতাকর্মী যারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ প্রত্যাশীরা আছেন দুশ্চিন্তায়।
উচ্ছ্বাস ও দুশ্চিন্তার টানাপোড়েন সত্ত্বেও দলটির চট্টগ্রামের নেতাদের প্রত্যাশা, দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন এমন নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে এবারের কাউন্সিলে। দলের বেশিরভাগ সিনিয়র নেতা কাউন্সিলকে ঘিরে গঠিত বিভিন্ন উপ-কমিটির সদস্য হিসাবে কাজ করছেন। গঠিত ১১ উপ-কমিটির মধ্যে প্রকাশনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে ব্যস্ত সময় পার করছেন দলের ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। এ ছাড়া কেউ কেউ কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে জানা গেছে। অনেকে আবার দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা আসছেন সেটা নিয়ে কৌতুহলী আলোচনায় ব্যস্ত।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, কাউন্সিলকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীরা খুব উচ্ছ্বসিত। সবার মধ্যে এখন উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে।
কাউন্সিলকে ঘিরে প্রত্যাশা কী ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন, দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদেরকেই মূল্যায়ন করা হোক। পাশাপাশি আমাদের চাওয়া চট্টগ্রাম থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণে নেতা-কর্মীকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হোক।
নগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন এমন নেতাকর্মীদের নিশ্চয়ই দল মূল্যায়ন করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের অন্তত একডজন নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে তদবির করছেন। শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে তারা কাঙ্খিত পদ পাচ্ছেন কী না সেটা নিয়ে আছেন দুশ্চিন্তায়।
তবে গত ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত মতে এবারের কাউন্সিলে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি অনুসরণ করা হবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে দলটির কোন নেতা এক সঙ্গে দুইটি সাংগঠনিক কমিটির পদে থাকতে পারবেন না।
যদিও চট্টগ্রাম মহানগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির র্শীষ পদে রয়েছেন এমন অন্তত একডজন নেতা রয়েছেন যারা বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পদও বহন করেন। এটাও দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের জন্য ভাবনার অন্যতম কারণ।
এদিকে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে, দলটির বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এবং দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে স্থায়ী কমিটিতে রাখা হবে।
এর বাইরে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও সাবেক হুইফ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম তদবির করছেন ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী তদবির করছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদের জন্য। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনরত গোলাম আকবর খোন্দকার দলটির যুগ্ম মহাসচিব পদের জন্য তদবির করছেন। একই পদের জন্য উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী তদবির করছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন তিনটি পদের যে কোন একটির জন্য কেন্দ্রের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পদগুলো হচ্ছে সাংগঠনিক সম্পাদক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক।
উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক পদে দায়িত্ব পালনরত লায়ন আসলাম চৌধুরী সাংগঠনিক সম্পাদকের জন্য তদবির করছেন। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহাজাহান জুয়েল আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে তার ঘনিষ্ঠসূত্রগুলো জানিয়েছে। এর বাইরে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম এবং ইফতেখার মহসিন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য তদবির করছেন।
জেএইচ/এমএস