২৫ হাজার টাকা জীবন বদলে দিয়েছে বাবলীর


প্রকাশিত: ১২:০৫ পিএম, ০৮ মার্চ ২০১৬

২০০৪ সালের ২৮ অক্টোবর। বাবা মোজাহার হোসেন চৌধুরী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। সংসারের হাল ধরতে হিমশিম খায় মা নার্গিস আরা চৌধুরী। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। বাকী চার বোন ও একমাত্র ভাইয়ের ভবিষ্যত গড়তে তাই পেছনে ফেরার কোন অবকাশ ছিল না রংপুরের শালবন এলাকার সফল নারী মাহফুজা চৌধুরী বাবলীর।

২০০১ সালে মেজো বোন শামীম আরা শাবানার প্রেরণায় মাত্র ২৫ হাজার টাকায় শুরু করেন উপটান ব্যবসা। পরে ব্যবসার প্রসার ঘটানোর পাশাপশি হ্যান্ডিক্রাফটের কাজে আরও মনোযোগী হয়ে উঠেন তিনি। নিজে কাজ শিখে অন্য মেয়েদের কাজ শেখাতে তাই সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেন বাড়িতেই। গত ১৫ বছরে প্রায় ৭ শতাধিক নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথ দেখিয়েছেন বাবলী। শুধু তাই নয়, আগামী মাসে আরও দু’টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তিনি।

বিয়ের পর স্বামীর চাপিয়ে দেয়া একক সিদ্ধান্তকে উপক্ষো করে এগিয়ে চলা বাবলী জাগো নিউকে জানান, ২০০১ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে জামালপুরে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে উপটান হারবাল ও হ্যান্ডিক্রাফটের কাজ শিখেন। এরপর ফিরে এসে বাড়িতেই উপটান হারবাল ও হ্যান্ডিক্রাফটের কাজ শুরু করেন।  ২৫ হাজার টাকা মূলধন দিয়ে ১৫ বছর আগে শুরু করা তার ব্যবসায় প্রতি মাসে আয় এখন প্রায় লক্ষাধিক টাকা। সংসারের হাল ধরার পাশাপাশি বাকী চার বোনকে পড়ালেখা শিখেয়েছেন। বিয়ে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠিত ঘরেই। একমাত্র ভাই মেজবাউল হোসেন চৌধুরী নাহিদ নিজ ব্যবসা দেখাশোনার পাশাপাশি তাকে সহযোগিতা করছেন।

Babli

বাবলী জানান, ২০০৮ সালে বগুড়ার গাবতলী এলাকার এক প্যারামেডিক চিকিৎসকের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ওই বছরেই মা নার্গিস আরা মারা যান। বিয়ের পর স্বামী সোহেল আরমান তার এসব ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে বাধা হয়ে দাঁড়ান। কিন্তু স্বামীর চাপিয়ে দেয়া একক সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি তিনি। নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি সমাজে অবহেলিত অন্য মেয়েদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে তাই ফিরে আসেন রংপুরে। বর্তমানে ৭০ জন নারী তার অধীনে সেলাইয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

২০১৪ সালে স্থানীয় আরসিসিআই স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাৎসরিক লিজ নিয়ে চালু করেন ক্যান্টিন। এছাড়াও মেধা আত্মকর্মী সংস্থা নামে একটি এনজিও চালু করেছেন। আগামী মাসে নগরীর দমদমা এলাকায় আরও দু’টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করার প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। যেখানে মেয়েরা বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণের কাজ শিখে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথ খুঁজে পাবেন বলে জানান বাবলী।

আত্মশক্তিতে বলীয়ান বাবলী এগিয়ে চলেছেন তার মেধা ও মনন দিয়ে। তবে আরও ভালো কিছু করতে চান তিনি। এর জন্য দরকার প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সহায়তা পেলে স্বপ্ন পূরণে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবেন বলে মনে করেন সফল এ নারী।

এসএস/এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।