অন্যরা যা স্বপ্নে দেখেন স্বপ্না সেটা বাস্তবায়ন করেন


প্রকাশিত: ০১:২৯ পিএম, ০৮ মার্চ ২০১৬

নানা প্রতিকূলতা আর বাধা বিপত্তি ডিঙিয়ে পরিবারের সচ্ছলতা আনতে পুরুষ শাসিত সমাজে ব্যবসায়ে সফলতা অর্জন করেছেন স্বপ্না ঘোষ। এখন তিনি পরিবার আর আশপাশের এলাকার লোকজনের কাছে নারী উন্নয়নের এক দৃষ্টান্ত।

২০০৫ সালে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সদর ইউনিয়নের আমতলা গ্রামের স্বপন ঘোষের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন স্বপ্না ঘোষ। বিয়ের পর থেকেই সংসারে অভাব অনটন যেন পিছু ছাড়ছিল না তার। স্বামী স্বপন স্থানীয় একটি বাজারের ফটোগ্রাফারের কাজ করেন। তার স্বল্প আয়ে সংসার চালানো যেন দায়। সংসারের অভাব অনুভব করে বিয়ের ১০ বছর পর আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য তিনি বেছে নেন ব্যবসা। তিনি ঠিক করেন, পরিবারের সদস্যদের মুখে হাঁসি ফোটানোর জন্য ব্যবসাই হবে তার উপার্জনের মাধ্যম।

বর্তমানে এই দম্পতির ঘরে সম্প্রীতি সন্ধি ঘোষ নামের ৯ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সন্ধি মনি মুকুর কিন্ডার গার্টেনের ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার রাজবাড়ী জেলা থেকে নৃত্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। তাছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করবে বলে জানান তার মা স্বপ্না ঘোষ।

২০১৫ সালের শুরুতে তিনি মাত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়ে `সন্ধি কালেকশন` নামে শাড়ি, থ্রি পিচ, কসমেটিক্সসহ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার বিভিন্ন উপকরণের সমন্বয়ে বালিয়াকান্দি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সড়কে একটি দোকান বরাদ্দ নেন। তারপর থেকেই তারপথ চলা শুরু। মাত্র ১০ মাসেই তিনি ব্যবসায় সফলতার মুখ দেখতে থাকেন।

প্রতি মাসে খরচ বাদে দোকান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে তাদের সংসার ভালোই চলছে। তাছাড়া দোকানের পুঁজিও এখন অনেক টাকায় দাঁড়িয়েছে। তার দোকানে মেয়ে ও নারী ক্রেতারাই বেশি বলে জানান স্বপ্না ঘোষ।

স্বপ্না ঘোষের দোকানে কথা হয় কয়েকজন নারী ক্রেতার সঙ্গে। তারা বলেন, পরিবারের সদস্যদের কেনাকাটার জন্য তারা এই দোকানে আসেন। কেনাকাটার জন্য এই দোকানটাকে তারা নিরাপদ মনে করেন। এখানে অনেক ধরনের জিনিস পাওয়া যায় এজন্য তাদের অন্য দোকানে না গেলেও চলে।

স্বপ্না ঘোষ বলেন, পুরুষ শাসিত এই সমাজে নারীদের ব্যবসা করাটা খুবই কষ্টের। নানা ঘাত-প্রতিঘাত এবং সমাজের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যকে উপেক্ষা করে তিনি আজ সফল।

তিনি নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নারীদের ঘরে বসে থাকলে চলবে না। নারীদের এগিয়ে যেতে হবে নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে। সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, নারীদের জনশক্তিতে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী করে তুলতে হবে। দিতে হবে নানা সুযোগ সুবিধা। কিভাবে নারীদের ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত করা যায় সে কৌশলও বের করতে হবে। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা তহমিনা খানম বলেন, বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়নে বিগত ৬ বছরে যে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন হয়েছে বালিয়াকান্দির স্বপ্নাই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জীবন ও ব্যবসা যুদ্ধে তিনি সফল।

এসএস/ এমএএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।