মোবাইল না দেওয়ায় আইডিয়াল কলেজের ছাত্রকে হত্যা করেন তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫৩ পিএম, ১৮ জুলাই ২০২৩

রাজধানীর আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী আদনান সাঈদ রাকিবকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইল দিতে অস্বীকার করায় রাকিবকে সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে আঘাত করেন তারা। পরে রাকিবের মৃত্যু হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. ইকবাল (১৬), মো. সুমন ভুইয়া ওরফে বড় সুমন (২৫) ও মো. সুমন ওরফে কালু সুমন ওরফে ছোট সুমন (১৪)।

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা ও একটি সুইচ গিয়ার চাকু জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আদনান সাঈদ রাকিব (১৭) হত্যাকাণ্ডের ১২ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন, মূল আসামিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছি আমরা। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকুও জব্দ করা হয়। সেই সঙ্গে লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করেছি।

তিনি বলেন, নিহত আদনান সাঈদ রাকিব কলাবাগানের গ্রিনরোড স্টাফ কোয়ার্টারের ৪/বি/২ বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতো। রোববার (১৬ জুলাই) রাত ৯টার দিকে ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে বন্ধু রাইয়ানের সঙ্গে চা পানের কথা বলে বাসা থেকে বের হয়।

রাকিব ও রাইয়ান রবীন্দ্র সরোবরে চা পান শেষ করে বাসায় ফেরার পথে মিরপুর রোড সংলগ্ন শেখ জামাল মাঠের পূর্বপাশে নার্সারির সামনের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে চার ছিনতাইকারী তাদের গতিরোধ করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল ও মানিব্যাগ দিতে বলে। এসময় রাইয়ান কালো রঙের বাটন সিমফোনি মোবাইল দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু রাকিব মোবাইল দিতে অনীহা প্রকাশ করায় ছিনতাইকারীরা ধারালো চাকু দিয়ে তার ডান কাঁধের নিচে ও বাম উরুতে আঘাত করে। এসময় তারা রাকিবের কাছে থাকা দুটি মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেন।

আরও পড়ুন>> চালককে ছুরিকাঘাত করে ব্যাটারিচালিত ভ্যান ছিনতাই

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, এসময় রাকিব চিৎকার করলেও আশপাশ থেকে কেউ না আসায় সে রাস্তা পার হয়। রাস্তার পূর্বপাশে গ্রিন রোড স্টাফ কোয়ার্টারের ১ নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকে। সেখানে একটি বাসার সামনে রাস্তার ওপর উপুড় হয়ে পড়ে যায়। এরপর রাকিব যে কোয়ার্টারে থাকতো সেখানকার বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিক রাকিবের বাবাকে মোবাইলে বিষয়টি জানান এবং বড় ভাই আরমান সজিব হৃদয়কে ডাকেন।

খবর পেয়ে রাকিবের বড় ভাই দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তাকে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মর্গে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় সোমবার (১৭ জুলাই) রাতে নিহত রাকিবের পরিবার বাদী হয়ে ধানমন্ডি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাতেই অভিযান চালিয়ে মূল হত্যাকারীসহ তিন ছিনতাইকারীকে রায়েরবাগ বস্তি এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাব ডিবিপ্রধান বলেন, ঈদের পরপর ছিনতাইয়ের ঘটনা কিছুটা বেড়েছিল। এরপর ডিবি ও থানা পুলিশ ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। আমরাই (ডিবি) অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০০ জনের মতো ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছি।

আরও পড়ুন>> ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি

তিনি বলেন, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও রমনা এলাকার সব থেকে বড় যে ছিনতাইকারী সরদার কামরুলসহ অনেককে আমরা গ্রেফতার করেছি। মাঝে মধ্যে বিচ্ছিন্ন যে দু/একটি ঘটনা ঘটে। আমরা যদি সেগুলোর খবর পাই, তাহলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে যেন থানায় জিডি বা অন্য কোনোভাবে পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ যদি রেসপন্স না করে তাহলে ডিবিকে জানালে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ছিনতাইকারীদের হামলায় পুলিশ সদস্য নিহত ও একজন সাংবাদিক আহত হওয়ার পর ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে ছিনতাকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ধানমন্ডির ঘটনায় অভিযুক্তরা এর আগে গ্রেফতার হয়েছিল কি না বা তারা জামিনে বের হওয়া ছিনতাইকারী কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, ঘটনা ঘটার ১২ ঘণ্টার মধ্যে আমরা অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছি। এ বিষয়ে আমাদের থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের গতিবিধি ছিল। অভিযুক্তরা রায়ের বাজার বস্তি এলাকায় থাকতেন। সেখানে আমাদের নজরদারি ছিল। অভিযুক্তরা এর আগে গ্রেফতার হয়েছিল কি না বা তারা জামিনে বের হওয়া কি না সে বিষয়ে তদন্ত করছি।

তিনি আরও বলেন, যেসব এলাকায় স্ট্রিট লাইট (সড়কবাতি) কম থাকে সেসব এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। যেহেতু স্ট্রিট লাইট লাগানোর কাজ সিটি করপোরেশনের, সেক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ডিবির কোনো কথা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় এ প্রশ্নটি আপনারা (সাংবাদিক) মেয়রকে করলে ভালো হয়। তবে অন্ধকার জায়গাগুলোতে আলোর ব্যবস্থা থাকলে এ ধরনের ঘটনা কমতে পারে।

টিটি/ইএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।