নির্ঘুম ওয়াকিং স্ট্রিট, নির্ঘুম পাতায়া
ঢাকা থেকে ৩ ঘণ্টার বিমান, ব্যাংকক থেকে ২ ঘণ্টার বাস জার্নির পর তিন ঘণ্টা ঘুম। ঘুম থেকে উঠেই হোটেলের রিসিপসনিস্টকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘রাতে যাওয়ার মতো কোন জায়গা আছে কি না?’ রিসিপসনিস্ট এক বাক্যে বললেন, ‘ওয়াকিং স্ট্রিট’।
হোটেলটা ছিল পাতায়া সেন্ট্রালের চুনবুড়ি এলাকায় বিচের পাশেই। সেখান থেকে কীভাবে যাবো জানতে চাইলে রিসিপশনিস্ট বললেন, ‘ইন্ড অব দিস রোড। ১০ বাথ বাই টুকটুক অর ১৫ মিনিট বাই ওয়াক। ’
হোটেল থেকে বের হতেই টুকটুকে চড়ে ৫ মিনিটে পৌঁছে গেলাম ওয়াকিং স্ট্রিট। রাত তখন আড়াইটা। চুনবুড়ি সড়কের শেষ মাথায় নিয়ন লাইটে লেখা দেখলাম ‘ওয়াকিং স্ট্রিট। ওয়েলকাম টু সাউথ পাতায়া।
স্ট্রিটে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে গানের শব্দে কান ফাটার অবস্থা। কোথাও ইংলিশ, কোথাও থাই আবার কোথাও হিন্দি-আরবি গান চলছে। বারগুলোতে চলছে লাইভশো। সড়কের দুপাশে মেয়েরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে চলছে নানা দেশি মেয়েদের গো গো শো।
বারগুলোতে খুব অল্প দামে বিয়ার-মদ বা সফট ড্রিংক্স কিনলেই ফ্রিতে দেখা যায় এই ‘গো গো শো।’ প্রতিটি শো’তে ৮-১০ জন মেয়ে ন্যূনতম কাপড়ে বারে আসা কাস্টমারদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে ‘টিপস’ বা বকসিস নেয়।
পুরো ওয়াকিং স্ট্রিটটিতেই রয়েছে ডিসকো। ২০ বছরের অধিক পর্যটকদের জন্য রয়েছে আ-গো-গো শো। প্রাপ্তবয়স্কদের শো চলে রাতভর। ওয়াকিং স্ট্রিটের মধ্যেই রয়েছে ম্যাকডোনাল্ডস- বার্গার কিংয়ের মতো নামীদামী রেস্টুরেন্ট। চারিদিকে গানবাজনা আর সোরগোল।
সারাদিন গাড়ি চললেও রাত ১০টা থেকে পরবর্তী দিন সকাল ৫টা পর্যন্ত এই রাস্তায় যানবাহন চলতে পারে না। এটি ব্যবহার হয় শুধু মাত্র হাঁটার জন্য।
ওয়াকিং স্ট্রিটে ভারতীয়দের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। এশিয়ার বৃহত্তম এই দেশটি থেকে থাইল্যান্ডে অন-এরাইভাল ভিসা নিয়ে আসা যায় বলে অনেকেই নিজেদের ছুটির সময়টুকু থাইল্যান্ডে কাটান।
পাতায়ার ওয়াকিং স্ট্রিট চলে সকাল ৫টা পর্যন্ত। সারাদিন ঘুমানোর পর রাতে আবার জেগে উঠে পাতায়া। ওয়াকিং স্ট্রিটকেই পশ্চিমাদের বিনোদনের মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে পাতায়া।
আজহার আলী নামের এক ভারতীয় ট্যুর ব্যবসায়ী বলেন, পাতায়াতে দিনের বেলায় দেখার মতো তেমন কিছুই নেই। তবে পশ্চিমা দেশ থেকে আসা পর্যটকেরা দিনের বেলায় বিচের পাড়ে সান বাথ করে। পাতায়ার প্রধান আকর্ষণ রাত। প্রতি রাতে যেন ময়ূরের মতো পেখম মেলে পাতায়া।
রাতে ওয়াকিং স্ট্রিট ছাড়াও পাতায়াতে দেখার মতো রয়েছে বিচ। বিচের পাড়ে বড় বড় এলইডি লাইট। শুয়ে থাকার জন্য রয়েছে পাটি। বিচের পাশে ‘পাতায়া সিটি’ নামে নিয়ন আলোর লেখাটি নজর কাড়ে সবার। এর সামনে একবার হলেও ছবি তুলতে ভুল করেন না পর্যটকরা।
বিচের পার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়বে বিচ্ছিন্নভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যৌনকর্মীদের দিকে। ফেস পাউডার লাগাতে লাগাতে সড়কেই রাত কাটায় তারা।
ব্যাংককের সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট থেকে পাতায়ার দূরত্ব ১২৩ কিলোমিটার। এয়ারপোর্ট থেকে বাসে পাতায়া যেতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। বিমানবন্দরের লেভেল ১ এর ৮ নম্বর গেটেই একমাত্র পাতায়া যাওয়ার বাসের টিকেট পাওয়া যায়। ভাড়া ১২০ বাথ (বাংলাদেশের ৩০০ টাকা)। ভোর ৪ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় বাস ছাড়ে। টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে প্রতিটি বাসে।
বাসে দেড় ঘণ্টা পরই আসবে পাতায়ার নর্থ বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে ট্যাক্সিতে করে যেতে হবে নিজ নিজ হোটেলে।
পাতায়া থাইল্যান্ডের অন্যতম পর্যটন নগরী যেখানে বছরে ৪০ বিলিয়ন পর্যটকের সমাগম ঘটে। বিচ, ওয়াকিং স্ট্রিট ছাড়াও পাতায়ার থেকে খুব সহজেই যাওয়া যায় থাইল্যান্ডের অন্যতম দর্শনীয় স্থান কোরাল আইল্যান্ড।
এআর/এসকেডি/এসএইচএস/পিআর